‘সংক্ষুব্ধ আদিবাসী ছাত্র–জনতার’ ওপর হামলার প্রতিবাদে ২৭ নাগরিকের বিবৃতি

‘সংক্ষুব্ধ আদিবাসী ছাত্র-জনতা’র ওপর গতকাল হামলা হয়। ছবি: সংগৃহীত

পাঠ্যবইয়ে 'আদিবাসী' শব্দসংবলিত গ্রাফিতি বাদ দেওয়ার প্রতিবাদে 'সংক্ষুব্ধ আদিবাসী ছাত্র-জনতা'র কর্মসূচিতে হামলার প্রতিবাদ জানিয়েছে দেশের ২৭ নাগরিক।

আজ বৃহস্পতিবার সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক সালেহ আহমেদের পাঠানো এক বিবৃতিতে একথা বলা হয়।

বিবৃতিতে বলা হয়, আদিবাসী ছাত্র-জনতার কর্মসূচিতে স্টুডেন্টস ফর সভরেন্টি পরিকল্পিতভাবে হামলা চালিয়েছে।

এতে আরও বলা হয় দুই দফা আক্রমণে আদিবাসী ছাত্র-জনতার কমপক্ষে ১১ জন আহতের ঘটনা জানা গেছে। প্রথম দফা আক্রমণের সময় পুলিশের নিস্ক্রিয়তা এবং দ্বিতীয় দফা আক্রমণের সময় পুলিশ হামলাকারীদের সরিয়ে নিলেও এ ঘটনায় উল্লেখযোগ্য কোনো আইনি পদক্ষেপ দেখা যায়নি।

বিবৃতিতে বলা হয়, 'রাজধানীর মতিঝিল এলাকায় জাতীয় পাঠ্যক্রম ও টেক্সট বুক ভবনের সামনে সংগঠিত আদিবাসী ছাত্র-জনতার ওপর সংঘটিত পরিকল্পিত হামলার ঘটনায় আমরা সংক্ষুব্ধ। একইসাথে এ ধরনের ঘটনা অন্তর্ভুক্তিমূলক রাষ্ট্র বিনির্মাণের বিপরীতে আদিবাসী জনগোষ্ঠীর সমাবেশের ওপর হামলা রাষ্ট্র  ও সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করবে বলে আমরা মনে করি।'

বিবৃতিদাতারা বলেন, 'জানা গেছে এই হামলায় আদিবাসী জনগোষ্ঠীর অধিকার প্রতিষ্ঠায় সোচ্চার আন্দোলনের কর্মীদের উপর বেছে বেছে হামলা করা হয়েছে। এমনকি এই হামলাকারীদের অপরাধ আড়াল করতে আক্রমণের আলামত মুছে ফেলতে পুলিশকে রাস্তায় লেগে থাকা রক্ত পরিস্কার করতেও দেখা গেছে। এ ধরনের ঘটনা পাহাড় ও সমতলে আদিবাসী জনগোষ্ঠীর উপর নিপীড়নের ধারাবাহিকতার প্রমাণ সামনে চলে আসে। এ ঘটনায় আমরা তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি।

বিবৃতিতে বলা হয়, আমরা মনে করি, এ ধরনের অপরাধের ঘটনায় পুলিশি নিস্ক্রিয়তা রাষ্ট্রীয় অসংবেদনশীলতা তথা আদিবাসী জনগোষ্ঠীর  ওপর নিপীড়নের ধারাবাহিকতার চিত্র স্পষ্ট হয়ে ওঠে। একইভাবে পাঠ্যপুস্তক থেকে আদিবাসী শব্দ সংবলিত গ্রাফিতি বাতিলের দাবি মেনে নেওয়া এবং এর প্রতিবাদ কর্মসূচিতে হামলা করে আদিবাসী ছাত্র-জনতাকে রক্তাক্ত জখম করার ঘটনা বৈচিত্র্যময় জাতিগোষ্ঠীর বাংলাদেশের বিপরীতে একটি সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র কায়েমের প্রচেষ্টা ছাড়া আর কিছুই নয়।

বিবৃতিদাতারা বলেন, ভিন্ন মত ও পথ এবং সাংস্কৃতিক চর্চার বিপরীতে উত্থিত ধর্মান্ধ উগ্রবাদি  মনস্তত্ব গঠনের প্রবণতাকে রুখে দিয়ে দেশের সব মত ও পথ, ধর্ম ও সংস্কৃতি চর্চার উপযোগী রাষ্ট্র বিনির্মাণে সংবেদশীল রাষ্ট্রকাঠামো গড়ে তুলতে মনোনিবেশ করা জরুরি।

বিবৃতিতে বলা হয়, বৈষম্যহীন রাষ্ট্র বিনির্মাণে বিভিন্ন সময়ের রক্তাক্ত ইতিহাসের ধারায় আজকে রাষ্ট্রের সর্বক্ষেত্রে বৈষম্য মুক্ত বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার যে অঙ্গীকারবদ্ধ কর্মকাণ্ড বিদ্যমান রয়েছে তার বিপরীতে সংক্ষুব্ধ আদিবাসী ছাত্র জনতার সমাবেশে হামলার ঘটনা আমাদের বিবেচনায় বৈপরীত্যের বহি:প্রকাশ ঘটেছে।

বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেছেন—তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল, রাশেদা কে চৌধুরী, সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলনের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য রামেন্দু মজুমদার, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি ডা. সারওয়ার আলী, , সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলনের সভাপতি অধ্যাপক সৈয়দ আনোয়ার হোসেন, বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট রানা দাশ গুপ্ত,

বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেম, সাম্প্রদায়িকতা ও জঙ্গিবাদ বিরোধী মঞ্চের সদস্য সচিব ড. নুর মোহাম্মদ তালুকদার, বাংলাদেশ কৃষক সমিতির সভাপতি এস এম এ সবুর, মানবাধিকার কর্মী খুশী কবির, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক এম এম আকাশ, রোবায়েত ফেরদৌস, ড. জোবায়দা নাসরিন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক ড. সৈয়দ আবদুল্লাহ আল মামুন চৌধুরী, সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক সালেহ আহমেদ, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী পারভেজ হাসেম, সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলনের প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজল দেবনাথ, জাতীয় শ্রমিক জোটের কার্যকরী সভাপতি আবদুল ওয়াহেদ, ইমারত নির্মাণ শ্রমিক ইউনিয়ন বাংলাদেশের (ইনসাব) সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রাজ্জাক, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী জীবনানন্দ জয়ন্ত, সংস্কৃতি কর্মী এ কে আজাদ, সমাজকর্মী জাহাঙ্গীর আলম সবুজ, সংস্কৃতিকর্মী অলক দাস গুপ্ত, খেলাঘরের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জহিরুল ইসলাম জহির, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য দীপায়ন খীসা, খেলাঘরের সাধারণ সম্পাদক রেজাউল কবির, বাংলাদেশ ছাত্রলীগের (বিসিএল) সাধারণ সম্পাদক ও সভাপতি গৌতম শীল।

Comments

The Daily Star  | English

US retailers lean on suppliers to absorb tariffs

Rather than absorbing the cost or immediately passing it on to consumers, many US apparel retailers and brands have turned to their suppliers in Bangladesh, demanding they share the pain

1h ago