লস অ্যাঞ্জেলেসের দাবানল

মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৭, ক্ষতিগ্রস্ত-ধ্বংস হয়েছে ৯ হাজারের বেশি স্থাপনা

লস অ্যাঞ্জেলেসে দাবানল নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করছেন এক দমকলকর্মী। ছবি: রয়টার্স
লস অ্যাঞ্জেলেসে দাবানল নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করছেন এক দমকলকর্মী। ছবি: রয়টার্স

যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যের শহর লস অ্যাঞ্জেলেসে ভয়াবহ দাবানলে মৃতের সংখ্যা বেড়ে সাত হয়েছে। দাবানল হলিউড হিলসসহ একাধিক এলাকায় ছড়িয়ে পড়েছে। এদিকে দাবানলের গতি ও ভয়াবহতায় দমকল কর্মীরা বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছেন।

আজ শুক্রবার এই তথ্য জানিয়েছে মার্কিন গণমাধ্যম সিএনএন।

বৃহস্পতিবার প্যালিসেড এলাকার দাবানলে নতুন দুই ব্যক্তি মারা যাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত হয়েছে।

এর আগে ইটন এলাকায় আগুনে পুড়ে আরও পাঁচজন মারা গেছেন। কর্মকর্তারা হুশিয়ারি দিয়েছেন, মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।

প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন গতকাল জানান, কেন্দ্রীয় সরকার এই দুর্যোগ মোকাবিলায় অর্থায়ন বাড়িয়েছে।

টানা তৃতীয় দিনের অগ্নি নির্বাপনী অভিযানে হেলিকপ্টারে করে পানি ছিটিয়েছেন দমকল কর্মীরা।

ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি

লস অ্যাঞ্জেলেসে আগুনে পুড়ে যাওয়া গাড়ি। ছবি: রয়টার্স
লস অ্যাঞ্জেলেসে আগুনে পুড়ে যাওয়া গাড়ি। ছবি: রয়টার্স

ঘণ্টায় ১৬০ কিলোমিটার গতিবেগের বাতাসে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে দাবানল।

মঙ্গলবার থেকে শুরু করে গতকাল পর্যন্ত পুরো শহরজুড়ে নয় হাজারেরও বেশি স্থাপনা ধ্বংস বা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে লাখো ডলার দামের বিলাসবহুল বাড়িও রয়েছে।

প্যারিস হিলটন, অ্যান্থনি হপকিনস ও বিলি ক্রিস্টালের মতো হলিউডের অনেক তারকা তাদের বাড়ি হারিয়েছেন এই দাবানলের কাছে।

নতুন করে আগুনের সূত্রপাত

লস অ্যাঞ্জেলেসের ওয়েস্ট হিলস নামের এলাকায় নতুন করে দাবানল দেখা দিয়েছে। এর নাম দেওয়া হয়েছে 'কেনেথ ফায়ার'। লস অ্যাঞ্জেলেস ও ভেনচুরা কাউন্টির সীমান্তে ৭৯০ একর জায়গাজুড়ে দাবানল ছড়িয়ে পড়েছে।

খুব দ্রুতগতিতে ছড়ালেও এ মুহূর্তে এই দাবানলের বেগ স্তিমিত হয়ে পড়েছে বলে জানা গেছে।

ইটন ফায়ার নাম দেওয়া দাবানল ১৩ হাজার ৬৯০ একর জায়গাজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে এবং এটি এখনো নিয়ন্ত্রণের বাইরে। লস অ্যাঞ্জেলেস কাউন্টির দমকল বাহিনীর প্রধান অ্যান্থনি ম্যারন সংবাদ সম্মেলনে জানান, আনুমানিক চার থেকে পাঁচ হাজার স্থাপনা ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়েছে।

মৃতের সঠিক সংখ্যা জানা যাচ্ছে না

জ্বলছে আগুন, পুড়ছে আমেরিকা। ছবি: রয়টার্স
জ্বলছে আগুন, পুড়ছে আমেরিকা। ছবি: রয়টার্স

লস অ্যাঞ্জেলেসের বিভিন্ন অংশে দাবানলের কারণে 'বেশ কয়েকজন' মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। লস অ্যাঞ্জেলেসের শেরিফের কার্যালয় থেকে প্রাথমিকভাবে এই তথ্য জানানো হয়েছে। শেরিফ রবার্ট লুনা বলে, 'সত্য বলতে, আমরা এখনো জানি না কতজন মারা গেছেন।'

গোয়েন্দা কর্মকর্তারা এখনো ঘটনাস্থলে যেয়ে তদন্ত করার সুযোগ পাচ্ছে না। আগুন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে না আসা পর্যন্ত নিরাপত্তাজনিত কারণে তারা তদন্ত করতে পারছে না। অনেক জায়গায় আকস্মিক আগুন, আংশিক বা পুরোপুরি পুড়ে যাওয়া বৈদ্যুতিক লাইন ও গ্যাস লিকেজের কারণে বিপজ্জনক পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।

দমকলকর্মীদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ

লস অ্যাঞ্জেলেসে আগুনে পুড়ে যাওয়া বাড়ি। ছবি: রয়টার্স
লস অ্যাঞ্জেলেসে আগুনে পুড়ে যাওয়া বাড়ি। ছবি: রয়টার্স

অনেক দমকলকর্মী টানা কাজ করে যাচ্ছেন। তাদেরকে কমপক্ষে ১০০ পাউন্ড ওজনের সরঞ্জাম বহন করতে হচ্ছে। বিশেষত, প্যাসিফিক প্যালিসেডের আগুন নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে।

ক্যালিফোর্নিয়ার পেশাদারী দমকলকর্মীদের ইউনিয়নের মুখপাত্র সিএনএনকে জানান, অনেক কর্মী টানা ৪০ থেকে ৪৮ ঘণ্টা কাজ করার পরও তাদেরকে দাবানল নিয়ন্ত্রণের কাজে পাঠানো হয়েছিল। তারা আরও ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টা ডিউটিতে থাকবেন। দেশের অন্যান্য অংশ থেকে বাড়তি কর্মী না আসা পর্যন্ত তাদেরকে বিশ্রাম দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।

ইউনিয়ন প্রতিনিধি জানান, 'বিভিন্ন ভবন ও গাড়িতে থাকা রাসায়নিক উপকরণ পুড়ে গিয়ে অত্যন্ত বিষাক্ত ধোঁয়া সৃষ্টি হয়েছে। এই বৈরি পরিবেশেই কর্মীরা কাজ করে যাচ্ছেন।'

ন্যাশনাল গার্ড মোতায়েন

দমকলকর্মীদের আশঙ্কা, আগামী সপ্তাহে আরও প্রবল বাতাস ও শুষ্ক আবহাওয়ার কারণে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা ঝামেলাপূর্ণ হয়ে পড়তে পারে।

শেরিফ রবার্ট লুনা জানান, আনুষ্ঠানিকভাবে সেনাবাহিনীর (ন্যাশনাল গার্ড) সহায়তা চাওয়া হয়েছে।

ইটন ও প্যালিসেড দাবানল নিয়ন্ত্রণে ইতোমধ্যে সাতটি হেলিকপ্টার বোঝাই সেনা এসে দাবানল নিয়ন্ত্রণের কাজ শুরু করেছেন।

দাবানল-কবলিত এলাকায় লুটপাটের ঘটনা বাড়ছে। লস অ্যাঞ্জেলেসের বিভিন্ন অংশে সেনা সদস্যরা আইন শৃঙ্খলা বজায় রাখার কাজেও সহায়তা করছেন। শেরিফ জানান, কিছু জায়গায় কারফিউ জারির চিন্তা চলছে। 

Comments

The Daily Star  | English
International Crimes Tribunal 2 formed

Govt issues gazette notification allowing ICT to try political parties

The new provisions, published in the Bangladesh Gazette, introduce key definitions and enforcement measures that could reshape judicial proceedings under the tribunals

5h ago