ঢাকায় প্রকৃতির ছোঁয়া দেবে যে ৫ গন্তব্য

ঢাকায় প্রকৃতি
ছবি: স্টার

ব্যস্ত এই শহুরে জীবন থেকে কিছুটা সময় বের করে প্রকৃতির মাঝে হারিয়ে যাওয়ার সুযোগ খুব কমই মেলে। সেক্ষেত্রে খুব দূরে যাওয়ার প্রয়োজন নেই। এই কোলাহলের ভেতরেই রয়েছে নির্মল প্রকৃতি, যা প্রতিদিনের কর্মব্যস্ত জীবন থেকে কিছু সময়ের জন্য ছুটির ব্যবস্থা করে দিতে পারে।

সকালে হাঁটার জন্য, শান্ত কোনো জলাধারের পাড়ে বসে থাকার জন্য কিংবা বন্ধুদের সঙ্গে প্রাণবন্ত আড্ডার জন্য এই কংক্রিটের জঙ্গলের ফাঁকেই লুকিয়ে রয়েছে কিছু স্থান। যেগুলো আপনার মনে এনে দিতে পারে শান্তির পরশ।

বলধা গার্ডেন: ঐতিহাসিক সবুজ বাগান

পুরান ঢাকার প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত বলধা গার্ডেন হলো প্রাকৃতির সৌন্দর্যের এক অভয়ারণ্য। আপনি যখন শতাব্দী প্রাচীন বাগানটিতে পা রাখবেন বিরল প্রজাতির অসংখ্য গাছপালা আপনাকে স্বাগত জানাবে। নানা প্রজাতির অর্কিড, ক্যাকটাস, কনজারভেটরি এবং লতানো গাছ দেখে প্রাণ জুড়িয়ে যাবে।

বাগানের ভেতরের ঐতিহাসিক জয় হাউজটির পরিবেশ ভীষণ শান্ত। এখানে বসেই রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তার ক্যামেলিয়া কবিতা লেখার অনুপ্রেরণা পেয়েছিলেন। কাছেই শঙ্খনন্দ পুকুরে দেখা মিলবে নানা ধরনের জলজ উদ্ভিদের।

এ ছাড়া সেখানে একটি সূর্যঘড়ি রয়েছে, যেটি আপনার অবশ্যই দেখা উচিত। সব মিলিয়ে, প্রাতঃভ্রমণ বা ধীরলয়ে প্রিয় কারো সঙ্গে হেঁটে বেড়ানোর জন্য বলধা গার্ডেন একেবারে আদর্শ জায়গা।

ঢাকা

রমনা পার্ক: শহরের প্রাণকেন্দ্রে শান্ত প্রকৃতি

আপনি যদি পরিবারের সদস্য বা বন্ধুদের সঙ্গে ভালো সময় কাটাতে চান কিংবা দুপুরের নরম রোদে কিছুক্ষণ প্রকৃতির কোলে বসে সূর্যস্নান করতে চান, তাহলে ঢাকার প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত রমনা পার্ক আপনাকে সেই সুযোগ করে দেবে।

সবুজে ছাওয়া পার্কটি বিভিন্ন ধরনের গাছের আবাসস্থল। যার মধ্যে রয়েছে ফলদ বৃক্ষ, আছে রঙ-বেরঙের ফুল গাছ এবং ঔষধি ও বনজ উদ্ভিদও। গাছের ছায়ার ভেতর দিয়ে এঁকেবেঁকে গেছে পায়ের চলার পথ, স্বচ্ছ পানির লেকের ওপর লম্বা কাঠের ডেকটিতে দাঁড়িয়ে উপভোগ করা যায় নির্জন জল আর প্রকৃতিকে।

শান্ত সবুজ রমনা প্রাতঃভ্রমণ, দৌঁড় কিংবা যোগব্যায়ামের বিভিন্ন সেশনের জন্য বিখ্যাত। আবার ভ্রমণ শেষে ফটকের বাইরে দাঁড়ানো নানা ধরনের ফুডকার্ট থেকে বেছে নিতে পারেন পছন্দের খাবারটিও।

মিরপুর বেড়িবাঁধ: যেখানে নদী এসে শহরে মিলেছে

তুরাগের তীরঘেঁষে তৈরি মিরপুর বেড়িবাঁধ, এর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য নগরবাসীকে দেয় ক্ষণিকের অবকাশ কাটাবার সুযোগ। বিস্তীর্ণ মহাসড়কের কোল ঘেঁষে গাছগাছালি আর দূরের গ্রামের দৃশ্য যেন চোখের সামনে অন্য জগতের দরজা খুলে দেয়। শান্ত নদীর বুকে ভেসে চলে ছোট-বড় নানা আকারের নৌযান শহরের মধ্যেই যেন নদীমাতৃক বাংলাদেশের ছবি এঁকে যায়। নদীর ধারে বসে গরম চায়ে চুমুক দেওয়ার পাশাপাশি নৌকা ভ্রমণও করে আসতে পারেন ভ্রমণপিপাসু মানুষ। নদীর তাজা হাওয়ার মধ্যে ঘুরে বেড়ানোর কোনো তুল না হয়না।

বেড়িবাঁধ ঘিরে আছে বেশ কয়েকটি বিনোদন কেন্দ্র, ভাসমান রেস্তোরাঁ আর একটি পায়ে চলার ব্রিজ। এগুলো দর্শনার্থীদের জন্য স্থানটিকে করেছে আরও আকর্ষণীয়। সূর্য ডোবার আগে গোটা এলাকাটি দারুণ মোহনীয় রূপ নেয়, কমলা আর সোনালী আলো নদীর পানিতে প্রতিফলিত হয়ে সৃষ্টি করে এক স্বর্গীয় মুহূর্ত।

শাপলা

মিরপুর বোটানিক্যাল গার্ডেন: উদ্ভিদপ্রেমীদের স্বর্গরাজ্য

কোলাহলে ভরপুর কংক্রিটের এই শহরে মিরপুরের বোটানিক্যাল গার্ডেন যেন সবুজের অভয়ারণ্য। ৮৪ হেক্টর আয়তনের এই বাগানে আছে ৮০ হাজার প্রজাতির গাছ, ভেষজ উদ্ভিদ আর গুল্ম।

আঁকাবাঁকা লেক আর বিস্তৃত সবুজ যেন আপনাকে হেঁটে বেড়াতে আমন্ত্রণ জানাবে। গাছের মাঝে তৈরি করিডোর, টানেল এবং বসার স্থানগুলোয় বসে সময় কাটানোও হতে পারে দারুণ আনন্দময়। এখানে আছে চমৎকার গোলাপ বাগান, যেখানে ফুটে থাকা নানা জাতের আর রঙের গোলাপ ফুল নিঃসন্দেহে দেখার মতো দৃশ্য। বিশেষ করে শীতকালে যখন হাজার হাজার ফুল ফোটে, তখন বাগানটিকে দেখায় অপূর্ব।

উদ্ভিদপ্রেমী এবং শহুরে মানুষদের জন্য বোটানিক্যাল গার্ডেন হতে পারে এমন জায়গা যেখানে গেলে আপনার আত্মা পুনরুজ্জীবিত হয়ে উঠবে।

দিয়াবাড়ি, উত্তরা: চট করে প্রকৃতির মাঝে ঘুরে আসা

হুট করে কোথাও ঘুরতে যেতে ইচ্ছা হলে দিয়াবাড়ি হতে পারে দারুণ জায়গা। উত্তরার এই এলাকাটি বিস্তীর্ণ সবুজ, শরৎকালে কাশফুল, শান্ত প্রকৃতির মাঝে সূর্যাস্ত দেখার জায়গা হিসেবে বেশ পরিচিত। দর্শনার্থীরা চাইলে নৌকা ভ্রমণ করতে পারেন, লেকের পানিতে করতে পারেন কায়াকিং কিংবা স্রেফ হেঁটে বেড়াতে পারেন পথে পথে।

গাছের মধ্যে দিয়ে বয়ে যাওয়া শীতল বাতাস কিংবা সোনালি সূর্যের আলো দিয়াবাড়িতে একটি শান্ত পরিবেশ তৈরি করে। নির্মল পরিবেশ উপভোগ করতে কিংবা বিকেলের চায়ের সঙ্গে আড্ডা দেওয়ার জন্য এই জায়গাটি আদর্শ হতে পারে।

অনুবাদ করেছেন শেখ সিরাজুম রশীদ

   

Comments

The Daily Star  | English

US retailers lean on suppliers to absorb tariffs

Rather than absorbing the cost or immediately passing it on to consumers, many US apparel retailers and brands have turned to their suppliers in Bangladesh, demanding they share the pain

1h ago