পায়রা ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন পুরোপুরি বন্ধ

পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্র,
পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্র। ছবি: স্টার ফাইল ফটো

পটুয়াখালী কলাপাড়া উপজেলার পায়রা এক হাজার ৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন পুরোপুরি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

গত সোমবার এই বিদ্যুৎকেন্দ্রটির অদূরে একই ক্ষমতাসম্পন্ন নবনির্মিত আরপিসিএল-নরিনকো ইন্টারন্যাশনাল পাওয়ার লিমিটেড (আরএনডিসিএল) বিদ্যুৎকেন্দ্রের পরীক্ষামূলক সঞ্চালনের জন্য পায়রার ৬৬০ মেগাওয়াট ক্ষমতার প্রথম ইউনিটের বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ রাখা হয়।

এর আগে গত ৯ নভেম্বর রক্ষণাবেক্ষণের জন্য বিদ্যুৎকেন্দ্রটির ৬৬০ মেগাওয়াটের দ্বিতীয় ইউনিটের উৎপাদন বন্ধ করে দেওয়া হয়। পায়রা তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রকল্প কর্মকর্তা শাহ আবদুল মাওলা দ্য ডেইলি স্টারকে এ তথ্য জানিয়েছেন।

নতুন বিদ্যুৎকেন্দ্রটির অবস্থান পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে মাত্র দুই কিলোমিটার উত্তরে রামনাবাদ নদীর তীরে। ২০১৯ সালে প্রায় ৯৫০ একর জমির ওপর আড়াই শ কোটি ডলার খরচে কেন্দ্রটির নির্মাণকাজ শুরু হয়।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান রুরাল পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড (আরপিসিএল) ও চীনের রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান নরিনকো ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন লিমিটেডের (নরিনকো) সমান অংশীদারিত্বে স্থাপিত নতুন এ বিদ্যুৎকেন্দ্র উৎপাদনে এলে অতিরিক্ত চাহিদা মেটাতে ব্যয়বহুল তেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের ওপর নির্ভরশীলতা কমবে। সেই সঙ্গে কমবে উৎপাদন খরচও।

বিদ্যুৎকেন্দ্রটি চালু করতে ব্যাকফিড পাওয়ারের জন্য ১৬ থেকে ২২ ডিসেম্বর পর্যন্ত পায়রা তাপ বিদ্যুতের সঞ্চালন লাইনটি বন্ধের অনুমতি দিয়েছে কর্তৃপক্ষ।

আরপিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী সেলিম ভূঁইয়া ডেইলি স্টারকে বলেন, 'নতুন বিদ্যুৎকেন্দ্রের ৬৬০ মেগাওয়াট ক্ষমতার একটি ইউনিট উৎপাদনের জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত। এটি চালু করতে এখন ব্যাকফিড পাওয়ার প্রয়োজন। সেজন্য পিজিসিবির পায়রা-গোপালগঞ্জ ৪০০ কেভি বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন বন্ধ করতে হবে।'

'এরপর পরীক্ষামূলক সঞ্চালনের জন্য ৬০ থেকে ৭৫ দিন সময় লাগবে। সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী মার্চের প্রথম সপ্তাহে বাণিজ্যিকভাবে প্রথম ইউনিট ও মে মাসের শেষ দিকে সমান ক্ষমতার দ্বিতীয় ইউনিটের বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যোগ হবে বলে আশা করছি।'

প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানান, বর্তমানে দেশে গ্রিডভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের স্থাপিত ক্ষমতা প্রায় ২৭ হাজার ৭৪০ মেগাওয়াট। এর মধ্যে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের সক্ষমতা পাঁচ হাজার ৬৮৩ মেগাওয়াট। আরপিসিএল-নরিনকোর বিদ্যুৎকেন্দ্রের সক্ষমতা যুক্ত হলে দেশে স্থাপিত কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর মোট সক্ষমতা দাঁড়াবে সাত হাজার মেগাওয়াট।

বিদ্যুৎকেন্দ্রের কয়লার মজুদের বিষয়ে আরপিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী সেলিম ভূঁইয়া আরও বলেন, 'কেন্দ্রটি উৎপাদন শুরু করলে দুই ইউনিটের জন্য প্রতিদিন গড়ে ১২ হাজার টন কয়লার প্রয়োজন। ইতোমধ্যে ১০ লাখ টন কয়লার জন্য সিঙ্গাপুরের প্রতিষ্ঠান ইয়ানতাইয়ের সঙ্গে চুক্তি হয়েছে। চুক্তির আওতায় এক লাখ ২৮ হাজার টন কয়লা এসেছে। জানুয়ারিতে আরও কয়লা আসবে। এভাবে পর্যায়ক্রমে চাহিদা অনুযায়ী কয়লা আমদানি করা হবে।'

'পরিবেশের ক্ষতির বিষয়টি বিবেচনা করে ইন্দোনেশিয়ার উন্নতমানের কয়লা ব্যবহার করা হবে। এটি অত্যাধুনিক বিদ্যুৎকেন্দ্র। কম কয়লা পুড়িয়ে বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হবে।'

বিদ্যুতের দাম প্রসঙ্গে তিনি বলেন, 'আদানি, রামপাল, বাঁশখালী ও অন্যান্য তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের তুলনায় এই কেন্দ্রের উৎপাদন খরচ কম হবে। বর্তমান কয়লার দাম (৭৭ ডলার) বিবেচনায় নিলে প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের দাম সব মিলে গড়ে নয় টাকা ৮৫ পয়সার মতো হতে পারে।'

প্রকল্প পরিচালক ও আরএনপিএলের প্রধান প্রকৌশলী মো. তৌফিক ইসলাম ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমতলীতে সুইচিং স্টেশন তৈরি করা হয়েছে। সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী মার্চের শুরুতে প্রথম ইউনিট ও জুনের দিকে দ্বিতীয় ইউনিটের পুরোপুরি উৎপাদন সম্ভব হবে।'

Comments

The Daily Star  | English

IMF to crank up pressure to boost tax collection

The International Monetary Fund is set to tighten the noose on the Bangladesh government over its dismal revenue mobilisation...

8h ago