মুক্তিযুদ্ধে চাঁদপুরের পাঠান বাহিনী
(১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় সারা বাংলাদেশে একাধিক আঞ্চলিক বাহিনী গড়ে উঠেছিল। বেঙ্গল রেজিমেন্টের নিয়মিত বাহিনীর প্রশিক্ষিত ও সাব সেক্টরের অধীনে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধারা যেভাবে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন ঠিক তেমনি আঞ্চলিক বাহিনীর মুক্তিযোদ্ধারাও পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিটি যুদ্ধে অসীম বীরত্ব দেখিয়েছেন। বিজয়ের মাসে আমরা তুলে ধরছি সেইসব বাহিনীর কথা। ষষ্ঠ পর্বে আজ থাকছে পাঠান বাহিনীর অনন্য বীরত্বগাঁথা।)
মুক্তিযুদ্ধের সময় জহিরুল হক পাঠান নামে এক বাঙালি সুবেদার পাকিস্তানিদের কাছে হয়ে উঠেছিলেন এক ভয়ঙ্কর নাম। চাঁদপুর, কুমিল্লা, নোয়াখালী ও লক্ষ্মীপুরের বিশাল এক অঞ্চল জুড়ে গড়ে উঠা আঞ্চলিক বাহিনীটি পরিচিত ছিল পাঠান বাহিনী নামে।
সুনিপুণ রণকৌশল, রণাঙ্গনের বীরত্বগাঁথা, গেরিলা যুদ্ধে অসাধারণ সাফল্যের মধ্য দিয়ে মুক্তিযুদ্ধে বাহিনীটি এই অঞ্চলের যুদ্ধে ফলাফল নিয়ন্ত্রক হয়ে দাঁড়িয়েছিল। প্রাথমিক পর্যায়ে ছুটিতে আসা ও প্রাক্তন কয়েকজন সেনা সদস্যকে নিয়ে বাহিনীটি গঠিত হলেও একপর্যায়ে পাঠান বাহিনীতে মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা দাঁড়ায় ৯ শতাধিক।
পাঠান বাহিনীর বিষয়ে বিস্তারিত প্রতিবেদনের কাজে চলতি বছরের জুন মাসে সরেজমিনে চাঁদপুর, কুমিল্লা, লক্ষ্মীপুর ও নোয়াখালীর মোট ১০টি উপজেলা সফর করে পাঠান বাহিনীর ত্রিশ জনের বেশি মুক্তিযোদ্ধার সঙ্গে কথা হয় ডেইলি স্টারের।
মুক্তিযুদ্ধে পাঠান বাহিনীর যুদ্ধ ও বীরত্বগাঁথার বিবরণ একাধিক গ্রন্থে লিপিবদ্ধ আছে। এর মধ্যে শাহজাহান কবির বীর প্রতীকের লেখা 'চাঁদপুর জেলার মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস' ও ডা. দেলোয়ার হোসেন খানের 'মুক্তিযুদ্ধে চাঁদপুর' অন্যতম।
এই দুটি গ্রন্থ সূত্রে জানা যায় '১৯৬৫ সালে পাক-ভারত যুদ্ধে পাঞ্জাবের খেমকারান সেক্টরে দুটি ভারতীয় ট্যাংক ধ্বংসের পাশাপাশি অসীম বীরত্ব ও সাহসিকতা প্রদর্শনের স্বীকৃতিস্বরূপ পাকিস্তান সরকার জহিরুল হক পাঠানকে 'তমাঘায়ে জুররাত' খেতাবে ভূষিত করে। তার বীরত্ব 'রণাঙ্গনে পাকিস্তান' শীর্ষক মাধ্যমিক শ্রেণির পাঠ্যসূচিতেও অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
১৯৭১ সালের শুরুতে ফার্স্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে কর্মরত ছিলেন জহিরুল হক পাঠান। এর অবস্থান ছিল যশোর ক্যান্টনমেন্টে। ফেব্রুয়ারি মাসে লাহোরে বদলির সিদ্ধান্ত এলে দেশের পরিস্থিতি বুঝে কৌশলে দুই মাসের ছুটি নিয়ে চাঁদপুরের হাজীগঞ্জে নিজ বাড়িতে চলে আসেন জহিরুল হক পাঠান।
মার্চ মাসে বঙ্গবন্ধু অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দিলে চাঁদপুরে সর্বদলীয় চাঁদপুর মহকুমা সংগ্রাম কমিটি গঠিত হয়। মার্চ মাসের শুরুতেই হাজীগঞ্জে কলিম উল্লাহ ভূঁইয়ার উদ্যোগে হাজীগঞ্জের অলিপুর গ্রামে ৩০ জন ছাত্র যুবক সংগঠিত হয়ে একটি বাহিনী গঠন করে। যার মূল দায়িত্বে ছিলেন কলিম উল্লাহ ভূঁইয়া।
পাঠান বাহিনীর মুক্তিযোদ্ধা ডা. দেলোয়ার হোসেন খান বলেন, 'হাজীগঞ্জের অলিপুরের লন্ডনি বাড়ি ও পার্শ্ববর্তী একটি বাড়িতে প্রথম ট্রেনিং শুরু করেন তিনি। পরবর্তীতে কলিম উল্লাহ ভূঁইয়াই পাঠান সাহেবকে যুক্ত করেন।'
৮ এপ্রিল আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা মিজানুর রহমান চৌধুরীর সভাপতিত্বে ফরিদগঞ্জের পাইকপাড়া স্কুলে অনুষ্ঠিত সর্বদলীয় সংগ্রাম কমিটির এক জরুরি বৈঠকে জহিরুল হক পাঠানকে চাঁদপুর মহকুমা মুক্তিবাহিনীর প্রধানের দায়িত্ব দেয়া হয়।
তখন জহিরুল হক পাঠান প্রথমে বিশাল একটি এলাকাকে পাঁচটি অঞ্চলে বিভক্ত করে প্রতিরক্ষাব্যূহ গড়ে তোলেন। নায়েক সুবেদার আলী আকবর পাটোয়ারীর নেতৃত্বে হাজীগঞ্জ, রামগঞ্জ, চাটখিল ও রায়পুরের একাংশ। নায়েক সুবেদার জহিরুল ইসলামকে মতলব থানার দায়িত্বে, সার্জেন্ট জয়নাল আবেদীনকে চাঁদপুর মহকুমার সদর ও হাইমচর, নায়েক সুবেদার আবদুর রবকে ফরিদগঞ্জ, রামগঞ্জ ও রায়পুরের কিছু অংশ, হাবিলদার সিরাজুল ইসলামকে কচুয়া থানা এবং নায়েব সুবেদার মফিজকে হেডকোয়ার্টার ও শাহরাস্তি থানার প্রতিরক্ষার দায়িত্ব দেয়া হয়।
প্রাথমিক পর্যায়ে পাইকপাড়া স্কুলকে বাহিনীর হেড কোয়ার্টার ও প্রশিক্ষণ ক্যাম্প করা হলেও পরবর্তীতে বাহিনীর হেডকোয়ার্টার লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জের পানি আলী গ্রামের ঠাকুরবাড়িতে স্থানান্তরিত করা হয়।
মুক্তিযুদ্ধের সময় চাঁদপুর, কুমিল্লা, নোয়াখালী ও লক্ষ্মীপুরের মোট ১৩টি থানার ১ হাজার বর্গমাইল এলাকা জুড়ে বিস্তৃত ছিল পাঠান বাহিনী। উত্তরে চাঁদপুরের মতলবের সাদুল্লাপুরের মেঘনা নদীর তীর থেকে কচুয়ার বিটারা ইউনিয়ন পর্যন্ত, দক্ষিণে হাইমচরের চর ভৈরবী ইউনিয়ন থেকে লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জ, রায়পুর ও নোয়াখালীর চাটখিল পর্যন্ত। পূর্বে কচুয়া থেকে কুমিল্লার লাকসাম ও মনোহরগঞ্জ থানা ও পশ্চিমে মতলব, চাঁদপুর মহকুমা সদর ও হাইমচরের মেঘনা নদীর প্রান্ত পর্যন্ত ছিল পাঠান বাহিনীর যুদ্ধাঞ্চল।
পাঠান বাহিনীর একটি গোয়েন্দা ইউনিটও ছিল। যা বাহিনী প্রধান জহিরুল হক পাঠান ও বাহিনী পরিচালক কলিম উল্লাহ ভূঁইয়া কেন্দ্রীয়ভাবে নিয়ন্ত্রণ করতেন।
পাঠান বাহিনীর বেসামরিক কার্যক্রম পরিচালিত হতো হাজীগঞ্জ সংগ্রাম কমিটির মাধ্যমে।
পাঠান বাহিনীর মুক্তিযোদ্ধারা ৩০টির বেশি যুদ্ধে অংশ নিয়ে অসীম বীরত্ব ও সাহসিকতা দেখিয়েছিলেন।
মুক্তিযুদ্ধের প্রথমদিকে পাঠান বাহিনীর মুক্তিযোদ্ধারাদের তেমনই একটি দুর্ধর্ষ যুদ্ধ ছিল গাজীপুরের প্রথম যুদ্ধ।
'চাঁদপুর জেলার মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস' গ্রন্থ সূত্রে জানা যায়, ২৭ এপ্রিল ফরিদগঞ্জে অবস্থানরত পাকিস্তানি সেনাদের সাহায্যে চাঁদপুর থেকে অস্ত্র, গোলাবারুদ বোঝাই একটি লঞ্চ আসার খবর পেয়ে আক্রমণের সিদ্ধান্ত নেন জহিরুল হক পাঠান। এক প্লাটুন মুক্তিযোদ্ধাকে গাজীপুরের তিন দিকে প্রতিরক্ষায় ও আরেক প্লাটুন মুক্তিযোদ্ধাকে পাইকপাড়ায় রিজার্ভে রাখা হয়। সুবেদার জহিরের প্লাটুনকে মানিকরাজ নদীর বাঁকে, সুবেদার রবের প্লাটুনকে গাজীপুর ঈদগাহ ও ফরিদগঞ্জের রাস্তার প্রতিরক্ষায় বসিয়ে বাহিনী প্রধান গাজীপুর বাজারে অবস্থান নেন।
এই যুদ্ধে অংশ নেয়া মুক্তিযোদ্ধা লুৎফর রহমান বলেন, 'মিলিটারি আমাদের অ্যামবুশ পজিশনে ঢুকতেই পাঠান সাহেব গুলি শুরু করলেন। এরপর আমরাও গুলি শুরু করলাম। অবস্থা বেগতিক দেখে ওরা কিছু নদীতে ঝাঁপ দিল, বেশিরভাগই মারা গেল। বাকিরা ধানুয়া দিয়ে পালিয়ে গেল। তলা ফুটো হওয়ায় লঞ্চটা নদীতে ডুবে গেল।'
পরদিন মুক্তিযোদ্ধারা নদীর তলা থেকে লঞ্চটিকে তোলেন। এসময় লঞ্চ থেকে ২টি ভারী মেশিনগান, ৪টি চাইনিজ এলএমজিসহ প্রচুর রাইফেল ও গোলাবারুদ উদ্ধার করেন।
মুক্তিযুদ্ধের খাজুরিয়ার প্রতিরোধ যুদ্ধ ছিল প্রকৃত অর্থেই এক জনযুদ্ধ। পাঠান বাহিনীর মুক্তিযোদ্ধারা ছাড়াও এই যুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন গ্রামের নিরস্ত্র সাধারণ মানুষ।
'বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ সেক্টর ভিত্তিক ইতিহাস সেক্টর-২' সূত্রে, ২০ জুন ভোরের মধ্যেই জহুরুল হক পাঠানের নির্দেশে হাজীগঞ্জ ও চাঁদপুর থেকে আগত পাকিস্তানি সেনাদের প্রতিহত করতে দুই প্লাটুন মুক্তিযোদ্ধাকে কামতা ও গল্লা; রামগঞ্জ ও নোয়াখালী থেকে আগত পাকিস্তানি সেনাদের প্রতিহত করতে এক প্লাটুন মুক্তিযোদ্ধাকে খাজুরিয়ার নিকটবর্তী ওয়াপদা বেড়িবাঁধে মোতায়েন করা হয়। একইসঙ্গে ২ নম্বর প্লাটুনকে নোয়াখালীর সোনাপুর অভিমুখে রাস্তায় অবস্থানের নির্দেশ দেয়া হয়।
দুপুরে ওয়াপদায় অবস্থানরত মুক্তিযোদ্ধারা পাকিস্তানিদের অগ্রসর দলের উপর অতর্কিত হামলা চালালে পাকিস্তানিরাও প্রতিরোধ গড়ে তোলে। তখন বাকি প্লাটুনের মুক্তিযোদ্ধারাও খাজুরিয়ার দিকে ছুটে যান। তাদের সঙ্গে যোগ দেন গ্রামের সাধারণ মানুষও।
যুদ্ধে অংশ নেয়া মুক্তিযোদ্ধা দেলোয়ার হোসেন ডেইলি স্টারকে বলেন, 'পাকিস্তানিদের ধাওয়া করতে গিয়ে দেখি খাজুরা বাজার, রূপসা, কড়ইতলী, চান্দ্রাসহ আশপাশের হাজার হাজার গ্রামবাসী দা, কুড়ালসহ যা সঙ্গে ছিল তা নিয়েই আমাদের সঙ্গে যোগ দিল। তখন গ্রামবাসীদের নিরাপত্তার কথা ভেবে পাঠান সাহেব পিছু হটার সিদ্ধান্ত নিলেন।'
একপর্যায়ে পলায়নরত পাকিস্তানি সেনারা পিছু হটে শক্তি বৃদ্ধি করে গল্লাকের দিকে অগ্রসর হলে মুক্তিযোদ্ধারা তাদের উপর ত্রিমুখী আক্রমণ চালান। এসময় ৮ পাকিস্তানি সেনা নিহত হয়।
প্রাথমিকভাবে পাঠান বাহিনীতে সামরিক বাহিনীর প্রাক্তন ও পালিয়ে আসা সদস্যরা যোগ দিলেও একপর্যায়ে ছাত্র-যুবক-শ্রমিকসহ সর্বস্তরের মানুষ পাঠান বাহিনীতে যোগ দেন।
বাহিনীর তত্ত্বাবধানে দেশের অভ্যন্তরেই প্রশিক্ষণের কাজ শুরু হয়। পাঠান বাহিনীর মুক্তিযোদ্ধা সুবেদার সিরাজুল হক ডেইলি স্টারকে বলেন, 'যুদ্ধকালীন আমরা টোরাগড়, লোটরা, উগারিয়া ও নরিংপুর বাজারে যেমন অবস্থান নিয়েছি, তেমন বটতলা, নকীপুর, কাদরা ও দক্ষিণ সাহেবগঞ্জ স্কুল মাঠকেও প্রশিক্ষণ ক্যাম্প হিসেবে ব্যবহার করেছি।'
পাঠান বাহিনীর মুক্তিযোদ্ধা অজিত সাহা বলেন, 'শেষদিকে অবশ্য নিরাপত্তার কারণে আমাদের নির্দিষ্ট প্রশিক্ষণ ক্যাম্প ছিল না। যেসব বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছি, সেসব বাড়িকেই প্রশিক্ষণ ক্যাম্প বানিয়েছি।'
ফরিদগঞ্জের শাশিয়ালী মাদ্রাসা ছিল পাঠান বাহিনীর তেমনই একটি প্রশিক্ষণ ক্যাম্প। ক্যাম্পটি দখলের জন্য পাকিস্তানি সেনারা একাধিক প্রচেষ্টা চালিয়েছিল। ফলে শাশিয়ালীতে পাঠান বাহিনীর মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে পাকিস্তানি বাহিনীর একাধিক যুদ্ধ হয়েছিল। ২৯ জুলাইয়ের শাশিয়ালীর যুদ্ধ ছিল পাঠান বাহিনীর তেমনই এক যুদ্ধ।
২৯ জুলাই ফরিদগঞ্জ থেকে পাকিস্তানি সেনারা ১৫/১৬টি নৌকায় চেপে ক্যাম্পটি দখলের সিদ্ধান্ত নিয়ে এগিয়ে আসে। পাকিস্তানিদের আগমনের খবর পেয়ে অতর্কিত আক্রমণের জন্য পরিকল্পনা করেন জহিরুল হক পাঠান।
একপর্যায়ে পাকিস্তানি সেনারা অ্যামবুশ পজিশনে ঢুকলেই গর্জে উঠে মুক্তিযোদ্ধাদের অস্ত্র। মুক্তিযোদ্ধাদের ত্রিমুখী আক্রমণে এসময় এক অফিসারসহ ৬ পাকিস্তানি সেনা এবং ফরিদগঞ্জ থানা পুলিশের দারোগাসহ ৮ জন নিহত হয়।
এমন পরিস্থিতিতে পাকিস্তানি সেনারা পালাতে শুরু করলে শাসিয়ালী, কামালপুর ও পাটোয়ারী বাজারসহ বিভিন্ন এলাকায় মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে পাকিস্তানিদের খণ্ডখণ্ড যুদ্ধ হয়।
একপর্যায়ে পলায়নরত কিছু সেনা কামালপুরের ধোপা বাড়িতে আশ্রয় নিলে মুক্তিযোদ্ধারা বাড়িটি ঘিরে ফেললে পাকিস্তানি সেনাদের সঙ্গে তাদের ব্যাপক গোলাগুলি হয়। এসময় সব পাকিস্তানি সেনা নিহত হয় এবং মুক্তিযোদ্ধা ফারুক আহত হন।
পাঠান বাহিনীর গুরুত্বপূর্ণ যুদ্ধগুলোর মধ্যে আরও রয়েছে মে মাসের প্রথম দিকে শাহরাস্তির ঠাকুর বাজারের যুদ্ধ, ১৭ মে হাজীগঞ্জের বলাখালের রামচন্দ্রপুর খেয়াঘাটের যুদ্ধ, ১৫ জুলাই শাহরাস্তির নরিংপুরের যুদ্ধ, ২৭ ও ২৮ আগস্ট কুমিল্লার লাকসামের হাসনাবাদের যুদ্ধ, ৭ সেপ্টেম্বর সূচীপাড়া খেয়াঘাটের যুদ্ধ, ফরিদগঞ্জে পাকিস্তানি খাদ্যবাহী লঞ্চে আক্রমণ, ২৯ সেপ্টেম্বর অফিস চিতোষীর যুদ্ধ, ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে মতলবের মোহনপুরে মেঘনা নদীতে পাকিস্তানি সেনাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ।
মুক্তিযুদ্ধের অক্টোবর মাসে জহিরুল হক পাঠান কলকাতা যান। এসময় তিনি ২ নম্বর সেক্টরের সেক্টর কমান্ডার খালেদ মোশাররফের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে তার বাহিনীর বিস্তারিত কার্যক্রম তুলে ধরেন। এসময় জহিরুল হক পাঠানকে চাঁদপুর মধুমতি সাব সেক্টর কমান্ডার (কোড ১২০৪) হিসেবে নিযুক্ত করা হয়।
মুক্তিযুদ্ধের সময়ে সাধারণ মানুষের সাহায্যই সবচেয়ে বড় শক্তি ও পাথেয় ছিল বলে মন্তব্য করেন পাঠান বাহিনীর মুক্তিযোদ্ধারা। পাঠান বাহিনীর মুক্তিযোদ্ধা বি এম মহসিন বলেন, 'গ্রামের অতি সাধারণ মানুষই আমাদের খাদ্য দিয়েছে, আশ্রয় জুগিয়েছেন। তাদের সহযোগিতা না পেলে আমাদের পক্ষে রণাঙ্গনে যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়া অসম্ভব ছিল।'
বাহিনীর আরেক মুক্তিযোদ্ধা ডা. দেলোয়ার হোসেন বলেন, 'এমনও হয়েছে তারা নিজেরা না খেয়ে আমাদের পাতে খাবার তুলে দিয়েছে। দেখা গেছে, ঘরে একটা মাত্র কাঁথা। তারা সেই কাঁথা গায়ে না দিয়ে নিজেরা কাপড় গায়ে দিয়ে আমাদের কাঁথাটা দিয়েছে আমরা যেন একটু শান্তিতে ঘুমাতে পারি।'
রণাঙ্গনে পাঠান বাহিনীর মুক্তিযোদ্ধাদের অসীম বীরত্বগাঁথায় মুক্তিযুদ্ধের ৮ ডিসেম্বর মুক্ত হয় চাঁদপুর। চাঁদপুর মুক্ত হওয়ার ২১ দিন পর ২৯ ডিসেম্বর চাঁদপুর টেকনিক্যাল হাইস্কুল মাঠে আনুষ্ঠানিকভাবে অস্ত্র জমা দেন পাঠান বাহিনীর মুক্তিযোদ্ধারা।
Comments