শীতে বাত ব্যথা বাড়লে কী করবেন

শীতে বাত ব্যথা বাড়লে
ছবি: সংগৃহীত

শীতে নানা ধরনের শারীরিক সমস্যা বাড়ে। বাতের ব্যথা এর মধ্যে একটি সমস্যা। তবে সব ধরনের বাতের ব্যথা বাড়বেই এমনটা নয়।

শীতে বাত ব্যথায় করণীয় সম্পর্কে জেনে নিন এনাম মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হসপিটালের রিউম্যাটোলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান এবং বিআরবি হসপিটালস লিমিটেডের রিউমাটোলজি অ্যান্ড মেডিসিন কনসালটেন্ট ডা. হাবিব ইমতিয়াজ আহমাদের কাছ থেকে।

শীতে বাতের ব্যথা বাড়ে কেন

ডা. হাবিব ইমতিয়াজ বলেন কিছু কিছু বাত বিশেষ করে রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস, অস্টিও আর্থ্রাইটিস, সিস্টেমিক স্ক্লেরোসিস রোগীদের হাতের ত্বকের রঙের পরিবর্তন এই ধরনের সমস্যাগুলো বেড়ে যায় শীতকালে। বয়স্ক ব্যক্তিদের পায়ে, হাঁটু, গোড়ালি ব্যথা খুব কষ্টকর বিষয় হয়ে দাঁড়ায় শীতকালে। বিভিন্ন কারণে শীতকালে বাতের ব্যথা বাড়ে। যেমন-

১.শীতকালে স্নায়ুর সংবেদনশীলতা অনেক কমে যায়, কম স্টিমুলেশন বা উদ্দীপনায় নার্ভগুলো অতি সংবেদনশীল হয়ে যায়। এটার কারণে বাত ব্যথা বেশি অনুভূত হয়।

২. শীতকালে বাতাসে চাপ কমে যাওয়ার কারণে জয়েন্ট বা অস্থিসন্ধিতে ব্যথা হতে পারে।

৩. সায়াটিকা যেটি কোমরের একটি বিশেষ ব্যথা এটিও শীতকালে বেড়ে যায়।

৪. শরীরে তাপমাত্রা কমে যাওয়ার কারণে বা পরিবেশের তাপমাত্রা কমে যাওয়ার কারণে মাংশপেশিতেও টান ধরতে পারে যে কারণে ব্যথা বাড়ে।

৫.  শীতকালে পানি কম পান করেন অনেকে, শরীরের তরলের ঘাটতি মাংশপেশির আড়ষ্টতা বাড়ার অন্যতম কারণ হিসেবে দেখা যায়। যার ফলে ব্যথা বাড়ে।

৬. শীতকালে স্বাভাবিকের তুলনায় হাঁটাচলার পরিমাণ কমে যায় বিশেষ করে বয়স্ক ব্যক্তিদের। লেপ, কম্বল মুড়ি দিয়ে শুয়ে, বসে থাকতে বেশি পছন্দ করেন তারা। এই অচল অবস্থার কারণে অস্থিসন্ধিগুলো আরো বেশি শক্ত হয়ে যাওয়া, ব্যথা বেড়ে যাওয়া এই সমস্যাগুলো হয়ে থাকে।

৭. শীতকালে তাপমাত্রা কমে যাওয়ার কারণে অস্থিসন্ধির আড়ষ্টতা বেড়ে যায়, যে কারণে ব্যথা বাড়ে।

৮.  ঠান্ডায় হাতে-পায়ে রক্ত চলাচল কমে যাওয়ার কারণে বাতের ব্যথা বাড়তে পারে।

৯.  শীতে রোদের তীব্রতা কম থাকে, ভিটামিন ডির ঘাটতি আছে এমন রোগীদের ভিটামিন ডি এর ঘাটতি আরও বেড়ে যা।য় সেটির কারণে বাত ব্যথার লক্ষণগুলো আরও বেশি মাত্রায় প্রকাশ পায়।

করণীয়

১. শীতকালে স্বাভাবিকের তুলনায় শারীরিক পরিশ্রম বাড়াতে হবে। শীতের কারণে বাড়ির বাইরে যেতে না পারলেও বাড়ির ভেতরে নিয়মিত হাঁটাচলা, ব্যায়াম করতে হবে। বারান্দা বা বাসার করিডোরে ২০ থেকে ৩০ মিনিট হাঁটতে হবে।

২. পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান করতে হবে, প্রতিদিন ২ থেকে আড়াই লিটার।

৩.  ঠান্ডায় হাতে-পায়ে রক্ত চলাচল কমে যায়। এ কারণে বাত ব্যথা বাড়তে পারে। এজন্য শরীরে তাপমাত্রার ভারসাম্য যাতে ঠিক থাকে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। গরম পোশাক পরতে হবে, উষ্ণ পরিবেশে থাকতে হবে।

৪. গরম সেঁক দিলে মাংশপেশি শিথিল হয়ে যায়, রক্তনালি প্রসারিত হয়। তাই বাত ব্যথার স্থানে গরম সেঁক দিলে অস্থিসন্ধির ব্যথা কমে।

৫. যদি ভিটামিন ডির ঘাটতি থাকে শরীরে তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ভিটামিন ডির মাত্রা ঠিক রাখতে হবে ওষুধ সেবনের মাধ্যমে।

৬.  যদি কেউ আগে থেকে আর্থ্রাইটিসের চিকিৎসা এবং থেরাপি নিয়ে থাকেন তাহলে সেটি চালিয়ে যেতে হবে।

ডা. হাবিব ইমতিয়াজ বলেন, শীতের সময় অস্থিসন্ধি বা মাংসপেশিতে চাপ পড়ে যাওয়া, অল্পতেই টান খাওয়া এই প্রবণতা বেশি থাকে। তাই প্রতিদিন হাঁটাচলা করার সময় খেয়াল রাখতে হবে সেটি যেনো উঁচু-নিচু জায়গায় না হয়, সিঁড়ি কম ব্যবহার করতে হবে। নিচু মোড়া, টুল, পিঁড়ি, পাটি এগুলোতে বসা যাবে না, চেয়ারে বসতে হবে, হাই কমোড ব্যবহার করতে হবে, একটানা দাঁড়িয়ে থাকা যাবে না, দীর্ঘ সময় শুয়ে-বসে না থাকা, ভারি জিনিসপত্র তোলা বা বহন করা যাবে না। অর্থাৎ এমন কোনোকিছু করা যাবে না যাতে অস্থিসন্ধিতে চাপ পড়ে।

নিয়ম মেনে চলার পরেও যদি বাতের ব্যথা অতি মাত্রায় বেড়ে যায় তাহলে অবশ্যই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।

 

Comments

The Daily Star  | English

What are we building after dismantling the AL regime?

Democracy does not seem to be our focus today. Because if it were, then shouldn’t we have been talking about elections more?

12h ago