স্টার্কের আগুন ঝরানো ক্যারিয়ারসেরা বোলিংয়ে কুপোকাত ভারত
দিবারাত্রির ম্যাচের প্রথম বলেই যশস্বী জয়সওয়ালকে ফিরিয়ে উল্লাসে মাতলেন মিচেল স্টার্ক। ভারতের ইনিংস দুইশর নিচে মুড়িয়ে দেওয়ার কাজটাও তিনি করলেন নিতিশ কুমার রেড্ডিকে বিদায় করে। অস্ট্রেলিয়ার বাঁহাতি পেসার রীতিমতো আগুন ঝরালেন অ্যাডিলেডের ২২ গজে। গতি আর সুইংয়ের সমন্বয়ে টেস্ট ক্যারিয়ারের সেরা বোলিং ফিগারের স্বাদ নিলেন তিনি।
অ্যাডিলেড ওভালের পেসবান্ধব পিচে শুক্রবার টস জিতে আগে ব্যাট করতে নেমে চা বিরতির আগে ১৮০ রানে গুটিয়ে গেছে ভারত। স্টার্কের তোপের কোনো জবাব খুঁজে না পাওয়া সফরকারীরা টিকতে পারে মাত্র ৪৪.১ ওভার।
অস্ট্রেলিয়ার হয়ে সাদা পোশাকে ৯১তম ম্যাচ খেলতে নামা স্টার্ক ৪৮ রান খরচায় নেন ৬ উইকেট। এই সংস্করণে এই নিয়ে ১৫তম বারের মতো ইনিংসে ৫ উইকেটের দেখা পেলেন তিনি। তার আগের সেরা বোলিং ফিগার ছিল ৫০ রানে ৬ উইকেট শিকার, ২০১৬ সালে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে গলে। এবার দেশের মাটিতে ওই অর্জন ছাপিয়ে গেলেন ৩৪ বছর বয়সী তারকা।
ভারতের বিপক্ষে এর আগে এক যুগে ১৯ টেস্ট খেললেও কখনও ইনিংসে ৫ উইকেট পাননি স্টার্ক। মাত্র একবারই নিয়েছিলেন ৪ উইকেট, অ্যাডিলেডের মাঠেই ২০২০ সালের ডিসেম্বরে। এবার তার সেই দীর্ঘ অপেক্ষারও অবসান ঘটল।
প্রথম বলেই উইকেট নিয়ে একটি রেকর্ডেও ভাগ বসালেন স্টার্ক। টেস্ট ক্রিকেটের সুদীর্ঘ ইতিহাসে তৃতীয়বারের ম্যাচের প্রথম বলে উইকেট নিলেন তিনি। এই কীর্তি আর আছে ওয়েস্ট ইন্ডিজের সাবেক ক্রিকেটার পেড্রো কলিন্সের। দুবার করে এই নজির আছে নিউজিল্যান্ডের রিচার্ড হ্যাডলি, ইংল্যান্ডের জিওফ আরনল্ড, ভারতের কপিল দেব ও শ্রীলঙ্কার সুরঙ্গা লাকমলের।
সুইং করে ভেতরে ঢোকা ডেলিভারিতে কুপোকাত হন পার্থে আগের টেস্টে দুর্দান্ত সেঞ্চুরি করা জয়সওয়াল। গোল্ডেন ডাক মেরে এলবিডব্লিউ হয়ে সাজঘরের পথ ধরেন তিনি। ধাক্কা সামলে ৬৯ রানের জুটি গড়েন আরেক ওপেনার লোকেশ রাহুল ও শুবমান গিল। কিন্তু ডিনারের আগে ঘটে ছন্দপতন। ১২ রানের মধ্যে ভারতের ৩ উইকেট তুলে নেয় স্বাগতিকরা।
৬৪ বলে ৩৭ রান করা রাহুলকে বাড়তি বাউন্সে গালিতে ক্যাচ বানিয়ে জুটি ভাঙেন স্টার্কই। ব্যাট চালানো নিয়ে দোটানায় থাকা কোহলিকেও টিকতে দেননি তিনি। একই ধরনের ডেলিভারিতে ক্যাচ যায় স্লিপে স্টিভেন স্মিথের হাতে। ৮ বলে ৭ রান আসে পার্থ টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে অপরাজিত সেঞ্চুরি হাঁকানো কোহলির ব্যাট থেকে। গিল ৫১ বলে ৩১ রান করে স্কট বোল্যান্ডের বলে এলবিডব্লিউয়ের ফাঁদে পড়েন।
৪ উইকেটে ৮২ রান দিয়ে দ্বিতীয় সেশন শুরু করা সফরকারীরা এরপর আর কোনো ভালো জুটি পায়নি। একাদশে ফেরা অধিনায়ক রোহিত শর্মাও বোল্যান্ডের শিকার হয়ে থিতু হতে পারেননি। ২৩ বলে করেন ৩ রান। রিশভ পান্তও লাফিয়ে ওঠা বলে কাটা পড়েন। ব্যাটের ওপরের অংশ ছুঁয়ে বল জমা পড়ে গালিতে মারনাস লাবুশেনের হাতে। ৩৫ বলে ২১ রান করা পান্তের হন্তারক অজি অধিনায়ক প্যাট কামিন্স।
সপ্তম উইকেট জুটিতে প্রতিরোধ গড়ার আশা জাগিয়েছিল ভারত। তবে ভেতরে ঢোকা ইয়র্কারে রবিচন্দ্রন অশ্বিনকে এগোতে দেননি স্টার্ক। ২২ বলে ২২ রান করেন তিনি। সম্ভাবনাময় জুটির ইতি ঘটে ৩২ রানে। ওই ওভারেই দুই বল পর হার্শিত রানাকে শূন্য রানে বোল্ড করে পঞ্চম উইকেটের স্বাদ নেন স্টার্ক।
অন্যপ্রান্তে কোনো স্বীকৃত ব্যাটার না থাকায় নিতিশ এরপর তেড়েফুঁড়ে রান বাড়ানোর চেষ্টা করতে থাকেন। মূলত তার কারণেই ১৮০ রান পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে ভারত। বোল্যান্ডের করা ইনিংসের ৪২তম ওভারে হাঁকান দুটি ছক্কা ও একটি চার। সব মিলিয়ে ওই ওভারে আসে ২১ রান।
ফের বড় শট খেলার চেষ্টায় নিতিশ শেষ ব্যাটার হিসেবে ট্রাভিস হেডের তালুবন্দি হন। দলের পক্ষে ৫৪ বলে সর্বোচ্চ ৪২ রান করেন তিনি। এর আগে জাসপ্রিত বুমরাহকে রানের খাতা খোলার আগেই বিদায় করে দেন অস্ট্রেলিয়ার দলনেতা প্যাট কামিন্স। মোহাম্মদ সিরাজ ৩ বল ৪ রানে অপরাজিত থাকেন।
Comments