সামরিক শাসন কায়েমের জেরে দ. কোরিয়ার প্রেসিডেন্টকে অভিশংসনের উদ্যোগ

দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট ইউন সুক ইওল সামরিক শাসন জারির ঘোষণা দেন
দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট ইউন সুক ইওল সামরিক শাসন জারির ঘোষণা দেন

দক্ষিণ কোরিয়ার পার্লামেন্টের আইনপ্রণেতারা দেশটির প্রেসিডেন্ট  ইউন সুক ইওলকে অভিশংসন করার উদ্যোগ নিয়েছেন। হঠাত করেই দেশে সামরিক শাসন জারি করে আবার কয়েক ঘণ্টা পর তা প্রত্যাহারও করে নেন ইওল। এতে দেশটিতে বড় আকারে রাজনৈতিক সঙ্কট দেখা দেয়।

আজ বুধবার এই তথ্য জানিয়েছে রয়টার্স।

মঙ্গলবার রাতে আকস্মিকভাবে সামরিক শাসন জারি করার ঘোষণা দেন ইওল। বিস্ময়কর এই সিদ্ধান্তে তার দলের নেতা-কর্মীরাও হতবাক হয়ে পড়েন।

জাতির উদ্দেশ্যে দেওয়া টেলিভিশন বার্তায় তিনি বলেন, উত্তর কোরিয়ার কমিউনিস্ট বাহিনী থেকে দেশকে রক্ষা ও রাষ্ট্রবিরোধী উপাদান নির্মূলের জন্য এই পদক্ষেপ জরুরি হয়ে পড়েছে।

তিনি একইসঙ্গে দেশে সব ধরনের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ ও গণমাধ্যমের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার চেষ্টা চালান, যা পার্লামেন্টের সদস্যরা নাকচ করেন। এতে দুই পক্ষের মধ্যে থমথমে পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। এক পর্যায়ে সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা সিউলের পার্লামেন্ট ভবনে প্রবেশ করে। 

আজ বুধবার বিরোধী দলের আইনপ্রণেতাদের একটি জোট জানিয়েছে তারা আজকেই পার্লামেন্টে ইওলকে অভিশংসন করার জন্য একটি বিল উত্থাপন করবেন এবং আগামী ৭২ ঘণ্টার মধ্যেই এ বিষয়ে সিদ্ধান্তের জন্য ভোটের আয়োজন হবে।

জোটের সদস্য হোয়াং উন-হা সাংবাদিকদের বলেন, 'শিগগির প্রেসিডেন্টের কার্যক্রম স্থগিত ও তাকে অভিশংসনের প্রস্তাব পাস করার দিকেই এখন পার্লামেন্টের নজর থাকা উচিত।'

অপরদিকে, ইওলের ক্ষমতাসীন দল পিপল পাওয়ার পার্টি প্রতিরক্ষামন্ত্রী কিম ইয়ং-হিয়নকে বরখাস্ত করার ও পুরো মন্ত্রিসভাকে পদত্যাগের আহ্বান জানিয়েছে।

মঙ্গলবার সামরিক শাসন কায়েমের নির্দেশ দেওয়ার পর পুরো দেশে গোলযোগ শুরু হয়। পথে নেমে এসে ক্ষোভ প্রকাশ করে সাধারণ মানুষ। দক্ষিণ কোরিয়ার মিত্ররাও সতর্ক অবস্থান বজায় রাখতে শুরু করে।

এ সময় হেলমেট পরিহিত সেনাসদস্যরা জানালা ভেঙে পার্লামেন্ট ভবনে প্রবেশ করেন। ভবনের ওপর হেলিকপ্টার উড়ছিল।

পার্লামেন্টের কিছু সহযোগী অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র স্প্রে করে সেনা সদস্যদের ভবনে প্রবেশে নিরুৎসাহিত করার চেষ্টা করেন। ভবনের বাইরে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে পুলিশের হাতাহাতি হয়। সব মিলিয়ে অরাজক ও নারকীয় পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।

সামরিক বাহিনী জানায়, পার্লামেন্ট ও সব রাজনৈতিক দলের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা হবে। গণমাধ্যম ও প্রকাশকরা সামরিক আইনের নিয়ন্ত্রণে পরিচালিত হবে।

কিন্তু এই ঘোষণার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই পার্লামেন্টে সর্বসম্মতিক্রমে সামরিক শাসন প্রত্যাহারের প্রস্তাব পাস হয়। সে সময় ৩০০ আসনের পার্লামেন্টে ১৯০ জন সদস্য উপস্থিত ছিলেন। ইওলের দলের ১৮ জন সদস্য উপস্থিত ছিলেন। তারাও সামরিক শাসন প্রত্যাহারের পক্ষে ভোট দেন।

এরপর বাধ্য হয়ে প্রেসিডেন্ট তার আগের ঘোষণা থেকে সরে আসেন।

এই সিদ্ধান্তে পার্লামেন্ট ভবনের বাইরে জমায়েত হওয়া বিক্ষোভকারীরা চিৎকার করে ও হাততালি দিয়ে উল্লাস করে। তারা বলতে থাকেন, 'আমরা জিতে গেছি'। এক বিক্ষোভকারী ড্রাম বাজাতে শুরু করেন।

দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট ইউন সুক ইওলের পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভ। ছবি: রয়টার্স
দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট ইউন সুক ইওলের পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভ। ছবি: রয়টার্স

আজ বুধবার দক্ষিণ কোরিয়ার সবচেয়ে বড় ট্রেড ইউনিয়ন সিউলে বড় একটি সমাবেশের ডাক দিয়েছে। ইউনিয়নের সদস্যরা ইওল পদত্যাগ না করা পর্যন্ত কর্মবিরতিতে থাকবেন বলে জানিয়েছেন। 

প্রধান বিরোধী দল ডেমোক্র্যাটিক পার্টি পৃথকভাবে ইওলকে পদত্যাগ করার আহ্বান জানিয়েছে। ২০২২ সাল থেকে ক্ষমতায় থাকা ইওল পদত্যাগ না করলে তাকে অভিশংসন করার হুমকি দিয়েছে দলটি।

১৯৮০ সালে সর্বশেষ দেশটির কোনো রাষ্ট্রপ্রধানকে অভিশংসনের মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছিল।

পার্লামেন্টের দুই তৃতীয়াংশের বেশি সদস্য অভিশংসনের পক্ষে ভোট দিলে একটি সাংবিধানিক আদালতে এ প্রস্তাব উত্থাপন করা হবে। শুনানি শেষে এই আদালতের নয় বিচারকের মধ্যে ছয় জন সম্মতি দিলে অভিশংসন কার্যকর হবে। 

পার্লামেন্টে ইওলের দলের আসনসংখ্যা ১০৮।

ইওল পদত্যাগ করলে বা তাকে সরিয়ে দেওয়া হলে ৬০ দিনের মধ্যে নতুন নির্বাচন আয়োজনের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। অন্তর্বর্তী সময়ে দেশপ্রধানের দায়িত্ব পালন করবেন প্রধানমন্ত্রী হান ডাক-সু।

Comments

The Daily Star  | English

Teknaf customs in limbo as 19 mt of rice, authorised by AA, reaches port

The consignment of rice weighing 19 metric tonnes arrived at Teknaf land port on Tuesday evening with the documents sealed and signed by the Arakan Army

3h ago