১২ বছর পর দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্টের জাপান সফর

টোকিও এসে পৌছিয়েছেন দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট ও তার স্ত্রী। ছবি: রয়টার্স
টোকিও এসে পৌছিয়েছেন দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট ও তার স্ত্রী। ছবি: রয়টার্স

দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট ইউন সুক ইওল এক ঐতিহাসিক সফরে জাপানের রাজধানী টোকিও পৌঁছেছেন। এর মাধ্যমে প্রায় ১২ বছর পর প্রথমবারের মতো দক্ষিণ কোরিয়ার কোনো রাষ্ট্রপ্রধান জাপানে এলেন। ইউনের টোকিও পৌঁছানোর কয়েক ঘণ্টা আগে কিম জংয়ের উত্তর কোরিয়া আবারও ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা চালায়।

আজ বৃহস্পতিবার বার্তাসংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা গেছে।

আজ বিকেলে জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদার সঙ্গে বৈঠক করবেন ইউন। এ বৈঠকের উদ্দেশ্য ২ দেশের মাঝে থাকা সব ধরনের বৈরিতার অবসান ঘটানো। ১৯১০ থেকে ১৯৪৫ পর্যন্ত কোরীয় উপদ্বীপ দখল করে রেখেছিল জাপান, যা অনেক তিক্ততার জন্ম দেয়।

ইউনের ফ্লাইটের আগে উত্তর কোরিয়া ১টি দূর পাল্লার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে, যেটি কোরীয় উপদ্বীপ ও জাপানের মাঝে অবস্থিত সাগরে এসে পড়ে।

বিশ্লেষকদের মতে, এ ঘটনায় আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও উত্তর কোরিয়ার হুমকি মোকাবিলার জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগে নেওয়ার গুরুত্ব আরও বেড়েছে।

বৈঠকে সরবরাহ শৃঙ্খল সংক্রান্ত সহযোগিতা নিয়ে ২ দেশের মাঝে আলোচনা হওয়ার কথা রয়েছে।

ইউন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের সঙ্গে সাক্ষাৎকারে উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক ও ক্ষেপণাস্ত্র হুমকি এবং সরবরাহ শৃঙ্খল বিঘ্নিত করার উদ্যোগকে বহুমুখী সংকট বলে অভিহিত করেন।

ইউন আরও জানান, তিনি ২ দেশের নিরাপত্তা সহযোগিতাকে আরও গতিশীল করতে চান এবং কিশিদার সঙ্গে ২০১৮ থেকে মূলতবি থাকা দ্বিপাক্ষিক নিরাপত্তা আলোচনা আবারো শুরুর প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

এছাড়াও, টোকিও ও সিউলের নেতারা নিয়মিত একে অপরের দেশ সফর করার প্রক্রিয়াও আবারো চালু করবে বলেও জানান তিনি।

তবে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের উন্নয়নে জাপান কিছুটা সতর্কতা অবলম্বন করছে। নাম না প্রকাশের শর্তে জাপান সরকারের এক কর্মকর্তা রয়টার্সকে বলেন, 'জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ার সম্পর্কের উন্নতি হচ্ছে। তবে এখনো এটি ধাপে ধাপে আগাচ্ছে'।

জাপানের সঙ্গে সম্পর্কের উন্নয়ন প্রসঙ্গে ইউন তার নিজের দেশে সমালোচনার মুখোমুখি হচ্ছেন। সম্প্রতি এক জরিপে দেখা গেছে, ৬৪ শতাংশ মানুষ মনে করে জাপানের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের উদ্যোগ নেওয়ার কোনো অর্থ নেই, যদি না কোরিয়া প্রসঙ্গে জাপানীদের মনোভাবে কোনো পরিবর্তন আসে। ৮৫ শতাংশ অংশগ্রহণকারী মনে করেন, বর্তমান জাপান সরকার দেশটির ঔপনিবেশিক অতীত নিয়ে ক্ষমা চাইতে প্রস্তুত নয়।

দক্ষিণ কোরিয়ার প্রধান বিরোধীদল ডেমোক্র্যাটিক পার্টির ফ্লোর লিডার পার্ক হং-কিউন জানান, ইউনের উচিৎ হবে জাপানের কাছ থেকে ক্ষমা ও ক্ষতিপূরণ আদায় করার ওপর জোর দেওয়া।

জাপানের বিরুদ্ধে কোরীয় নাগরিকদের দিয়ে জোর করে কাজ করানো, নারীদের পতিতাবৃত্তিতে বাধ্য করা ও বিতর্কিত ভূখণ্ডের দখল নেওয়ার সুস্পষ্ট অভিযোগ রয়েছে এবং দক্ষিণ কোরিয়ার জনগণ এসব অপরাধের জন্য জাপানের কাছে দীর্ঘদিন ধরে ক্ষতিপূরণ ও ক্ষমা প্রার্থনার দাবি জানিয়ে আসছে।

তবে গত সপ্তাহে হঠাত করে ইউন ঘোষণা দেন, যাদেরকে দিয়ে জোর করে কাজ করানো হয়েছিল, সেসব শ্রমিকদের সরকারের পক্ষ থেকে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে।

কিশিদা এই উদ্যোগকে স্বাগত জানান ও আশা প্রকাশ করেন, ইউনের সফরে ২ দেশের সম্পর্কের উন্নয়ন হবে।

নভেম্বরে আসিয়ানের বৈঠকের সাইডলাইনে ২ নেতা বৈঠক করেছিলেন।

সেসময় দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপান উত্তর কোরিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা নিয়ে হালনাগাদ গোয়েন্দা তথ্য বিনিময় করতে সম্মত হয়। 

জাপান জানিয়েছে, 'চীনের কাছ থেকে আসা কৌশলগত চ্যালেঞ্জ হচ্ছে জাপানের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ'।

টোকিও আশংকা প্রকাশ করে জানিয়েছে, রাশিয়া ইউক্রেনে হামলা করে একটি উদাহরণ সৃষ্টি করেছে, যা ভবিষ্যতে চীনকে তাইওয়ান আক্রমণ করতে উৎসাহিত করতে পারে।

Comments

The Daily Star  | English
Polytechnic students protest Bangladesh 2025

Polytechnic students issue 48-hr ultimatum over six-point demand

Threaten a long march to Dhaka if govt doesn't respond to demands

2h ago