নাহিদের তোপে উল্টো ১৮ রানের লিড বাংলাদেশের
প্রথম ইনিংসে মাত্র ১৬৪ রানে গুটিয়ে গিয়েছিল বাংলাদেশ। এরপর নিজেদের প্রথম ইনিংসে নেমে আগের দিনই এক উইকেটে ৭০ রান তুলে ফেলেছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। তাতে লিড নেওয়ার ভাবনা অলীকই ছিল টাইগারদের। সেই দুরূহ কাজ সম্ভব করতে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন তরুণ পেসার নাহিদ রানা। দুর্দান্ত বোলিং তুলে নিয়েছেন ক্যারিয়ারের প্রথম ফাইফার। তাতে পুড়ে ছারখার ক্যারিবিয়ানরা।
সোমবার জ্যামাইকার সাবিনা পার্কে সিরিজের দ্বিতীয় ও শেষ টেস্টে নিজেদের প্রথম ইনিংসে ১৪৬ রানে গুটিয়ে গেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। তাতে ১৮ রানের লিড পেয়েছে বাংলাদেশ।
তৃতীয় দিনের প্রথম সেশনেই সাত উইকেট তুলে লিডের আশা জাগায় বাংলাদেশ। আট উইকেট হারিয়ে তখন ধুঁকছিল স্বাগতিকরা। তবে ভয় ছিল প্রথম ইনিংসের মতো না আবার লেজের ব্যাটাররা পার্থক্য গড়ে দেন। তবে এদিন এমনটা হতে দেননি টাইগাররা। লাঞ্চের পর দ্বিতীয় ওভারেই ক্যারিবিয়ান শিবিরে আঘাত হানেন অধিনায়ক মেহেদী হাসান মিরাজ। এলবিডাব্লিউর ফাঁদে ফেলে ফিরিয়ে দেন শামার জোসেফকে। ১৫ বলে এক চারে ৬ রান করেন শামার।
এরপর উইকেটে নেমে নিজের দ্বিতীয় বলেই ছক্কা হাঁকিয়ে রান দ্রুত বাড়ানোর ইঙ্গিত দেন জেইডেন সিলস। তবে অপর প্রান্তে কেমার রোচকে ফিরিয়ে ক্যারিবিয়ান ইনিংসের সমাপ্তি করেন নাহিদ রানা। তুলে নেন ক্যারিয়ারের প্রথম ফাইফার। তার অফস্টাম্পের বাইরে থেকে ভেতরে ঢোকা বলে লাইন মিস করলে এলবিডাব্লিউর ফাঁদে পড়েন রোচ। রিভিউ নিয়েছিলেন তিনি। তবে লাভ হয়নি। আম্পায়ার্স কলে ফিরতে হয় তাকে। ৩১ বলে ৮ রান করেন তিনি। সিলস অপরাজিত থাকেন ৮ রানে।
বাংলাদেশের হয়ে সব বোলারই কম বেশি উইকেট পেয়েছেন। তবে ৬১ রানের খরচায় ৫ উইকেট নিয়ে সেরা বোলার নাহিদ। দুটি শিকার হাসান মাহমুদের।
এর আগে সকালে আগের দিনের এক উইকেটে ৭০ রান নিয়ে ব্যাটিংয়ে নামেন দুই ওপেনার ক্রেইগ ব্র্যাথওয়েট ও কেসি কার্টি। এদিনও দৃঢ়তার সঙ্গেই শুরু করে দিনের তৃতীয় ওভারেই পঞ্চাশ রানের জুটি পূর্ণ করেন তারা। তবে এ জুটি আরও ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠার আগেই ভাঙেন নাহিদ রানা। ফেরান ব্র্যাথওয়েটকে। তার বাউন্সার ব্যাকফুটে খেলতে গিয়ে ব্যাটের শোল্ডারে লেগে ক্যাচ যায় গালিতে থাকা বদলি ফিল্ডার জাকির হাসানের হাতে। তাতে ভাঙে ৬০ রানের জুটি। ১২৯ বলে তিনটি চারে ৩৯ রান করেন ক্যারিবিয়ান অধিনায়ক।
পরের ওভারে কাভেম হজকে ফেরান নাহিদ। তাকে উইকেটরক্ষক লিটন দাসের ক্যাচে পরিণত করেন। তবে ফিরতে পারতেন এক বল আগেই। পুল করতে গিয়ে আকাশে তুলে দিয়েছিলেন। দৌড়ে এসে সেই ক্যাচ লুফে নিতে পারেননি তাসকিন আহমেদ। তবে সে জীবন কাজে লাগাতে পারেননি। ১২ বলে ৩ রান করেন হজ। এরপর ক্যারিবিয়ান শিবিরে তোপ দাগান তাসকিন। প্রথম টেস্টে বাংলাদেশকে ভোগান্তিতে ফেলা আলিক আথানেজকে ফিরিয়ে স্বস্তি এনে দেন তিনি। অসাধারণ এক ডেলিভারিতে আথানেজকে বোল্ড করে দেন এই পেসার। ৯ বলে ২ রান করেন আথানেজ।
তাইজুল ইসলামও পান সাফল্য। ফেরান জাস্টিন গ্রেভসকে। তাইজুলের আগের বলটি টার্ন করায় এবারও এমন কিছু হবে ভেবেছিলেন। তবে বল সোজা গিয়ে আঘাত হানে স্টাম্পে। ৯ বলে ২ রান করে ফেরেন প্রথম টেস্টের সেঞ্চুরিয়ান। আর উইকেটরক্ষক জশুয়া ডি সিলভাকে এলবিডাব্লিউর ফাঁদে ফেলেন হাসান মাহমুদ। তার অফ স্টাম্পের বাইরে পরে ভেতরে ঢোকা ডেলিভারিতে ব্যাটার লাইন মিস করলে প্যাডে লাগলে আবেদনে সাড়া দেন আম্পায়ার। রিভিউ নিয়েছিলেন সিলভা। তবে আম্পায়ার্স কলে ফিরতে হয় তাকে। ৯ বলে ৫ রান করেন তিনি।
তবে এক প্রান্ত ঠিকই আগলে রাখেন কেসি কার্টি। ধৈর্যশীল ইনিংসে এগিয়ে যাচ্ছিলেন। তবে সফল রিভিউতে তাকে ফেরায় বাংলাদেশ। হাসান মাহমুদের লেগ স্টাম্পে রাখা বলে ফ্লিক করতে চেয়েছিলেন কার্টি। ব্যাটের কানা ছুঁয়ে চলে যায় উইকেটরক্ষক লিটনের গ্লাভসে। আবেদনে আম্পায়ার সাড়া না দিলে রিভিউ নেয় বাংলাদেশ। রিপ্লেতে দেখে যায় কিপারের গ্লাভসে যাওয়ার আগে ব্যাটের কানায় লাগে বল। ১১৫ বলে একটি চারের সাহায্যে ৪০ রান করেন কার্টি।
এরপর আলজারি জোসেফকে ফিরিয়ে নিজের চতুর্থ শিকার ধরেন নাহিদ। দারুণ এক স্লোয়ারে তাকে ছাঁটাই করেন তিনি। তার মন্থর গতির ফুলটস আগেভাগেই শট খেললে মিড অফে দাঁড়ানো মেহেদী হাসান মিরাজের ক্যাচে পরিণত হন আলজারি। ১০ বলে একটি চারের সাহায্যে ৭ রান করেন এই ব্যাটার।
Comments