রুশ আগ্রাসনে তীব্র শীতে বিদ্যুৎহীন ১০ লাখের বেশি ইউক্রেনীয়

অন্ধকারাচ্ছন্ন ইউক্রেনের কিয়েভের একটা ক্যাথেড্রাল। ছবি: এএফপি

বরফ শীতল আবহাওয়ায় ইউক্রেনের প্রায় দশ লাখেরও বেশি নাগরিক অন্ধকারে নিমজ্জিত। ইউক্রেনজুড়ে রাশিয়ার বড় আকারে ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় দেশটির বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থা কার্যত অচল হয়ে পড়েছে। বিদ্যুৎ সংকটে অনেক ঘর-বাড়ির হিটিং ব্যবস্থাও অকার্যকর হয়ে পড়েছে। 

আজ বৃহস্পতিবার বার্তাসংস্থা এএফপির প্রতিবেদনে এই তথ্য উঠে এসেছে। 

সাম্প্রতিক সময়ের মধ্যে, বিশেষ করে ২০২২ সালে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর সবচেয়ে কঠিন শীতের প্রস্তুতি নিচ্ছে ইউক্রেনীয়রা। যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশটিতে আকাশপথে হামলার পরিমাণ বাড়িয়েছে মস্কো। আবার স্থলপথে ইউক্রেনের পূর্ব সীমান্তে রুশ সেনাদের অগ্রগতিও অব্যাহত আছে। 

ইউক্রেনের বিদ্যুৎ সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান ইয়াসনোর প্রধান নির্বাহী সের্গেই কোভালেঙ্কো বলেন, 'শত্রুর আক্রমণে সারা দেশে ব্ল্যাকআউট দেখা দিয়েছে। এর শেষ কোথায়, তা আমরা জানি না।' 

তীব্র শীতে কষ্টে রাত পার করছেন ইউক্রেনীয়রা। ছবি: সংগৃহীত

প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির প্রধান সহকারী আন্দ্রেই ইয়ারমাক অভিযোগ করেন, ইউক্রেনের নাগরিকদের অন্ধকারে ফেলে দিয়ে তীব্র শীতে হিটারবঞ্চিত রাখতে 'সন্ত্রাসী কৌশল' অবলম্বন করছে রাশিয়া। 

তিনি বলেন, 'শীতে ইউক্রেনের অবকাঠামো ধ্বংস করার জন্য ক্ষেপণাস্ত্র মজুদ করেছিল রাশিয়া। তারা বেসামরিক জনগণকে ঠাণ্ডায় ভোগাতে চায়।' 

রুশ আক্রমণের তীব্রতা 

বৃহস্পতিবার ভোরে চালানো মিসাইল ও ড্রোন হামলায় ইউক্রেনের পশ্চিমাঞ্চলে ১০ লাখেরও বেশি গ্রাহক বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছেন। 

পশ্চিমের এই অঞ্চলগুলো ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও ন্যাটো সদস্য পোল্যান্ডের সীমান্তবর্তী। যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর এতদিন এই অঞ্চলে তেমন ড্রোন ও মিসাইল হামলা চালায়নি রাশিয়া। 

লভিভ অঞ্চলের প্রশাসনিক প্রধান ম্যাকসিম কজিৎস্কি জানান, এ মুহূর্তে লভিভ অঞ্চলে পাঁচ লাখ ২৩ হাজার গ্রাহক বিদ্যুৎহীন অবস্থায় আছে। 

রিভনে অঞ্চলে আরও দুই লাখ ৮০ হাজার এবং ভলিন অঞ্চলে দুই লাখ ১৫ হাজার গ্রাহক বিদ্যুৎ-বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। 

মোট ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ এখনো নির্ণয় করা হয়নি। রুশ ড্রোন হামলার পর রাজধানী কিয়েভ, উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় শহর খারকিভ এবং কৃষ্ণসাগরের বন্দর নগরী ওডেসাসহ বিভিন্ন অঞ্চলে বিদ্যুৎ বিভ্রাটের খবর পাওয়া গেছে। 

ইউক্রেনের জ্বালানি মন্ত্রণালয় থেকে বলা হয়েছে, 'বিদ্যুৎ ব্যবস্থা পুনঃস্থাপনের জন্য প্রকৌশলীরা কাজ শুরু করেছেন। পরিস্থিতি যেখানে নিরাপদ, সেখানে পুনর্গঠনের কাজ চলছে।' 

জ্বালানি মন্ত্রণালয় দাবি করে, চলতি বছরে ইউক্রেনের বেসামরিক বিদ্যুৎ অবকাঠামোর ওপর মোট ১১টি বড় হামলা চালিয়েছে রাশিয়া। 

ইউক্রেনে তাপমাত্রা ইতোমধ্যে শূন্য ডিগ্রির নিচে নেমে যাওয়ায় পরিস্থিতি আরও কঠিন হয়ে পড়েছে। জাতিসংঘের শীর্ষ কর্মকর্তা রোজমেরি ডিকারলো সম্প্রতি সতর্ক করেছেন, ইউক্রেনের জ্বালানি অবকাঠামোর ওপর রাশিয়ার হামলা চলতে থাকলে যুদ্ধ শুরুর পর এবার সবচেয়ে কঠিন শীতের মুখোমুখি হতে পারে ইউক্রেনীয়রা।

ক্ষেপণাস্ত্র উত্তেজনা তুঙ্গে 

এ মাসে বিদায়ী বাইডেন প্রশাসন রুশ ভূখণ্ডে হামলার অনুমতি দেওয়ার পর কিয়েভ অন্তত তিনটি ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে রাশিয়ার সীমান্তবর্তী এলাকায়।

এর জবাবে ইউক্রেনের ডনিপ্রো শহরে প্রথমবারের মতো হাইপারসনিক ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে মস্কো। সামনে পশ্চিমা দেশগুলোর উপর পারমাণবিক-ক্ষমতাসম্পন্ন ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করা হতে পারে বলেও হুশিয়ারি দিয়েছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।  

বুধবার নব-নির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প অবসরপ্রাপ্ত জেনারেল এবং তাঁর ঘনিষ্ঠ সহযোগী কিথ কেলগকে ইউক্রেনের দূত হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। এই যুদ্ধ বন্ধ করাই হবে তার প্রধান দায়িত্ব। 

ট্রাম্প বরাবরই ইউক্রেনে দেওয়া যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক সহায়তার সমালোচনা করে এসেছেন। ক্ষমতায় এলে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে যুদ্ধ থামিয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছেন। 

ইউক্রেন আশঙ্কা করছে, ট্রাম্প প্রশাসন তাদের রাশিয়া অধিকৃত ভূমি ছেড়ে দিতে বাধ্য করবে।  

এদিকে রুশ বাহিনীর একের পর এক অগ্রগতিতে উদ্বিগ্ন হয়ে বিদায়ী প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসন ইউক্রেনকে সেনা নিয়োগের সর্বনিম্ন বয়সসীমা ২৫ থেকে ১৮-তে নামিয়ে আনতে বাধ্য করেছে। 

ট্রাম্প প্রশাসন সম্ভাব্য যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব দেওয়ার আগে যুদ্ধক্ষেত্রে এগিয়ে যেতে দুই পক্ষই গত এক মাসে আক্রমণের মাত্রা বাড়িয়েছে। 

রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার রাতে রুশ ভূখণ্ডে ছোঁড়া ২৫টি ইউক্রেনীয় ড্রোন প্রতিরোধ করে তারা। 

Comments

The Daily Star  | English
challenges for police to regain public trust

Cops want own commission with sweeping powers

Independent body to end politicisation, nepotism, corruption

15h ago