হাসিনা সরকারের ‘মিথ্যা সিএসএ মামলা’য় বিমানবন্দরে হয়রানির অভিযোগ প্রবাসীর

মো. আব্দুল্লাহ ইউসূফ। ছবি: সংগৃহীত

জীবনের দীর্ঘ সময় অস্ট্রেলিয়ায় কাটানো প্রবাসী বাংলাদেশি মো. আব্দুল্লাহ ইউসূফ সম্প্রতি দেশে ফিরে হাসিনা সরকারের দায়ের করা একটি 'মিথ্যা মামলা'র কারণে বিমানবন্দরে হয়রানির শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন।

বিমানবন্দরের তিক্ত অভিজ্ঞতা সম্পর্কে দ্য ডেইলি স্টারের সঙ্গে আলাপকালে অস্ট্রেলিয়া থেকে প্রকাশিত 'সুপ্রভাত সিডনি'র প্রধান সম্পাদক এবং সিডনি প্রেস অ্যান্ড মিডিয়া কাউন্সিলের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট ইউসূফ জানান, ২০১৮ সালে তার নামে দায়ের করা সাইবার নিরাপত্তা আইনের একটি মামলার কারণে তাকে এই হয়রানি করা হয়।

তিনি বলেন, 'দীর্ঘ ১৪ বছর পর অস্ট্রেলিয়া থেকে দেশে ফিরলাম। গত ১৬ বছর ধরে স্বৈরাচারবিরোধী লেখা ও প্রতিবেদন নিয়মিত প্রকাশ করে আসছি প্রিন্ট ও ডিজিটাল মিডিয়া, অনলাইন টিভি ও ইউটিউব চ্যানেলে। ২০১৮ সালের এপ্রিলে শেখ হাসিনা অস্ট্রেলিয়ায় গেলে তার বিরুদ্ধে বিশাল বিক্ষোভের নেতৃত্ব দেই আমি। ওই সফর শেষে তিনি দেশে ফেরার পর আমার নামে মামলাটি হয়।'

ইউসূফ দাবি করেন, সিআইডি বাদি হয়ে রামপুরা থানায় মামলাটি করেছে এবং এই মামলার বিষয়ে তাকে কিছুই জানানো হয়নি।

বিমানবন্দরের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে তিনি বলেন, 'গত ৬ নভেম্বর রাত সাড়ে ৯টার দিকে ঢাকা বিমানবন্দরে নামার পর ইমিগ্রেশন থেকে আমাকে জানানো হয়, আমার নামে মামলা আছে এবং আমার দেশে ফেরার ক্ষেত্রে রেড অ্যালার্ট দেওয়া আছে। সিআইডি ক্লিয়ারেন্স না দিলে আমি বিমানবন্দর থেকে বের হতে পারব না।'

তিনি বলেন, 'আমাকে উপর তলায় ইমিগ্রেশন সুপারিন্টেন্ডেন্টের কাছে নেওয়া হয়। সেখানে সিআইডি থেকে একজন আসেন এবং আলাপচারিতার একপর্যায়ে আমাকে বলেন, আমাদের ক্লিয়ারেন্স ছাড়া আপনি যেতে পারবেন না; আমাদের কর্মকর্তারা আসুক, তারা এলে আপনাকে আদালতে নেওয়া হবে, কারাগারে নেওয়া হবে, নাকি আমাদের সদর দপ্তরে নেওয়া হবে সেই সিদ্ধান্ত নেবো।'

ইউসূফ জানান, তিনি সিআইডির ওই ব্যক্তির কাছে মামলার চার্জশিট বা অন্যান্য কাগজপত্র চাইলেও সেটা দেখাতে পারেননি।

তিনি আরও জানান, বিষয়টি ক্রমশ 'জটিল' হয়ে উঠলে বিষয়টি ম্যাসেজ দিয়ে জানান তারেক রহমান ও তার পিএস এবং দেশে-বিদেশে তার পরিচিত সিনিয়রদের। বেশিরভাগ জায়গা থেকে তিনি উত্তর পান। অস্ট্রেলিয়ায় বাংলাদেশি কাউন্সিলরা বিষয়টি তাদের মেয়রের মাধ্যমে অবগত করেন দেশটির ইমিগ্রেশন মিনিস্টার টনি বার্গকে। টনি বার্গ প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসকে বিষয়টি জানালে বিষয়টি সমাধানের উদ্যোগ নেওয়া হয়।

তিনি বলেন, 'একপর্যায়ে এনএসআইয়ের একজন উপ-পরিচালক আমাকে নিতে আসেন। তিনি তখন সুপারিন্টেন্ডেন্টকে বলেন, এটা মিথ্যা মামলা। সুপারিন্টেন্ডেন্ট তখন তার নিয়মের বিষয়টি তুলে ধরে বলেন, রেড অ্যালার্ট থাকায় আমরা সিআইডির ক্লিয়ারেন্স ছাড়া ছাড়তে পারিনি।'

'৭ নভেম্বর সকাল সাড়ে ১১টার দিকে আমাকে বের হতে দেওয়া হয়। সবমিলিয়ে আমাকে ১৪ ঘণ্টা বিমানবন্দরে আটকে রাখা হয়,' যোগ করেন ইউসূফ।

ঢাকার উত্তরায় পরিবারের সঙ্গে রয়েছেন ইউসূফ। অস্ট্রেলিয়া ফিরে যেতে পারে ১৫ ডিসেম্বর।

তার প্রত্যাশা, 'আমি চাই একজন প্রবাসীও যেন বিমানবন্দরে কোনো ধরনের হয়রানির শিকার না হয়। আমার বিষয়টি জানার পর বিভিন্ন দেশে অবস্থানরত বাংলাদেশি, যারা আওয়ামী লীগ সরকারের রোষানলে পড়ার কারণে নানা মিথ্যা মামলার আসামি হয়েছেন, তারা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তাদের ভয়, এখন দেশে ফিরলেও তাদের এমন হয়রানির মধ্য দিয়ে যেতে হতে পারে।'

বিষয়টি আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুলকে জানিয়েছেন এই প্রবাসী। পেয়েছেন তার জবাবও। সেখানে বলা হয়েছে, এসব মামলা তুলে নেওয়া হবে এবং কাউকে আর হয়রানি করা হবে না।

Comments

The Daily Star  | English
Chinese firms bullish on Bangladesh’s manmade fibre

Chinese firms bullish on Bangladesh’s manmade fibre

Non-cotton garments are particularly lucrative, fetching higher prices than traditional cottonwear for having better flexibility, durability

14h ago