মিরপুরের কাল্লু কাবাব ও শওকত কাবাবে একদিন  

মিরপুরের কাল্লু কাবাব ও শওকত কাবাব
ছবি: ইন্তিসাব শাহরিয়ার

আপনি কি জানেন ঢাকা শহরে প্রতিদিন ৮৭টি নতুন কাবাবের দোকান খোলা হয়?

কথাটি মিথ্যা হলেও আপনি প্রথমে বিশ্বাস করেছিলেন, তাই না? কারণ আজকাল দেখা যায় 'কাবাব ঘর' নামের আগে যেকোনো নাম বসিয়ে অসংখ্য দোকান গড়ে উঠছে। অথচ আগে ঢাকায় হাতে গোনা কয়েকটি মাত্র কাবাবের দোকান দেখা যেত।

কিছুদিন আগে মোহাম্মদপুরের বিখ্যাত সেলিম কাবাব ঘরে যাওয়া উপলক্ষে আমার পরিচিতজনদের মধ্যে বিভিন্ন প্রতিক্রিয়া দেখতে পাই। যদিও আমি 'এর থেকে ভালো কাবাব খেয়েছি' এবং 'তারা আর আগের মতো নেই' এ ধরনের কথাগুলো এড়িয়ে চলার চেষ্টা করি, তবে কিছু বন্ধুবান্ধব কয়েকটি জায়গার কথা বলল, যেখানকার কাবাবের স্বাদ নাকি মোহাম্মদপুরের বিখ্যাত এই কাবাবের দোকান থেকেও বেশ ভালো। অগত্যা এর সত্যতা যাচাই করতে চলে গেলাম সেখানে। এবারের গন্তব্য? মিরপুরের কাল্লু কাবাব ঘর এবং শওকত কাবাব ঘর।

মিরপুর বেনারসিপল্লীর শওকত কাবাব ঘর

মিরপুর ১০ এর মেট্রোরেল স্টেশন থেকে ৩০ টাকা রিকশা ভাড়া করে আপনি চলে যেতে পারবেন এই ৫৬ বছরের পুরোনো কাবাব ঘরে। এই দোকানের পরিবেশ আর বসার জায়গাগুলো একেবারে সাধারণ এবং কিছুটা মলিন বলা যায়। এখানকার পরিবেশের সঙ্গে আপনার খুব ফিটফাট সাজ মানাবে না।  এই কাবাব ঘরটিতে সবসময় ভিড় লেগেই থাকে, তাই এখানে গেলে অন্যদের সঙ্গে একই টেবিলে খাওয়ার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে।

কাবাব
ছবি: ইন্তিসাব শাহরিয়ার

শওকত কাবাব ঘরের খাবারের মধ্যে দুটি খাবার আমাকে অবশ্যই খেতে বলা অয়েছিল। যার মধ্যে ছিল তাদের চাপ এবং তাদের স্পেশাল 'ব্রেইন চপ'। আমরা তাই অর্ডার দিলাম, এর সঙ্গে দিলাম বিফ শিক কাবাব, যা আসলে ছিল বটি কাবাব। এটা দেখে আমি কিছুটা হতাশ হয়েছিলাম। দুঃখিত, এই জায়গা নিয়ে যারা প্রশংসা করেছেন তাদের বলতে হবে, এখানকার খাবার আমার মোটামুটি লেগেছে। চাপে মশলার ফ্লেভার আর ঘ্রাণ একেবারেই কম ছিল, আর মাংস খুব ভালো করে ভাজা হয়নি। শিক কাবাব আর বটি কাবাবের সংমিশ্রণে যা তৈরি করা হয়েছে সেটি খুব একটা ভালো লাগেনি। আমি মগজ খাই না। আমার বন্ধুর মতে, ব্রেইন চপ নামের খাবারটিও তার কাছে ভালো লাগেনি। এরকম মোটামুটি অভিজ্ঞতার জন্য লম্বা পথ পাড়ি দিয়ে হতাশ হয়েছিলাম কিছুটা। এবার দেখা যাক, পরবর্তী গন্তব্য আমাদের হতাশ করে কি না।

মিরপুর
ছবি: ইন্তিসাব শাহরিয়ার

বংশ পরম্পরার কাল্লু কাবাব ঘর

জেনে অবাক হবেন যে, এখানে শিক কাবাব বানানো হয় না এবং গত এক দশকে তারা কখনো শিক কাবাব বানায়নি। এটি শুনেই আমার আগ্রহ চলে গিয়েছিল। কাল্লু কাবাব ঘর মিরপুরে ১১তে অবস্থিত। শওকত কাবাব ঘর থেকে মাত্র ৩০ টাকা রিকশা ভাড়া। এখানকার বসার ব্যবস্থাও শওকত কাবাব ঘরের মতোই, সবসময় ভিড় লেগে থাকে। যিনি রান্নার কাজে ছিলেন তিনি এই ব্যবসার তৃতীয় প্রজন্ম। তার দাদা ৫৭ বছর আগে এই ব্যবসা শুরু করেছিলেন, তারপর তার বাবা এবং বর্তমানে তিনি এই ব্যবসার হাল ধরেছেন। আমি তার নাম জিজ্ঞেস করার চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু এত ভিড়ের মাঝে তারা ঠিকঠাক আমার অর্ডারই নিতে পারছিলেন না। তবে আপনারা নিশ্চয়ই তার নাম জানার বদলে খাবার নিয়ে জানতে বেশি আগ্রহী। তাদের মেনুতে ছিল বিভিন্ন চাপ, মগজ, কলিজা ইত্যাদি। তবে আমরা শুধু চাপ পেয়েছিলাম।

কাবাব
ছবি: ইন্তিসাব শাহরিয়ার

লম্বা সময় (বসার জায়গা পেতে এবং অর্ডার আসতে ৩৫ মিনিট) ধরে অপেক্ষার পড় যখন খাবার এসে পৌঁছালো তখন দেখা গেল আরেক সমস্যা। দুইটি চাপই ছিল তেলে চুপচুপে। পানির কলের মত টুপটুপ করে তেল পড়ছিল চাপ থেকে। তেলের অংশ বাদ দিয়ে মুরগির চাপটা খাওয়ার মতোই ছিল কিন্তু বিফ চাপের স্বাদ একেবারেই ভালো ছিল না। আমার কাছে মনে হয়েছে এটি ঠিকমতো রান্না হয়নি। খাওয়ার মাঝ পথেই উঠে গিয়ে বিল দিয়ে বেরিয়ে পড়েছিলাম।

বাসায় ফেরার পথে আমি চিন্তা করছিলাম আমারই কোথাও ভুল হচ্ছে কি না। তাই আমার এলাকার দুইটি কাবাবের দোকান- কাবাবওয়ালা ও কাবাব স্টেশন থেকে অর্ডার করলাম। বাসায় মেহমান আসার কথা ছিল তাই তাদের সঙ্গে আমার জন্যেও অর্ডার করলাম। বাসায় আসার পর তাদের কাবাব আর চাপ খেয়ে মুগ্ধ হয় গেলাম। কারণ মিরপুরের কাবাব আর চাপের থেকে এগুলো অনেক ভালো ছিল।

আমি ভেবেছিলাম মিরপুরের কাবাব খুব ভালো হবে। কিন্তু না, মোহাম্মদপুরের কাবাবের সঙ্গে তাদের তুলনা হয় না। সেদিন রাতের স্মরণীয় অভিজ্ঞতা ছিল প্রথমবার মেট্রোরেলে ভ্রমণ করা। মিরপুর মেট্রোরেল আর ফ্লাইওভারের জন্য বিখ্যাত হতে পারে, কিন্তু কাবাব ও চাপের জন্য একেবারেই নয় বলে মনে হয়েছে আমার।

 অনুবাদ করেছেন সৈয়দা সুবাহ আলম

 

Comments

The Daily Star  | English
fire at Secretariat

Secretariat fire sabotage or accident still not known: Fire service DG

Muhammad Jahed Kamal, director general of the Fire Service and Civil Defence, today said the cause of the devastating fire at Building No. 7 of the Bangladesh Secretariat still remains unknown

44m ago