ঢাকার যত ভুতুড়ে স্থান

ঢাকার ভূতুড়ে স্থান
ছবি: সাজ্জাদ ইবনে সাঈদ/স্টার

কথায় বলে, ঢাকা কখনো ঘুমায় না। ২ কোটি ২০ লাখ মানুষের ঢেউ, শ্বাসরুদ্ধকর ভিড়, কর্কশ হর্নের শব্দে ভরা যানজট আর বিশৃঙ্খল রাতের ঢাকা দেখলে যে কারো মনে হবে, এই শহরে আর যাই হোক ভূতের ভয় পাওয়ার জায়গা নেই।

তারপরেও, ছায়ারা কিন্তু ভিন্ন গল্প বলে।

এই শহরেরও আছে পৌরাণিক গল্প, গভীর রাতে ফিসফিস করে বলে যাওয়ার মতো গা ছমছমে সব কাহিনী। রাস্তাগুলোর নিচে চাপা পড়ে আছে অনেক ভয়ানক ইতিহাস, যা মনে করিয়ে দেয়, কেবল চোখে যেটুকু দেখা যায় ঢাকা সেটুকুতে সীমাবদ্ধ নয়। সময় ও কংক্রিটের নিচে চাপা পড়ে আছে বহু প্রাচীন আর অশুভ ঘটনা। রাস্তা, সুউচ্চ প্রাসাদ কিংবা নীরব পার্কগুলো নিজের ভেতর রহস্য নিয়ে ঠাঁই দাঁড়িয়ে আছে যেন।

এখন ঢাকার তেমনই কিছু স্থানের কথা বলব, যেখানে ইতিহাস নিজের চেতনা নিয়ে স্থির হয়ে আছে, যেখানে প্রতিটি পদক্ষেপেই উন্মোচিত হবে বিস্মৃত সব দুঃস্বপ্ন।

 

 

বাহাদুর শাহ পার্ক:  ফাঁসিতে ঝোলানো সেপাইদের কথা

১৮৫৭ সালে সিপাহী বিপ্লবের সময় যে বাঙালি সেপাইরা ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছিলেন তাদের মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছিল। সদরঘাটের কাছে বাহাদুর শাহ পার্কের গাছে তাদের ঝুলিয়ে রাখা হয়েছিল। ধীরে ধীরে তাদের শরীরগুলো পচে গলে যায়। অন্যদের কাছে সতর্কবার্তা পৌঁছে দিতেই দেওয়া হয়েছিল এই ভয়ঙ্কর শাস্তি।

পার্কটি এখন আর আগের মতো নেই। বহুবার সংস্কারের মধ্য দিয়ে গেছে। কিন্তু বাঙালি সেপাইদের সেই মৃত্যুযন্ত্রণা নিয়ে এখনও সেটি দাঁড়িয়ে আছে।

নানা সংস্কারের পরেও মৃত্যুর সেই দাগ, পার্কটি থেকে মুছে ফেলা যায়নি। এখনও ভোরবেলা যারা পার্কে হাঁটতে যান, তারা যেন কারও হাহাকার শুনতে পান। মনে হয়, পৃথিবীর নিচ থেকে উঠে আসছে যন্ত্রণারত কারও চাপা ফিসফিস।

বাহাদুর শাহ পার্ক
বাহাদুর শাহ পার্ক। ছবি: প্রবীর দাশ/স্টার

বিস্ময়কর সব কণ্ঠস্বর যেন ভেসে আসতে থাকে গাছের ফাঁক গলে। হয়তো ফারসি বা আরবি, যে ভাষায় এখন আর কথা বলে না কেউ।

বাহাদুর শাহ পার্কের কাছেই কলতাবাজারে বাস করেন মোহাম্মদ সাব্বির। তিনি বর্ণনা করলেন তার ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতা।

তিনি বলেন, 'এই পার্কটি সব অর্থেই অন্যরকম। একবার আমার দাদা গভীর রাতে বাড়ি ফেরার সময় একটি গাছে একজন সেপাইকে ঝুলতে দেখেছিলেন। যে ছাউনিটি দেখছেন, এর ওপরে কিছু দেখেছিলেন। এমন কিছু যা এই পৃথিবীর নয়। যা গাছের ডালে বসে অপেক্ষা করছিল আর দেখছিল।'

আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের ক্ল্যাসিক উপন্যাস চিলেকোঠার সেপাইতেও ভূতুড়ে বাহাদুর শাহ পার্কের কথা বলা হয়েছে।

বিমানবন্দর সড়ক: মহাসড়কজুড়ে ভয়ের রাজত্ব

ঢাকার বিমানবন্দর সড়কটি বেশ ঝলমলে। নিকুঞ্জ হয়ে খিলক্ষেত, কাওলা হয়ে শাহজালাল বিমানবন্দর হয়ে উত্তরা, বেশ মসৃণ পথচলা। ছাঁটাই করা গাছে ছেয়ে থাকা ডিভাইডার, প্রশস্ত ফুটপাত আর সুশোভিত আইল্যান্ডের দেখা মেলে এই পথে। কিন্তু সূর্য ডোবার পরেই এই রাস্তার চেহারা বদলে যায়।

যেহেতু সড়কটির কোল ঘেঁষে বাড়িঘরের সংখ্যা কম, তাই রাতের সঙ্গে সঙ্গে এটি নির্জন হতে শুরু করে। আর এই শূন্যতার মধ্যেই জেগে ওঠে ভয়াবহতা।

এই সড়ক নিয়ে চালকদের মধ্যে নানা গল্প প্রচলিত আছে। যেমন- রাতের বেলা মানুষের মতো আকৃতির কিছু একটার ছায়া দেখা যায়। হুট করেই যেটা কোথাও থেকে যেন আবির্ভূত হয়। চমকে উঠে যেই না ব্রেক চাপেন চালকেরা, সেই অনেকটা ধোঁয়ার মতো বাতাসে মিলিয়ে যায় ছায়ামূর্তি। মনে হয় যেন সামনে কিছু ছিলই না।

তবে যা রয়ে যায় তা হলো রাস্তার সঙ্গে টায়ারের ঘর্ষণের দাগ, কখনও ছড়িয়ে থাকে ভাঙা কাঁচের টুকরো, যা প্রমাণ দেয় ভয়াবহ কোনো দুর্ঘটনার। বিমানবন্দর সড়কের চালকদের কাছে এই ছায়ামূর্তিটি পৃথিবীতে আটকে থাকা এক অশুভ আত্মা। যার উদ্দেশ্য এই রাস্তার যাত্রীদের ক্ষতি করা।

ধানমন্ডি ২৭ এর অভিশপ্ত অ্যাপার্টমেন্ট

আপনি যদি ধানমন্ডি ২৭ এর মধ্যে দিয়ে যান, রাস্তার পাশে গড়ে ওঠা অ্যাপার্টমেন্ট ভবনগুলোর মধ্যে কোনো পার্থক্য দেখতে পাবেন না। কিন্তু একটু খেয়াল করলেই দেখবেন, একটি ভবনের দ্বিতীয় তলা খালি পড়ে আছে। সেখানে তাকালে মনে হবে, কিছু একটা ঠিক নেই। সেদিকে তাকালে মনের ভেতর এক ধরনের অস্বস্তি টের পাবেন আপনি।

স্থানীয় বাসিন্দা ও অক্সফোর্ড ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের এক শিক্ষার্থী বলেন, 'স্কুলে যাওয়া-আসার পথে প্রায়ই মনে হতো কেউ বুঝি আমাকে দেখছে। মনে হতো ওই খালি অ্যাপার্টমেন্টের জানালা দিয়ে কেউ আমাকে দেখছে। আর এই অনুভূতি ছিল হাড়-হিম করা।'

কথিত আছে, এক নারী ওই ফ্ল্যাটটিতে বাস করতেন এবং সেখানেই তিনি আত্মহত্যা করেন। এরপর থেকে তার অতৃপ্ত আত্মা সেখানেই ঘোরাফেরা করে, যা অনেকেই দেখেছেন। যারা অনেক সাহস করে ফ্ল্যাটটি ভাড়া নিয়ে থাকার চেষ্টা করেছেন, তারা কেউই বেশিদিন থাকতে পারেননি। তারা বলেছেন, ওই ফ্ল্যাটে বাস করলে অদ্ভুত এক অনুভূতি তাড়া করে, মনে কোনো শান্তি পাওয়া যায় না।

অনুবাদ করেছেন শেখ সিরাজুম রশীদ

 

Comments

The Daily Star  | English

Teknaf customs in limbo as 19 mt of rice, authorised by AA, reaches port

The consignment of rice weighing 19 metric tonnes arrived at Teknaf land port on Tuesday evening with the documents sealed and signed by the Arakan Army

1h ago