রউফের আগুন ঝরানো বোলিংয়ে অস্ট্রেলিয়াকে উড়িয়ে দিল পাকিস্তান

সতীর্থদের সঙ্গে হারিস রউফ (মাঝে)। ছবি: পিসিবি

আগুন ঝরানো হারিস রউফের নেতৃত্বে বোলারদের বেঁধে দেওয়া সুরে তাল মেলালেন দুই ওপেনার। অস্ট্রেলিয়াকে অল্প রানে অলআউট করার পর অনায়াসে লক্ষ্য তাড়ার কাজ সারলেন সাইম আইয়ুব ও আবদুল্লাহ শফিক। প্রথম ওয়ানডেতে আশা জাগিয়ে হারার ক্ষত সামলে বিশাল জয়ে তিন ম্যাচের সিরিজে সমতায় ফিরল পাকিস্তান।

শুক্রবার অ্যাডিলেডে দ্বিতীয় ওয়ানডেতে স্বাগতিকদের উড়িয়ে দিয়েছে মোহাম্মদ রিজওয়ানের দল। টস হেরে আগে ব্যাটিংয়ে নেমে মাত্র ৩৫ ওভারে ১৬৩ রানে গুটিয়ে যায় অজিরা। জবাবে ১৪১ বল হাতে রেখে ১ উইকেটে ১৬৯ রান তুলে জয় নিশ্চিত করে পাকিস্তান।

ঘাসের ছোঁয়া থাকা পিচে রউফ প্রবল গতি আর দারুণ সুইংয়ের সমন্বয়ে ৮ ওভারে ২৯ রান খরচায় নেন ৫ উইকেট। ৩৯ ওয়ানডের ক্যারিয়ারে দ্বিতীয়বারের মতো ৫ উইকেটের স্বাদ নিয়ে ম্যাচসেরা হন তিনি। শাহিন শাহ আফ্রিদি তাকে যোগ্য সঙ্গ দেন ৮ ওভারে ২৬ রানে ৩ উইকেট শিকার করে। একটি করে উইকেট যায় নাসিম শাহ ও মোহাম্মদ হাসনাইনের ঝুলিতে। অর্থাৎ সফরকারীদের চার পেসার মিলে ধসিয়ে দেন অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটিং।

প্রতিপক্ষকে ম্যাচে ফেরার কোনো উপায় না দিয়ে ১৩৭ রানের উদ্বোধনী জুটি গড়ে পাকিস্তান। ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় ওয়ানডে খেলতে নামা সাইম খেলেন ৮২ রানের আগ্রাসী ইনিংস। ৭১ বল মোকাবিলায় ৫টি চার ও ৬টি ছক্কা হাঁকান তিনি। আরেক ওপেনার শফিক ৬৯ বলে ৪টি চার ও ৩টি ছক্কায় ৬৪ রানে অপরাজিত থাকেন। ছক্কা মেরে খেলা শেষ করা বাবর আজম করেন ২০ বলে অপরাজিত ১৫ রান।

রান তাড়ায় পাকিস্তান দেখেশুনে শুরু করে। ৯ ওভার শেষে স্কোরবোর্ডে তারা জমা করে ৩৯ রান। দশম ওভারের শেষ দুই বলে জশ হ্যাজেলউডকে টানা চার মারেন শফিক। পরের ওভারে অস্ট্রেলিয়া দলনেতা প্যাট কামিন্সকে ছক্কা মেরে খোলস ভাঙেন সাইম। দ্বাদশ ওভারে তার তাণ্ডবের শিকার হন মিচেল স্টার্ক। একটি ছক্কা ও দুটি চারসহ ওই ওভারে আসে ১৪ রান।

এক পর্যায়ে ৩১ বলে সাইমের রান ছিল ১৫। এরপর আক্রমণাত্মক হয়ে ২২ বছর বয়সী তরুণ বাঁহাতি ব্যাটার ফিফটিতে পৌঁছান ৫২ বলেই। ৪৭ রানে থাকাকালীন অবশ্য জীবন পান তিনি। থার্ড ম্যানে তার ক্যাচ ফেলে দেন অ্যাডাম জ্যাম্পা। সাইম দ্রুত রান আনতে থাকায় ১৬তম ওভারেই দলীয় শতরান পূর্ণ হয় পাকিস্তানের। জয় হয়ে পড়ে স্রেফ সময়ের ব্যাপার।

২১তম ওভারে সাইমের আগ্রাসন থামান লেগ স্পিনার জ্যাম্পা। ডাউন দ্য উইকেটে গিয়ে বল ওড়ানোর চেষ্টায় হ্যাজেলউডের তালুবন্দি হন তিনি। সাইম সেঞ্চুরিবঞ্চিত হওয়ার পর হাফসেঞ্চুরি করেন সাবলীল ছন্দে খেলতে থাকা শফিক। সেজন্য তার লাগে ৫৭ বল। এরপর আর কোনো বিপদ ঘটেনি। বাবরকে নিয়ে দলকে লক্ষ্যে পৌঁছে দেন শফিক।

এর আগে রউফের তোপের মুখে ব্যাটিং ধস ঘটে অস্ট্রেলিয়ার। ২ উইকেটে ৭৯ রান থেকে দেড়শ পেরিয়ে গুটিয়ে যায় তারা। ভালো কোনো জুটি হয়নি তাদের। তৃতীয় উইকেটে সর্বোচ্চ ৩৮ রান যোগ করেন স্টিভেন স্মিথ ও জশ ইংলিস। অজিদের আট ব্যাটার স্পর্শ করেন দুই অঙ্ক। কিন্তু বিশের ঘরে যেতে পারেন কেবল স্মিথ। তিনি ৪৮ বলে সর্বোচ্চ ৩৫ রান করেন ৫টি চার ও ১টি ছক্কায়।

রউফ আক্রমণে যাওয়ার আগে দুই ওপেনার জেক ফ্রেজার-ম্যাকগার্ক ও ম্যাথু শর্টকে বিদায় করেন শাহিন। এরপর ইংলিসকে ফিরিয়ে অজিদের প্রতিরোধের আশায় জল ঢেলে দেন রউফ। নিজের পরের ওভারে মারনাস লাবুশেন হন তার দ্বিতীয় শিকার। একপ্রান্ত আগলে থাকা স্মিথ কাটা পড়েন হাসনাইনের বলে।

পরপর দুই ওভারে অ্যারন হার্ডি ও গ্লেন ম্যাক্সওয়েলকে তুলে নেওয়ার পর কামিন্সকে আউট করে ৫ উইকেট পূরণ করেন রউফ। মাঝে নাসিম সাজঘরে পাঠান স্টার্ককে। সবশেষ জ্যাম্পাকে বিদায় করে অস্ট্রেলিয়ার ইনিংস মুড়িয়ে দেন শাহিন।

পাকাপাকিভাবে নেতৃত্ব পাওয়ার পর প্রথম জয়ের দিনে স্মরণীয় কীর্তি গড়েন রিজওয়ান। ছয়টি ক্যাচ নেন তিনি। ওয়ানডে ক্রিকেটের ইতিহাসে কোনো ম্যাচে একজন উইকেটকিপারের সবচেয়ে বেশি ক্যাচ নেওয়ার বিশ্বরেকর্ড স্পর্শ করেন। শেষদিকে নাসিমের বলে জ্যাম্পার ক্যাচ মিস না করলে এককভাবে চূড়ায় উঠে যেতে পারতেন তিনি। ওয়ানডেতে সব মিলিয়ে এটি কোনো উইকেটরক্ষকের ছয়টি ক্যাচ নেওয়ার সপ্তদশ ঘটনা।

Comments

The Daily Star  | English
The Indian media and Bangladesh-India relations

The Indian media and Bangladesh-India relations

The bilateral relationship must be based on a "win-win" policy, rooted in mutual respect, non-hegemony, and the pursuit of shared prosperity and deeper understanding.

8h ago