‘ভাত দেন, না হয় পর্যটন স্পট খুলে দেন’

বান্দরবান। ছবি: স্টার

নৈসর্গিক প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি বান্দরবানের সৌন্দর্য উপভোগ করতে ভ্রমণপিপাসুরা সারাবছর উন্মুখ হয়ে থাকেন শীতের আগমনের জন্য। পরিবার-পরিজন, সবান্ধবে দলবল নিয়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে তাদের গন্তব্য থাকে বান্দরবান।

বান্দরবানের চিম্বুক, নীলগিরি, জীবননগর, ডিম পাহাড়, তাজিনডং, কেউকারাডং পাহাড়ের চূড়া থেকে দেখলে মনে হবে যেন পৃথিবীতে নয়, শান্তিময় কোনো এক গ্রহ। সাদা মেঘের নীলাকাশ ও সবুজ পাহাড়ের দৃশ্য দেখার সুযোগ থাকায় পর্যটন মৌসুমসহ সারা বছর দেশি-বিদেশি পর্যটকদের ভিড় লেগেই থাকে বান্দরবানে।

কিন্তু সম্প্রতি কিছু বিশৃঙ্খলা ও অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার কারণে নিরাপত্তার বিষয়টিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়ায় জেলা প্রশাসন ও বিভিন্ন নিরাপত্তা সংস্থার পক্ষ থেকে দীর্ঘদিন ধরে এ জেলায় পর্যটক আগমনে নিরুৎসাহিত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

বান্দরবান। ছবি: স্টার

এ কারণে পাহাড়ের নৈসর্গিক প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে যেতে পারছেন না পর্যটক। এতে পর্যটন ব্যবসার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট হোটেল, মোটেল, রিসোর্টগুলো বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে।

জেলার হোটেল ও রেস্টুরেন্ট মালিক সমিতির সভাপতি গিয়াস উদ্দিন মাস্টার দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'বিগত বছরগুলোর মতো জেলায় পর্যটকদের আগমন না থাকায় জেলা সদরের প্রায় ২০টির মতো রেস্টুরেন্ট বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়ে পড়েছে। এ ছাড়াও পর্যটন-সংশ্লিষ্ট যেসব ব্যবসা আছে, সেগুলো অনেক আগেই পথে বসে গেছে।'

জেলার আবাসিক হোটেল-মোটেল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক জসিম উদ্দিন ডেইলি স্টারকে জানান, একটি হোটেল বা মোটেলে পানি, বিদ্যুৎ থেকে শুরু করে দৈনিক ও মাসিক যত খরচ হয়, পর্যটক না আসায় খরচ সামলাতে না পারায় অনেক হোটেল বন্ধ হয়ে গেছে। অনেকগুলোর মালিকানা পরিবর্তন হয়েছে।

জেলা সদরের নীলাচল, মেঘলা, শৈলপ্রপাত, স্বর্ণজাদী, রামজাদী, প্রান্তিক লেক, মিলনছড়ি,  গোল্ডেন বৌদ্ধ বিহার, রুমা উপজেলায় তাজিংডং, বগা লেক, কেউক্রাডং, রিজুক ঝরনা, চিম্বুক ভ্যালি ও থানচির নীলগিরি, চিম্বুক, তমাতুন্সী, জীবননগর, ডিম পাহাড়, বংড পাথর, রেমাক্রি ফলস, নাফাকুম, হাইল্যান্ড পার্ক রিসোর্ট, নীল দিগন্ত, সবুজ পাহাড়বেষ্টিত সাঙ্গু নদীর জলস্রোত, রোয়াংছড়ি উপজেলার নাই অইং বা দেবতাখুম বান্দরবানের প্রধান পর্যটনকেন্দ্র।

সম্প্রতি সরেজমিনে কয়েকটি পর্যটনস্পটে গিয়ে দেখা যায়, পর্যটন মৌসুমকে সামনে রেখে স্পটগুলোতে পর্যটকদের বরণ করে নিতে বিভিন্ন পরিকল্পনা ও আয়োজনের প্রস্তুতি চলছে।

মানববন্ধন। ছবি: স্টার

তিন্দু বাজার ঘাটে বসানো হয়েছে পর্যটকের জন্য টংঘর ও অস্থায়ী কটেজ, আদিবাসীদের রান্নার বিভিন্ন খাবার হোটেল। রেমাক্রি ফলসের মুখে বালুর চরে দেখা মিলেছে একই চিত্র।

পর্যটকদের জন্য নদীর পাড়ে নির্মাণাধীন টংঘরের মালিক হ্লচিংমং ও ঙুইএং ম্রো ডেইলি স্টারকে জানান, 'শীতকাল এলেই পর্যটকরা আসেন। রাতে সাঙ্গু নদীর কিনারে টং ঘরগুলোতে রাতযাপন করেন। তাই পর্যটকদের সুবিধার কথা মাথায় রেখে বানিয়েছি। কিন্তু পর্যটক আসবে কিনা জানি না।'

বংড পাথরের উপর ক্যাহ্পাজা স্রংয়ের দোকানদার থুইলুং খুমী বলেন, 'পর্যটক এলে আমাদের হাতে কিছু টাকা আসে। আমাদের জুমের ও বাগানের বিভিন্ন ফলমূল ন্যায্যদামে বিক্রি করতে পারি। ছেলেমেয়েদের পড়ালেখার খরচ চালাতে পারি।'

পর্যটক গাইড ও নৌকাচালক চপ্রুঅং মারমা, প্রকাশ কান্তি দাশ ও বীরবাহাদুর ত্রিপুরা জানান, থানচি, তিন্দু, রেমাক্রি, মোদক এলাকার যুবসমাজের আদিবাসী-বাঙালি অধিকাংশ যুবক পর্যটন শিল্পের সঙ্গে জড়িত। পর্যটক না আসা মানেই ৯০ শতাংশ যুবকের রোজগার বন্ধ।

তারা বলেন, 'পর্যটন চালু থাকলে যুবকরা ব্যস্ত থাকে।'

বান্দরবান। ছবি: স্টার

থানচি উপজেলার গাইড ও বোট সমিতির সদস্যরা পর্যটন স্পটগুলো খোলার দাবি জানিয়ে বলেন, উপজেলার সব পর্যটনস্পট খোলা থাকলে পর্যটক আসবে। পর্যটক এলে পর্যটন শিল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবার ব্যবসা থেকে শুরু করে সবকিছুই সচল হয়, পরিবার ভালো থাকে।

বান্দরবানের পর্যটন সচল রাখতে গত সোমবার জেলা প্রশাসককে চিঠি দেয় জেলার পর্যটন ব্যবসায়ীদের সংগঠন।

এদিকে সব পর্যটকের জন্য আগামী ১ নভেম্বর থেকে রাঙ্গামাটি ও ৫ নভেম্বর থেকে খাগড়াছড়ি খুলে দেওয়া হচ্ছে। পর্যায়ক্রমে বান্দরবানও খুলে দেওয়া হবে বলে সোমবার জানিয়েছেন পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা।

কিন্তু এখন পর্যন্ত বান্দরবানের বিষয়ে কোনো ঘোষণা না আসায় হতাশা প্রকাশ করেছেন ব্যবসায়ীরা।

জেলার পর্যটন শিল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী, নিরাপত্তা সংস্থা, সাংবাদিক ও সুশীল সমাজের নেতাদের সঙ্গে পর্যটনস্পট খুলে দেওয়া ও ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা তুলে দেওয়ার বিষয়ে গতকাল বুধবার উন্মুক্ত আলোচনায় বসেন জেলা প্রশাসক শাহ্ মোজাহিদ উদ্দিন।

একই সময়ে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে 'ভাত দেন না হয় পর্যটন স্পট খুলে দেন' ব্যানার নিয়ে মানববন্ধন করেন হোটেল-রেস্টুরেন্টের শ্রমিক, সিএনজিচালিত অটোরিকশা-ইজিবাইকের চালকসহ শত শত পর্যটন সংশ্লিষ্ট কর্মী।

তবে জেলা প্রশাসনের সঙ্গে ওই সভায় সবার সম্মতিতে আগামী ৭-১০ দিনের মধ্যে বান্দরবানের সব পর্যটনকেন্দ্রগুলো খুলে দেওয়ার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে বলে সভায় উপস্থিত ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন।

Comments

The Daily Star  | English

US retailers lean on suppliers to absorb tariffs

Rather than absorbing the cost or immediately passing it on to consumers, many US apparel retailers and brands have turned to their suppliers in Bangladesh, demanding they share the pain

1h ago