যুক্তরাষ্ট্র-কানাডা সফর শেষে দেশে ফিরলেন সেনাপ্রধান

ছবি: আইএসপিআরের সৌজন্যে

যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডা সফর শেষে দেশে ফিরেছেন সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান।

আজ শুক্রবার রাতে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানিয়েছে।

সফরকালে সেনাপ্রধান জাতিসংঘ সদর দপ্তরে শান্তিরক্ষা মিশন সংশ্লিষ্ট গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি, যুক্তরাষ্ট্রের সেনাপ্রধান, উচ্চপদস্থ সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তা এবং কানাডার উচ্চপদস্থ সামরিক-বেসামরিক কর্মকর্তা ও ব্যক্তিদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।

আইএসপিআর জানায়, গত ১৭ অক্টোবর জাতিসংঘ সদর দপ্তরে সেনাপ্রধান জাতিসংঘের ডিপার্টমেন্ট অব পিস অপারেশনস বিভাগের আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল জেয়ান পিয়ারি ল্যাকরোয়িক্স, ডিপার্টমেন্ট অব অপারেশনাল সাপোর্ট বিভাগের আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল অতুল খের, জাতিসংঘের মানবাধিকার সংক্রান্ত হাইকমিশনের অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি জেনারেল ইলজে ব্রান্ডস খেরিস, আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল, ডিপার্টমেন্ট অব পলিটিক্যাল ও পিস বিল্ডিং অ্যাফেয়ার্সের পক্ষে মধ্যপ্রাচ্য, এশিয়া ও প্যাসিফিক বিষয়ক অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি জেনারেল মোহাম্মেদ খালেদ খিয়ারি এবং ডিরেক্টর অব অফিস ফর পিস কিপিং স্ট্রাটেজিক পার্টনারশিপ জেনারেল জাই মেননের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করেন।

এ সময় তারা বাংলাদেশি শান্তিরক্ষী, বিশেষ করে সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের শান্তিরক্ষা কার্যক্রমের ভূয়সী প্রশংসা করেন।

সেনাপ্রধান জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীদের অংশগ্রহণ বৃদ্ধি এবং নীতি নির্ধারণী, ফোর্স কমান্ড পর্যায়ে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব বাড়ানোর ওপর গুরুত্বারোপ করেন।

পাশাপাশি, র‌্যাব ফোর্সেসে প্রেষণে নিয়োজিত থাকাকালীন সেনাবাহিনীর সদস্যদের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ প্রমাণিত হলে তাদের শান্তিরক্ষা মিশনে নির্বাচিত না করার বিষয়ে অবহিত করেন।

বাংলাদেশের চলমান পরিস্থিতিতে অন্তর্বর্তী সরকারের দিকনির্দেশনা অনুযায়ী বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর চলমান কর্মকাণ্ডের ওপর আলোকপাত করেন সেনাপ্রধান।

পাশাপাশি তিনি বাংলাদেশ সরকার এবং সেনাবাহিনীর পার্বত্য চট্টগ্রামে আর্থ-সামাজিক ও শান্তি-শৃঙ্খলার উন্নয়নে নেওয়া নানামুখী ইতিবাচক দিক তুলে ধরেন। তিনি বিভিন্ন শান্তিরক্ষা মিশনে নিয়োজিত বাংলাদেশি শান্তিরক্ষী কন্টিনজেন্টসমূহ কর্তৃক স্থানীয় জনগণের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতে হাসপাতাল ও ক্লিনিক পরিচালনার বিষয়ও তাদের অবগত করেন।

মিশনে অংশ নেওয়া দেশগুলোর মধ্যে শান্তিরক্ষা বিষয়ক প্রশিক্ষণ বিনিময়, আভিযানিক সক্ষমতা বৃদ্ধিসহ মিশন সংক্রান্ত অন্যান্য বিষয়াদি গুরুত্বের সঙ্গে আলোচিত হয়।

সেনাপ্রধান জাতিসংঘের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বিশ্ব শান্তিরক্ষায় বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীদের জোরালো ভূমিকা ও সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেন।

সেনাপ্রধান ওয়াকার-উজ-জামান নিউইয়র্কে অবস্থিত বাংলাদেশের স্থায়ী মিশন পরিদর্শন করেন এবং স্থায়ী প্রতিনিধির সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন।

গত ২২ অক্টোবর সেনাপ্রধান ওয়াশিংটন ডিসির পেন্টাগনে যুক্তরাষ্ট্রের চিফ অব স্টাফ অব দ্য আর্মি জেনারেল র্যান্ডি এ জর্জের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ ও আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন।

তারা দুই দেশের সেনাবাহিনীর স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়, বিশেষ করে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশন, প্রশিক্ষণ সহায়তা, দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক উন্নয়ন ও পারস্পরিক আস্থা সৃষ্টি, আঞ্চলিক নিরাপত্তা বিষয়ে পারস্পরিক সহযোগিতা, দুর্যোগ পরবর্তী মানবিক সহায়তা, যৌথ প্রশিক্ষণ সংক্রান্ত বিষয়াদি আলোচনা করেন। এ সময় যুক্তরাষ্ট্রের সেনাপ্রধানের বৈদেশিক নীতি বিষয়ক উপদেষ্টা উপস্থিত ছিলেন।

এছাড়াও, সেনাবাহিনী প্রধান যুক্তরাষ্ট্রের সেক্রেটারি অব ডিফেন্স অফিসের ইন্দো-প্যাসিফিক নিরাপত্তা বিষয়ক সহকারী সামরিক সচিব ড. এলি রাটনারের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। এ সময়ে ইন্দো-প্যাসিফিক দেশগুলো এবং বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর মধ্যে সম্পর্ক আরও সুদৃঢ় করা এবং পারস্পরিক সহযোগিতা বৃদ্ধি ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা হয়।

সাক্ষাৎকালে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের বিশেষ সহকারী এবং দক্ষিণ এশিয়া সংক্রান্ত জ্যেষ্ঠ পরিচালক লিন্ডসে ডব্লিউ ফোর্ডসহ জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের দক্ষিণ এশিয়া সংক্রান্ত উচ্চপদস্থ সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তারাও উপস্থিত ছিলেন।

সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্টের সহকারী সচিব ডোনাল্ড ল্যুর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। সাক্ষাৎকালে তিনি বাংলাদেশের সামগ্রিক নিরাপত্তা পরিস্থিতি এবং সরকারের সমর্থনে সেনাবাহিনীর বিবিধ কার্যকলাপ সম্পর্কে অবহিত করেন। বৈঠকে স্টেট ডিপার্টমেন্টের অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

কানাডা সফরকালে সেনাপ্রধান ভাইস চিফ অব কানাডিয়ান ডিফেন্স স্টাফ লেফটেন্যান্ট জেনারেল স্টিফেন আর কেলসির সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন।

সাক্ষাৎকালে তিনি বাংলাদেশি শিক্ষার্থী, কর্মরত ও অবসরপ্রাপ্ত সামরিক বাহিনীর সদস্যদের জন্য ভিসা প্রক্রিয়া সহজতর করার জন্য কথা বলেন। তিনি প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে সহযোগিতা জোরদার করা বিশেষ করে সামরিক প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে প্রশিক্ষনার্থী বিনিময়ের কথা উল্লেখ করেন।

এছাড়াও, কানাডিয়ান পার্লামেন্টের নাগরিকত্ব ও ইমিগ্রেশন বিষয়ক স্ট্যান্ডিং কমিটির সদস্য সালমা জাহিদ সেনাপ্রধানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। সাক্ষাৎকালে তারা দুদেশের পারস্পরিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলেন।

সেনাপ্রধান বিশেষত শিক্ষার্থী এবং কর্মরত ও অবসরপ্রাপ্ত সামরিক কর্মকর্তাদের ভিসা প্রক্রিয়া সহজ করা, শিক্ষা বিনিময়ের জন্য বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে এমওইউ স্বাক্ষর, কৃষি ও অবকাঠামো উন্নয়নসহ পরিচর্যাকারী পাঠানোর মাধ্যমে স্বাস্থ্যখাতে সহযোগিতার বিষয়ে গুরুত্বারোপ করেন।

এ ছাড়া, বাংলাদেশে মনোনীত কানাডার হাইকমিশনার এইচই অজিত সিং এবং কানাডায় বাংলাদেশের হাইকমিশনার নাহিদা সোবহান সেনাপ্রধানের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন।

উল্লেখ্য, সেনাপ্রধান গত ১৫ অক্টোবর সরকারি সফরে যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডা গিয়েছিলেন।

Comments

The Daily Star  | English

Nowfel gained from illegal tobacco trade

Former education minister Mohibul Hassan Chowdhury Nowfel received at least Tk 3 crore from a tobacco company, known for years for illegal cigarette production and marketing including some counterfeit foreign brands. 

2h ago