যে ৫ কারণে পুরান ঢাকা ভ্রমণ করা উচিত
পুরান ঢাকায় পা দেওয়ামাত্র আপনার মনে হবে, আপনি এমন কোনো যাদুঘরে চলে এসেছেন যেটা জীবন্ত, রীতিমতো নিঃশ্বাস নেয়। যে যাদুঘর ইতিহাস, সংস্কৃতি আর অসাধারণ সব স্বাদে পরিপূর্ণ। এখানে প্রতিটি অলি-গলির আলাদা গল্প আছে, আছে জীবনের আলাদা অর্থ। প্রতিটি ভবন যেন ইতিহাসের অবশিষ্টাংশ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
আপনি একজন কৌতুহলী পর্যটক হন কিংবা যদি হন শিকড়ের খোঁজে পথে নামা কেউ, তাহলে পুরান ঢাকার কিছু অভিজ্ঞার মধ্য দিয়ে আপনার অবশ্যই যাওয়া উচিত।
এখানে পুরান ঢাকার পাঁচটি অসাধারণ অভিজ্ঞতার কথা বলব, যা আপনাকে ঢাকার এই অংশের প্রেমে পড়তে বাধ্য করবে।
বলধা গার্ডেনের আনন্দ
শহরের কোলাহল এগিয়ে শান্ত পরিবেশে কিছুক্ষণ ঘুরতে চাইলে পুরান ঢাকার বলধা গার্ডেনের বিকল্প নেই। এটি তুলনামূলক কম জনপ্রিয় উদ্যান। এই উদ্যানে আছে ঐতিহাসিক জয় হাউজ, যেখানে বসে রবীন্দ্রনাথ লিখেছিলেন তার ক্যামেলিয়া কবিতাটি।
বলধা গার্ডেনে গেলে দেখতে পাবেন দুষ্প্রাপ্য দেশি-বিদেশি বিভিন্ন গাছ, যেমন অ্যামাজন লিলি, ভোজপত্র এবং বিভিন্ন ধরনের ক্যাকটাস ও সাকুলেন্ট। এই শান্ত উদ্যানে ভ্রমণ কেবল মনকেই শান্তি দেবে না, সেইসঙ্গে জানতে পারবেন সাহিত্য ও উদ্ভিদবিজ্ঞান বিষয়ক নানা ইতিহাসও।
ঋষিকেশ দাস রোড ধরে হেঁটে যাওয়া
পুরান ঢাকায় আপনার অ্যাডভেঞ্চার শুরু হতে পারে ঋষিকেশ দাস রোড ধরে হেঁটে যাওয়ার মধ্য দিয়ে। ছবির মতো মনোরম এই সড়কের দুই ধারে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে আছে প্রায় এক শতাব্দি আগে অর্থাৎ ব্রিটিশ আমলে তৈরি ভবন।
এই পথ ধরে হেঁটে যেতে যেতে আপনি দেখতে পাবেন অর্ধবৃত্তাকার খিলানযুক্ত বাড়ি, যেগুলোর জানালা কিংবা ঘুলঘুলিতে দেখা মিলবে রঙিন কাঁচের চমৎকার কারুকাজ, পেডিমেন্টগুলোও দারুণ আলংকরিক। চমৎকার ব্যালকনিগুলোও কাঠ ও লোহা দিয়ে কারুকাজ করে তৈরি। এক নজর দেখেই আপনি বুঝতে পারবেন এই এলাকার সমৃদ্ধ ইতিহাস।
এই একটি রাস্তাই পুরান ঢাকার স্থাপত্যের বৈচিত্র আর এর ঐতিহাসিক গভীরতা বুঝতে সাহায্য করবে।
উপভোগ করুন পনির চায়ের সঙ্গে বাকরখানি
আপনি যদি পুরান ঢাকার স্বাদ চেখে দেখতে চান, প্রথমেই নিন পনির চায়ের সঙ্গে বাকরখানি। বাকরখানি হলো কয়েক স্তর বিশিষ্ট এক ধরনের মিষ্টি রুটি জাতীয় খাবার, যা পুরান ঢাকার প্রধান খাবার। সেখানে এটি পরিবেশ করা হয় গরম গরম এক কাপ পনির চায়ের সঙ্গে। এই চাও ঢাকার অন্য যেকোনো চা থেকে আলাদা। মিষ্টি চায়ের সঙ্গে যুক্ত হয় ঢাকাই পনিরের নোনতা স্বাদ আর চমৎকার সুগন্ধ, যা স্বাদ বাড়িয়ে তোলে কয়েকগুণ।
এই খাবারযুগল কেবল আপনাকে আনন্দই দেবে না, সেই সঙ্গে জানাবে পুরান ঢাকার ইতিহাস আর ঐতিহ্যের গভীরতাও।
বিউটি বোর্ডিংয়ের সুলুকসন্ধান
শিরীষ দাস লেইনে অবস্থিত বিউটি বোর্ডিং যেন একটি প্রাণবন্ত সাংস্কৃতিক কেন্দ্র। অবশ্য সাধারণ বোর্ডিং হাউজ হিসেবেই এটি তৈরি করা হয়েছিল। ধীরে ধীরে ঢাকার সব কবি, সাহিত্যিক, রাজনীতিক আর সাংস্কৃতির ব্যক্তিদের আড্ডা কিংবা মিলনস্থলে পরিণত হয় এটি। এখন ঐতিহ্যবাহী এই ভবনটি মোটেল ও রেস্তোরাঁ হিসেবে কাজ করে।
দীর্ঘ সময় ধরেই এই বিউটি বোর্ডিং শহরের বুদ্ধিজীবী, শিল্পী ও লেখকদের আড্ডার জায়গা ছিল। তাই পুরান ঢাকা ঘুরতে এসে এই ঐতিহাসিক স্থাপনায় এলে মনে হবে যে জীবন্ত যাদুঘরে হেঁটে বেড়াচ্ছেন।
পুরান ঢাকার মাঠার সুস্বাদ
আপনার পুরান ঢাকা ভ্রমণ শেষ করতে পারেন এক গ্লাস সুস্বাদু মাঠা পানের মাধ্যমে। মাঠা হলো দই দিয়ে তৈরি বিশেষ মশলাযুক্ত পানীয়। সারাদিন ঘোরাঘুরি শেষে এক গ্লাস ঠান্ডা মাঠা আপনাকে তরতাজা করে দেবে।
পুরান ঢাকার মাঠা এর স্বতন্ত্র স্বাদের জন্য বিখ্যাত। বিশেষ ধরনের মশলায় তৈরি এই মাঠার স্বাদ আর ঘ্রাণ একেবারে অনন্য। পুরান ঢাকার খাঁটি স্বাদ পেতে চাইলে এক গ্লাস মাঠা পান করতে ভুলবেন না।
উপরে যে অভিজ্ঞতাগুলোর কথা বললাম, এর প্রতিটি আপনাকে ঢাকা শহরের কেন্দ্রবিন্দু সম্পর্কে ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি দেবে। চমৎকার স্থাপত্যকর্ম, বলধা গার্ডেনের সমৃদ্ধ সংগ্রহশালা থেকে শুরু করে স্বাদের ঐতিহ্য এবং স্থানীয়দের মুখরিত জীবন; সবকিছু নিয়ে পুরান ঢাকা রয়েছে আপনার অপেক্ষায়। ভ্রমণ করুন আর খুঁজে নিন ঢাকার ঐহিত্যকে।
অনুবাদ করেছেন শেখ সিরাজুম রশীদ
Comments