ঘুরতে যেতে পারেন যে ৫ শাপলা বিলে

শাপলা বিল,
ছবি: সৈয়দ মেহরাব হোসেন

রোজকার একঘেয়ে জীবন থেকে কিছু সময়ের জন্য মুক্তি পেতে চান? কিংবা আপনার চোখ জোড়াকে দিতে চান একটু প্রশান্তি? তাহলে এটাই সঠিক সময় আশপাশেই থাকা শাপলা বিল ঘুরে আসার।

সাধারণত বছরের এই সময়টায় বাংলাদেশের পুকুর, হ্রদ, বিল কিংবা অন্যান্য স্থানের জলে ফোটে শাপলা। দেশের প্রায় সব জায়গাতেই শাপলা ফোটে, কিন্তু কিছু কিছু জায়গায় সৌন্দর্য হয় অতুলনীয়। নান্দনিক দৃশ্যমূল্যের কথা বাদ দিলেও, শুষ্ক মৌসুমের পর জলাশয়গুলোয় শাপলার ফিরে আসা যেন সেখানে প্রাণ ফিরে আসার মতো ব্যাপার। শুধু জলাশয়গুলোতেই নয়, উজ্জ্বল রঙের এই শাপলা যেন আশপাশের পুরো এলাকাতেই প্রাণ ফিরিয়ে আনে।

এখানে আমরা পাঁচটি শাপলা বিলের কথা বলব, যেগুলোয় আপনি ঘুরে আসতে পারেন।

সাতলা বিল, উজিরপুর, বরিশাল

কল্পনা করুন, সমুদ্রের মতো বিস্তীর্ণ জলরাশি, যেটি ঢেউয়ের বদলে হাজালো লাল শাপলা আর সবুজ পাতায় আচ্ছাদিত!

শাপলা বিল
ছবি: সৈয়দ মেহরাব হোসেন

সাতলা বিলের অবস্থান বরিশাল শহর থেকে মাত্র ৬০ কিলোমিটার দূরে। হেমন্তকাল থেকে শরতের মধ্যভাগ পর্যন্ত সাতলা বিল পরিণত হয় শাপলার সমুদ্রে, যেখান থেকে চোখ ফেরানো দায়। এই সময় জীবিকার তাগিদেই সাতলা গ্রামের মানুষের একটা বড় অংশ শাপলা চাষ করেন।

বরিশাল থেকে সাতলা বিল যেতে হলে আপনাকে বাসে চেপে যেতে হবে শিকারপুর, সেখান থেকে অটো ভাড়া করে উত্তর সাতলা। অথবা চাইলে নাথুল্লাবাদ থেকেও সরাসরি বাসে যেতে পারেন।

ডিবির হাওর, জৈন্তাপুর, সিলেট

সিলেটের জৈন্তাপুর উপজেলার ডিবির হাওর মূলত চারটি জলাধারের সম্মিলনস্থল। এগুলো হলো ডিবি বিল, ইয়াম বিল, হরফকাটা বিল ও কেন্দ্রী বিল। এই জলাশয়গুলোর অবস্থান বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তের মেঘালয়ের পাদদেশে। একপাশে পাহাড়, তার নিচেরই বিস্তীর্ণ জলরাশি যা ভরে আছে শাপলায়, সব মিলিয়ে যেন এক জাদুকরী দৃশ্য তৈরি হয়।

ডিবির হাওর ঘুরতে গেলে কেবল শাপলার সৌন্দর্যই আপনাকে মুগ্ধ করবে না, সেখানে থাকা পরিযায়ী পাখি যেমন পিনটেইল হাঁস, সারস বা মাছরাঙ্গার ঝাঁকও আপনাকে হাওরে স্বাগত জানাবে।

শাপলা বিল
ছবি: সৈয়দ মেহরাব হোসেন

সিলেট থেকে এই শাপলা বিলে যেতে বাসম লেগুনা কিংবা সিএনজিচালিত অটোরিকশায় সিলেট-তামাবিল সড়ক ধরে যেতে হবে জৈন্তাপুর। তারপর বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) ক্যাম্প ফেলে কাঁচা রাস্তা ধরে গেলেই দেখা বিলবে ডিবির হাওরের।

নরাইট বিল, কাপাসিয়া, গাজীপুর

আপনি যদি ঢাকার যান্ত্রিক জীবনে হাঁপিয়ে উঠেন আর কিছুক্ষণের জন্য স্বস্তি চান তাহলে গাজীপুরের কাপাসিয়ার নরাইট বিল হতে পারে আপনার জন্য আদর্শ জায়গা। শান্ত-নিরিবিলি এই বিলের পানিতে যেন চাদরের মতো বিছিয়ে আছে শাপলা ফুল। আর সেই বিলের পানিতে যদি ছোট একটি নৌকা নিয়ে আপনি ভেসে পড়েন তাহলে পাবেন এক অন্য অনুভূতি।

চারপাশে শাপলা, পাখির হালকা কিচিরমিচির আর পানির নীরবতা, আপনাকে যেন অন্য জগতে নিয়ে যাবে। যা আমাদের জাগতিক জগত থেকে একদম অন্যরকম।

স্থানীয়দের মতে, নরাইট বিলের নয়টি স্বতন্ত্র কোণ আছে। সেইসঙ্গে বিশাল জলরাশি আর তাতে ফুটে থাকা শাপলা শহরের কোলাহল থেকে আপনাকে একদম দূরে নিয়ে যাবে। যারা রোজকার জীবন থেকে কিছু সময়ের জন্য পালাতে চান, তাদের জন্য নরাইট বিল আদর্শ।

শাপলা বিল
ছবি: সৈয়দ মেহরাব হোসেন

এই বিলের সত্যিকার সৌন্দর্য উপভোগ করতে আপনাকে যেতে হবে বেশ সকালে। ঠিক যখন শাপলাগুলো ফুটতে শুরু করে।

কাপাসিয়া থেকে আমরাইদ বাজার গিয়ে সেখান থেকে জলপাইতলা হয়ে পাঁচুয়া গ্রাম পেরিয়ে তবেই পৌঁছতে পারবেন নরাইট বিলে।

ঘোড়াদিঘী বিল, কাগতি, নেত্রকোণা

নেত্রকোণার কাগতি ইউনিয়নের নাড়িয়াপাড়া গ্রামে ঘোড়াদিঘীর অবস্থান। দীঘির জলের ওপর ফুটে থাকা অগণিত শাপলা যে কারও চোখ জুড়াবে। প্রতিদিনই আশপাশের এলাকা থেকে শত শত মানুষ এই শাপলার দৃশ্য উপভোগ করতে আসে, অনেকেই নৌকায় চেপে ফুলের কাছাকাছি ঘুরে আসেন।

এই বিলে যাওয়াও বেশ সহজ। নেত্রকোণা শহর থেকে নাড়িয়াপাড়া গ্রামে যেতে অটোরিকশা, সিএনজিচালিত অটোরিকশা, মোটরসাইকেল, এমনকি রিকশায়ও যাওয়া যায়। এ পথের দূরত্ব মাত্র ৯ কিলোমিটার।

শাপলা ফোটার সময় যদিও খুব সংক্ষিপ্ত, তারপরেও সময় মিলিয়ে শাপলা বিলে ঘুরে আসতে ভুলবেন না।

রূপগঞ্জ শাপলা বিল, নারায়ণগঞ্জ

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের শিমুলিয়া গ্রামের শাপলা বিলের অবস্থান ঢাকার খুব কাছেই। আপনি যদি এই বিল ঘুরতে যান তাহলে বৈচিত্র্যময় দৃশ্য দেখতে পাবেন, যেখানে তিনটি ভিন্ন ধরনের শাপলার পাশাপাশি ফুটে থাকে পদ্মও।

তাছাড়া কাছাকাছি দূরত্বে থাকা জিন্দাপার্কও এই স্থানটিকে পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয় করে তোলে। কারণ ইচ্ছা হলেই পুরো পরিবার নিয়ে জিন্দাপার্ক ঘোরার পাশাপাশি শাপলা বিল ঘুরে আসা যায়।

এই বিলে যেতে কুড়িল বাস্ট স্টেশন থেকে বাসে কাঞ্চন সেতু পর্যন্ত যেতে হবে। সেখান থেকে রিকশায় কিছুদূর গেলেই শিমুলিয়া গ্রাম। সহজ এবং বাজেটবান্ধব খরচেই আপনি সারাদিনের জন্য পেতে পারেন শহরের কোলাহল থেকে মুক্ত একটি দিন।

অনুবাদ করেছেন শেখ সিরাজুম রশীদ

 

Comments

The Daily Star  | English

Polythene ban: A litmus test for will and eco-innovation

Although Bangladesh became the first country in the world to announce a complete ban on the use of polythene bags in 2002, strict enforcement of the much-lauded initiative has only started taking shape recently.

14h ago