গ্রিসে পুলিশ হেফাজতে বাংলাদেশির মৃত্যু, পুলিশের দাবি 'আত্মহত্যা'

খালিস মিয়া

গ্রিসের রাজধানী এথেন্সে পুলিশ হেফাজতে এক বাংলাদেশির মৃত্যু হয়েছে। ২৯ বছর বয়সী নিহত বাংলাদেশির নাম খালিস মিয়া। তার বাড়ি সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলায়।

গ্রিসের ওমোনিয়া থানা পুলিশের দাবি, রাতে নেশাগ্রস্ত অবস্থায় ওই যুবককে আটক করে হেফাজতে রাখা হয়। পরদিন সকালে পুলিশ তার ঝুলন্ত মরদেহ পায়। এ ঘটনায় সুষ্ঠু তদন্তের দাবি করেছে এথেন্সে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাস এবং অভিবাসন সংস্থাগুলো। গ্রিসের বিভিন্ন পত্রিকাতেও এই ঘটনা নিয়ে খবর প্রকাশ হয়েছে।

জানা যায়, তুচ্ছ একটি ঘটনাকে কেন্দ্র করে গত ৩০ সেপ্টেম্বর রাতে সুনামগঞ্জ জেলার ছাতক উপজেলার জালাল উদ্দিনের পুত্র খালিস মিয়াকে এথেন্সের ওমোনিয়া এলাকা থেকে আটক করে নিয়ে যায় পুলিশ। মঙ্গলবার সকালে পুলিশ সেলে তাকে ফাঁস লাগানো ঝুলন্ত অবস্থায় পাওয়া যায় বলে পুলিশ দাবি করে। সেখানে আরও ১১ জন বন্দি ছিলেন।

অভিবাসীর মৃত্যুর ঘটনা এথেন্সের প্রসিকিউটরকে জানানো হয়েছে বলে নিশ্চিত করে গ্রিক পুলিশ। এছাড়া একটি মেডিকেল দল এবং ফৌজদারি অধিদপ্তরের একটি ইউনিট তদন্তের জন্য ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে।

এ ব্যাপারে বাংলাদেশ কমিউনিটি ইন গ্রিসের সভাপতি আনোয়ার হোসেন দেওয়ান জানান, 'স্থানীয় একজন উকিল এবং কমিউনিটি নেতৃবৃন্দ নিয়ে থানায় পুলিশের কাছে জানতে চাইলে তাদেরকে পুলিশ জানিয়েছে পাটিয়া ভাথিস (যেখানে অনেক বাংলাদেশিদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে) সেখানে মারামারির ঘটনায় পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে থানায় নিয়ে যায়। তিনি থানায় ঢোকার পথে গাড়ির দরজায় লাথি মারেন এবং পুলিশের গাড়ির আয়না ভেঙে ফেলেন। নেশাগ্রস্থ থাকায় পুলিশ কোন জিজ্ঞাসাবাদ ছাড়াই সরাসরি হাজতে নিয়ে যায় তাকে।'

এ বিষয়ে গ্রিসে নিযুক্ত বাংলাদেশ দূতাবাসের রাষ্ট্রদূত নাহিদা রহমান সুমনা বলেন, 'গ্রিসের মতো দেশে এটি মেনে নেওয়া কষ্টের। কর্তৃপক্ষ আমাদের এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানায়নি। আমরা তাদের কাছে বিস্তারিত জানতে চেয়েছি। দূতাবাসের পক্ষ থেকে নিহতের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। আমরা দেশে তার মায়ের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করছি। পরিবারের সম্মতি মিললে এ ঘটনায় ন্যায়বিচার পেতে আমাদের পক্ষ থেকে একজন আইনজীবী নিয়োগ করা হবে।'

দেশটির অভিবাসন সংস্থা কেরফার পরিচালক এবং এথেন্স মিউনিসিপ্যালিটির কাউন্সিলর পেট্রোস কনস্টান্টিনো বলেন, 'গ্রিসে বর্তমানে বিভিন্ন ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে পুলিশি সহিংসতার মুখোমুখি হচ্ছেন অভিবাসী ও আশ্রয়প্রার্থীরা। বাংলাদেশি খালিস মিয়াকে আটকের মাত্র দেড় ঘণ্টা পর তিনি মারা গেছেন। আমরা মনে করছি সহিংস ঘটনায় তার মৃত্যু হয়েছে।'

পেট্রোস কনস্টান্টিনো আরও বলেন, 'পুলিশ প্রথমে বলেছিল খালিস মিয়া পুলিশের গাড়ি ভাঙচুর করেছে। আমরা সেই গাড়ি দেখতে চাইলে তারা জানায় সে গাড়ির আয়না ভেঙেছে। তার মানে একটি গাড়ির আয়নার জন্য একজন অভিবাসীর প্রাণ চলে গেল? গত মাসে এক পাকিস্তানি অভিবাসীও এভাবে মারা গেল। আমরা তদন্ত কর্মকর্তা পরিবর্তনের দাবি জানিয়েছি এবং প্রথম ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করেছি।'

এ ঘটনায় সোমবার আটক কেন্দ্র এবং হাজতে বন্দিদের অধিকার নিয়ে দায়িত্বরত জাতিসংঘের বিশেষ প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠক করেছে কেরফাসহ অভিবাসন ও অধিকার সংগঠনগুলো।

খালিস মিয়া মৃত্যুর প্রতিবাদে আগামী ১২ অক্টোবর ঘটনাস্থলে সামনে বিক্ষোভের ডাক দিয়েছে বাংলাদেশি কমিউনিটি ইন গ্রিস, বাংলাদেশ প্রবাসী অধিকার পরিষদ, অভিবাসন সংস্থা কেরফাসহ বেশ কয়েকটি সংগঠন।

Comments

The Daily Star  | English

Tax-free income limit may rise to Tk 3.75 lakh

The government is planning a series of measures in the upcoming national budget to alleviate the tax pressure on individuals and businesses, including raising the tax-free income threshold and relaxing certain compliance requirements.

12h ago