প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে নির্বাচনের রোডম্যাপসহ যেসব দাবির কথা বলল বিএনপি

প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বিএনপি প্রতিনিধি দলের বৈঠক। ছবি: প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে পাওয়া

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, 'অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মধ্যেও এমন অনেকে আছেন, যারা গণঅভ্যূত্থানের যে স্পিরিট সেটাকে ব্যাহত করছেন। তাদেরকে সরানোর কথা বলে এসেছি।'

আজ শনিবার যমুনায় প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সংলাপ শেষে তিনি এ কথা বলেন।

তিনি জানান, প্রধান উপদেষ্টার কাছে চুক্তিভিত্তিক কিছু নিয়োগ বাতিলের প্রস্তাব দিয়েছে দলটি।

মির্জা ফখরুল বলেন, 'আমরা নির্বাচন বিষয়ে কথা বলেছি। নির্বাচন কমিশন এবং নির্বাচন ব্যবস্থার সংস্কার বিষয়ে বলেছি। আমরা বলেছি, নির্বাচন কমিশন নিয়োগ আইন স্থগিত করে প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর ঐক্যমতের ভিত্তিতে অনতিবিলম্বে নির্বাচন কমিশন গঠন করতে হবে। নির্বাচন কমিশন, নির্বাচন কবে হবে সে বিষয়ে রোডম্যাপ দিতে বলেছি।'

তিনি বলেন, 'জাতীয় পরিচয়পত্র স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত অধ্যাদেশ দিয়ে বাতিল করতে বলেছি। বিতর্কিত কোনো ব্যক্তি যেন নির্বাচন সংস্কার কমিটিতে না যায়, সেটা আমরা বলেছি। ফ্যাসিস্ট সরকারের সময় ভুয়া ভোটের মাধ্যমে হওয়া সকল ইউনিয়ন পরিষদ বাতিল করতে বলেছি। সেইসঙ্গে ২০১৪, ১৮ ও ২৪ সালে নির্বাচনের সময় যারা প্রধান নির্বাচন কমিশনার, কমিশনার ছিলেন তাদেরসহ ভুয়া ও পক্ষপাতদুষ্ট নির্বাচন আয়োজনকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছি।'

তিনি আরও বলেন, 'নির্বাচন ব্যবস্থাকে ধ্বংস করার মূল হোতা ও তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিল করার মূলনায়ক বিচারপতি খায়রুল হকের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেছি রাষ্ট্রদ্রোহিতার অপরাধে।'

তিনি বলেন, 'প্রশাসনের যারা ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে তাদের দোসর হয়ে লুটপাট, অনাচার, অত্যাচার, গুম-খুন, গণহত্যায় সহায়তা করেছেন, তাদের বেশিরভাগই এখনো বহাল তবিয়তে স্ব স্ব জায়গায় আছেন। অবিলম্বে তাদের সরিয়ে নিরপেক্ষ ব্যক্তিদের আনার কথা আমরা বলেছি।'

জেলা প্রশাসক নিয়োগের প্রক্রিয়া জানতে চেয়েছেন উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, 'যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে তাদের নিয়োগ আমরা বাতিল করতে বলেছি। সেইসঙ্গে যোগ্য ব্যক্তিদের তালিকা করতে বলেছি।'

তিনি বলেন, 'গত ১৫ বছর ধরে যেসব সরকারি কর্মকর্তা পদোন্নতিবঞ্চিত রয়েছেন, তাদের ভূতাপেক্ষ পদোন্নতি নিশ্চিত করার কথা বলে এসেছি।'

বিচার বিভাগের বিষয়ে সুপারিশের বিষয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, 'হাইকোর্ট বিভাগে এখন পর্যন্ত কোনো পরিবর্তন হয়নি। অথচ, হাইকোর্ট বিভাগের বেশিরভাগ নিয়োগই ছিল দলীয় ভিত্তিতে। সেখানে প্রায় ৩০ জন বিচারক বহাল তবিয়তে কাজ করছেন। তাদের ব্যাপারে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার কথা আমরা বলেছি।'

তিনি বলেন, 'আমরা লক্ষ্য করছি, যাদের ‍দুর্নীতি-হত্যার মতো সুনির্দিষ্ট অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে, তাদেরকে জামিন দেওয়া হচ্ছে। এটা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। এটা আমরা দেখার জন্য বলেছি।'

তিনি আরও বলেন, '২০০৭ থেকে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত আওয়ামী শাসনামলে দায়ের করা সব মিথ্যা, গায়েবি, ভুয়া, সাজানো, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলা প্রত্যাহারের জন্য নীতিগত সিদ্ধান্ত ঘোষণা এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলেছি। কিছু আমলা, পুলিশ কর্মকর্তা, সাবেক মন্ত্রী দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাচ্ছেন। কীভাবে পালাচ্ছেন, কার সহযোগিতায় পালাচ্ছেন, সে বিষয়গুলো আমরা দেখার জন্য বলেছি।'

'আরেকটি বিষয় আমরা জোর দিয়ে বলেছি—শেখ হাসিনা ভারতে আছেন। তাকে কেন্দ্র করে, তার মাধ্যমে যেসব অপপ্রচার চলছে, সেটা হচ্ছে কারণ তিনি ভারতে আছেন। এই বিষয়ে ভারত সরকারের সঙ্গে আলোচনা করার জন্য এবং তাকে ওই অবস্থান থেকে সরিয়ে দেওয়ার জন্য আমরা সরকারকে অনুরোধ করেছি,' যোগ করেন তিনি।

পার্বত্য চট্টগ্রামের বিষয়ে তিনি বলেন, 'পার্বত্য চট্টগ্রামের ব্যাপারটা গভীরভাবে দেখে সেখানে কারা এই ঘটনাগুলোর সঙ্গে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য আমরা বলেছি।'

গুম-খুনের সঙ্গে যারা জড়িত ছিল তাদের মধ্যে একমাত্র জিয়াউল হাসান ছাড়া আর কাউকেই ধরা হয়নি বলে মন্তব্য করেন মির্জা ফখরুল। অবিলম্বে গুম-খুনের সঙ্গে জড়িতদের চিহ্নিত করে গ্রেপ্তার ও ব্যাবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন বলে উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল।

জাতিসংঘের প্রতিনিধি দলকে বিভিন্ন বিভাগের কর্মকর্তারা সহযোগিতা করছেন না বলে দাবি করে মির্জা ফখরুল।

তিনি বলেন, 'আপনারা দেখছেন, পূজাকে কেন্দ্র করে সনাতনি ধর্মের কিছু মানুষ—সবাই না—অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে জনগণকে উস্কে দিচ্ছে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে। তারা অপপ্রচার চালাচ্ছে যে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর অত্যাচার হচ্ছে, নির্যাতন হচ্ছে। যেটা সর্ব্যেব মিথ্যা। বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন করা হচ্ছে—এটা বলা বাংলাদেশের বিরুদ্ধে একটা ষড়যন্ত্র। এই বিষয়গুলো অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করতে বলেছি অন্তর্বর্তী সরকারকে।'

Comments

The Daily Star  | English

Hamas responds to Gaza ceasefire proposal, it's 'positive': Palestinian official

US President Donald Trump earlier announced a "final proposal" for a 60-day ceasefire in the nearly 21-month-old war between Israel and Hamas, stating he anticipated a reply from the parties in coming hours

49m ago