শ্রমিক হত্যা গণঅভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষার বিরোধী: গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটি

আশুলিয়ায় সংঘর্ষ
নিহত কাউসার মিয়ার স্বজনের আহাজারি। ছবি: স্টার

শিল্পাঞ্চল আশুলিয়ার টঙ্গাবাড়ী এলাকায় গত সোমবার যৌথবাহিনীর গুলিতে শ্রমিক নিহতের ঘটনায় প্রতিবাদ জানিয়েছে গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটি। 

আজ বুধবার কমিটির পক্ষ থেকে অধ্যাপক আনু মুহাম্মদের পাঠানো এক বিবৃতিতে এ প্রতিবাদ জানানো হয়েছে।

এতে বলা হয়, সোমবার আশুলিয়ায় যৌথবাহিনীর সদস্যদের গুলিতে শ্রমিক কাউসার খান নিহত হয়েছেন এবং আরও চার শ্রমিক গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। এছাড়া অর্ধশতাধিক আহত হয়েছেন। গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটি বলছে, আমরা দেখেছি ২০২৩ সালে গার্মেন্টস শ্রমিকরা ২৫ হাজার টাকা ন্যুনতম মজুরির দাবিতে আন্দোলন গড়ে তোলেন এবং এর ফলে তাদের ওপর নেমে এসেছিল আওয়ামী লীগের ফ্যাসিবাদের খড়গ। সেসময় চারজন শ্রমিককে হত্যা করে আওয়ামী সরকার। পরে মামলা, ছাটাই, নানা ভয়ভীতি দেখিয়ে জোর করে ১২ হাজার ৫০০ টাকা মজুরিতে কারখানায় পাঠায় শ্রমিকদের। 

জুলাইয়ে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গার্মেন্টস শ্রমিকদের সংগ্রামের উল্লেখ করে বিবৃতিতে বলা হয়, আন্দোলনে আশুলিয়ায় প্রায় ৪৬ জন গার্মেন্টস শ্রমিক শহীদ হন। তারা পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী ছিলেন। তাই পরিবারগুলোও হুমকির মুখে পড়ে।

গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পরে গার্মেন্টস শ্রমিকরা বন্ধ কল-কারখানা খুলে দেওয়া, বকেয়া ও মজুরির দাবি আদায়ে আন্দোলন শুরু করে। সরকার এ আন্দোলনকে 'বহিরাগতের উসকানি', 'প্রতিবিপ্লবী' ট্যাগ লাগিয়ে নস্যাৎ করতে চেয়েছে বলে বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, আমরা জানতে পেরেছি যে কর্তৃপক্ষ কর্তৃক কয়েকদিন পরপর একাধিক কারখানায় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করে দেওয়া, শ্রমিকের বকেয়া এবং সার্ভিস বেনিফিটের টাকা আটক রাখা, শ্রমিক ছাঁটাই এবং লে-অফের ঘটনা ঘটেই চলেছে। 

গত ৩০ সেপ্টেম্বর বার্ডস গ্রুপের শ্রমিকদের নির্ধারিত পাওনা পরিশোধের কথা ছিল। তারিখ পিছিয়ে আরও তিন মাস সময় চায় কর্তৃপক্ষ। প্রতারণার এই দুরভিসন্ধি বাস্তবায়নের জন্য কিছু দালাল শ্রমিক নেতার সঙ্গে ১২ লাখ টাকার বিনিময়ে দফারফা করে এবং শ্রমিকের আন্দোলনকে দ্বিধাবিভক্ত করার অপচেষ্টা চালায় এবং এতে শ্রমিকরা ক্ষুব্ধ হয়ে সড়ক অবরোধ করে বলে বিবৃতিতে জানানো হয়। 

গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটি আরও জানায়, একই দিনে সার্ভিস বেনিফিট ও ক্ষতিপূরণসহ বন্ধ কারখানা খুলে দেওয়ার দাবিতে প্রায় ৫ ঘণ্টা আশুলিয়ায় সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন ডংলিয়ন গ্রুপের শ্রমিকরা। পাশাপাশি মন্ডল গ্রুপের শ্রমিকদের প্রতিনিধির সঙ্গে মালিকপক্ষ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ত্রিপক্ষীয় বৈঠক চলাকালে শ্রমিকরা রাজপথে অবস্থান নেন। এ সময় দায়িত্বরত পুলিশসহ যৌথ বাহিনীর সদস্যরা শ্রমিকদের বুঝিয়ে শান্ত করার চেষ্টা করেন। একপর্যায়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা লাঠিচার্জ শুরু করেন। শ্রমিকদের  বিক্ষোভে যৌথবাহিনী গুলি ছুঁড়লে একজন শ্রমিক নিহত হন।

বিবৃতিতে বলা হয়, আমরা বিস্ময়ের সঙ্গে লক্ষ্য করছি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার শ্রমিকের বাস্তবসম্মত দাবিগুলোকে এড়িয়ে গিয়ে শ্রমিকের আন্দোলনকে দমন করতে নানা পদক্ষেপ নিচ্ছে। শ্রম মন্ত্রণালয় মালিক ও শ্রমিক প্রতিনিধির সঙ্গে দফায় দফায় মিটিং করছে এবং কিছু চুক্তিনামাও তারা প্রচার করেছে। কিন্তু বাস্তবে আন্দোলনরত শ্রমিকদের দায়দায়িত্ব তারা নিচ্ছে না। বরং শ্রমিক হত্যার মধ্য দিয়ে এবং শ্রমিক আন্দোলনকে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড বলার মাধ্যমে তারা শ্রমিকবিরোধী অবস্থান নিয়েছে। 

'আমরা এই শ্রমিক হত্যার তীব্র প্রতিবাদ জানাই এবং শ্রমিক হত্যার সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের বিচারের দাবি করি। পাশাপাশি অন্তর্বর্তী সরকারকে অতি দ্রুত বন্ধ কারখানা খুলে দিয়ে, শ্রমিকদের বকেয়া, সার্ভিস বেনিফিট পরিশোধসহ সব দাবি-দাওয়া মেনে নেওয়ার সুস্পষ্ট আহ্বান জানাই। শ্রমিকদের ওপর আর যেন একটি গুলিও না চলে সে বিষয়ে সরকারকে অবশ্যই শক্ত অবস্থান নিতে হবে,' বলছে গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটি।

Comments