প্রধান উপদেষ্টাকে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্কের খোলা চিঠি

অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ কীভাবে নিশ্চিত করা হবে তা সুস্পষ্ট করতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রধানের কাছে খোলা চিঠি দিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক।

আজ শনিবার শিক্ষক নেটওয়ার্কের পক্ষে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বরাবর চিঠিটি সংবাদ সম্মেলনে পাঠ করেন অধ্যাপক গীতি আরা নাসরিন।

চিঠিতে বলা হয়, 'দেশব্যাপী আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে, শিক্ষার্থী-জনতার অভ্যুত্থানের মধ্যে গত ৫ আগস্ট স্বৈরাচারী সরকারের পতন ঘটে। বিভিন্ন গোষ্ঠী, শ্রেণি ও পেশাজীবীর 'স্বাধীনতা' পাওয়ার আকাঙ্ক্ষার মধ্যে আপনারা বিশাল এক দায়িত্ব কাঁধে নিয়ে দেশের হাল ধরেছেন। আকাঙ্ক্ষার তীব্রতা ও বিগত বছরগুলোতে ক্ষয়-ক্ষতির পরিমাণের কারণে আপনাদের পথ দুর্গম সেটা আমরা জানি। 'স্বাধীনতাকামী' সকলের ধৈর্য প্রয়োজন সে কথাও আমরা মনে রাখি।'

চিঠিতে আরও বলা হয়, 'বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক সম্পর্কে আপনি ওয়াকিবহাল নাও থাকতে পারেন। গত এক দশক ধরে এ নেটওয়ার্কের মাধ্যমে বাংলাদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা লাগাতার নানা অন্যায়, নিপীড়ন ও কর্তৃত্ববাদিতার বিরুদ্ধে শক্তিশালী অবস্থান নিয়ে আসছেন। তবে আমরা বিশেষ কোনো মার্কার সরকারের পক্ষে-বিপক্ষে ছিলাম না, এখনও নাই; আমরা গণতন্ত্র ও ন্যায্যতার জন্য হাজির আছি। সেই সূত্রেই জুলাই অভ্যুত্থানের উত্তাল সময়ে শিক্ষার্থীদের পাশে ঢাল হয়ে দাঁড়িয়ে এই নেটওয়ার্কের শিক্ষকরা শিক্ষার্থী-জনতার সুহৃদ হিসেবে পরিচিতি পেয়েছেন।'

বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক জানায়, 'পরিতাপের বিষয়, অভ্যুত্থানের মাত্র কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই বাংলাদেশের নানা প্রান্তে বিভিন্ন ধরনের অসহিষ্ণু, আক্রমণাত্মক ও নৈরাজ্যবাদী জমায়েত আমরা লক্ষ করছি। সেসব জমায়েত থেকে অপছন্দের গোষ্ঠী ও দলের বিরুদ্ধে কেবল হিংসাত্মক কথাবার্তাই বলা হচ্ছে না, ক্ষেত্রবিশেষে সেসব মানুষের ওপর হামলাও চালানো হচ্ছে। তিনটি বিশ্ববিদ্যালয়ে সঙ্ঘবদ্ধ হিংস্রতায় নিহত হয়েছেন তিন জন মানুষ। অপরাধীদের ধরতে গিয়ে একজন সেনা কর্মকর্তা হামলায় নিহত হয়েছেন। পার্বত্য চট্টগ্রামে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছে ভিন্ন জাতিসত্তার মানুষকে।'

খোলা চিঠিতে আরও বলা হয়, 'রাস্তায় ও পর্যটন অঞ্চলে নারীদের ওপর হামলা, নিগ্রহ এবং চরম হেনস্তা করা হয়েছে। শ্রমিকদের নিগৃহীত করেছেন মালিকপক্ষের গুণ্ডারা। বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ, স্কুল ও দপ্তরে ছোট ছোট অজস্র হিংস্রতার ঘটনা ঘটেই চলেছে। মাজার, মন্দির, শিল্প- স্থাপনা ভাঙচুর থেকে শুরু করে বাউল ও আহমেদিয়াদের ওপরও আক্রমণ হয়েছে। এসব দুর্ঘটনা দীর্ঘদিন সমাজের মধ্যকার নানাবিধ অমীমাংসা ও গণতন্ত্রহীনতার সাথে সম্পর্কিত বলে আমরা মনে করি। এভাবে চলতে থাকলে নাগরিকদের নিরাপত্তাবোধের অভাব তীব্রতর হবে এবং সংকট উত্তরণে সরকারকে আরও বেগ পেতে হবে।'

এই ক্রান্তিকালে বর্তমান সরকারের নির্মোহ ভূমিকা পালন ও আশু পদক্ষেপ গ্রহণ অত্যন্ত জরুরি বলে উল্লেখ করে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক।

তারা বলেন, 'কাজেই, অতি উৎসাহী গোষ্ঠীগুলোর অসহিষ্ণুতা প্রশমণের জন্য যারা এসব ঘৃণামূলক বক্তব্য প্রচার করছেন এবং বিভিন্ন পরিচয় ও সম্প্রদায়ের মানুষের ওপর বা নাগরিকের মতপ্রকাশের স্বাধীনতার ওপর হস্তক্ষেপ করছেন তাদের থামাতে হবে। তা না করে সরকার বা কোনো বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন নিজেরাই যদি এসব হস্তক্ষেপকারীদের সাহস যুগিয়ে সাধারণ নাগরিকদের নিরাপত্তাহীনতার ভয় দেখিয়ে কোনো গোষ্ঠির কথা পালনে বাধ্য করেন, যেমনটা ঘটেছে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (সেখানে চাপে পড়ে প্রশাসন নিরাপত্তা দিতে রাজি হয়নি বলে একটি আলোচনা সভা বাতিল করতে বাধ্য হয়েছে শিক্ষার্থীরা) তাহলে আর এত দামে কেনা জুলাই অভ্যুত্থানের কোন আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়ন করা হলো? সরকারের পক্ষ থেকে সুস্পষ্ট ঘোষণা আসতে হবে যে তারা আসলে অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ কীভাবে নিশ্চিত করবেন এবং অন্তর্ভুক্তি বিষয়ে তাদের অবস্থান তাদের নীতিসমূহের মাধ্যমে কী করে স্পষ্ট করবেন। সহিংস জমায়েতের সংঘবদ্ধ হিংস্রতা থেকে ভিন্ন মত বা সম্প্রদায়ের মানুষের অধিকার রক্ষায় সরকার কী কী পদক্ষেপ নেবেন তা সুস্পষ্ট করতে হবে।'

চিঠির অনুলিপি স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা, শিক্ষা উপদেষ্টা, আইন উপদেষ্টা, ধর্ম উপদেষ্টা ও প্রতিরক্ষা উপদেষ্টা বরাবর দেওয়া হয়েছে।

Comments

The Daily Star  | English

Nowfel gained from illegal tobacco trade

Former education minister Mohibul Hassan Chowdhoury Nowfel received at least Tk 3 crore from a tobacco company, known for years for illegal cigarette production and marketing including some counterfeit foreign brands.

7h ago