শিক্ষক-ছাত্ররাজনীতির পুরোনো ধরনের বদল চায় জাতি: বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক

ছবি: সংগৃহীত

শিক্ষাক্ষেত্রে অপ্রতুল বাজেট বরাদ্দ, গবেষণার অভাব, শিক্ষক নিয়োগে নানা অনিয়ম ও প্রশাসক নিয়োগে দলীয়করণসহ নানাবিধ সমস্যা থেকে উত্তরণের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর নেতৃত্বে পরিবর্তন প্রয়োজন বলে জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক।

আজ সোমবার দেওয়া বিবৃতিতে তারা বিষয়টি জানায়।

এতে বলা হয়, একটি দক্ষ জাতি গঠনে শিক্ষার বিকল্প নেই। শিক্ষার সর্বোচ্চ স্তর অর্থাৎ বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে শিক্ষাব্যবস্থা নানান সমস্যার সম্মুখীন। এরমধ্যে শিক্ষার্থীদের আবাসন ও উপকরণ সংকট, ক্ষমতাসীনদের দলভুক্তকরণে চাপ প্রদান ও  নির্যাতন যেমন আছে, তেমনই আছে শিক্ষক ও প্রশাসনের জবাবদিহিহীনতা এবং স্বায়ত্তশাসনকে ধ্বংস করে দেওয়ার নানামুখী পদক্ষেপ। এ ছাড়াও শিক্ষাক্ষেত্রে অপ্রতুল বাজেট বরাদ্দ, গবেষণার অভাব, শিক্ষক নিয়োগে নানা অনিয়ম, প্রশাসক নিয়োগে দলীয়করণসহ নানাবিধ সমস্যায় বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আষ্টেপৃষ্ঠে বাধা পড়েছে। এ ধরনের সমস্যা থেকে উত্তরণের জন্য প্রয়োজন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর নেতৃত্বে পরিবর্তন, যা শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের দীর্ঘদিনের দাবি।

'জুলাই হত্যাকাণ্ড' পরবর্তী সময়ে বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থীদের আন্দোলন গণঅভ্যুত্থানে রূপ নেয়, যা স্বৈরাচারী শেখ হাসিনার সরকারকে পদত্যাগে বাধ্য করে। সেই ধারাবাহিকতায় সংসদ বিলুপ্ত করা হয় এবং একটি অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়, যে সরকারে শিক্ষার্থীরাও প্রতিনিধিত্ব করছেন। এরই মধ্যে আমরা লক্ষ্য করি যে ঢাকা, রাজশাহী, জাহাঙ্গীরনগর ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়সহ অনেক পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসকেরা একযোগে পদত্যাগ করা শুরু করেছেন। এতে করে ক্যাম্পাসগুলোতে যে প্রশাসনিক শূন্যতা তৈরি হয়েছে, তা পতিত সরকারের বড় পরিকল্পনার অংশ যেমন হতে পারে, তেমনই অন্যান্য রাজনৈতিক দলের চাপের কারণেও হতে পারে। এ ব্যাপারে সরকারের দৃশ্যমান পদক্ষেপ দেখা যাচ্ছে না। এ শূন্যতার মধ্যে বিভিন্ন দলীয় শিক্ষকদের সেই পদ পূরণে প্রচুর দৌড়-ঝাঁপ করতে দেখা যাচ্ছে। অথচ তাদের অনেকেরই শিক্ষক-শিক্ষার্থীর অধিকারের পক্ষে থাকার, নিপীড়নের বিরুদ্ধে, বিগত সরকারের ফ্যাসিবাদী উন্নয়ন রেটোরিকের বিরুদ্ধে স্পষ্ট অবস্থান থাকার নজির নেই। শিক্ষক ও ছাত্ররাজনীতির যে অগ্রহণযোগ্য পুরোনো ধরন, পুরো জাতিই তার বদল চায়। আর কোনো দলীয় ব্যক্তিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শীর্ষপদে নিয়োগ না দেওয়াই হতে পারে তার অন্যতম পূর্বশর্ত। ব্যক্তিগত ও দলীয় স্বার্থে কাজ করা ব্যক্তিদের পুনর্নিয়ন্ত্রণে যাওয়া বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর পুরোনো কাঠামো রূপান্তরের জন্য সঠিক পদক্ষেপ নয়।

কাজেই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর প্রশাসক পদে যারা আসীন হবেন, তাদের হতে হবে সৎ, বিদ্বান ও দল-নিরপেক্ষ। তারা যদি একজন স্বপ্নদ্রষ্টা হন এবং সে স্বপ্নকে বাস্তবায়নের কর্মপন্থা নিরূপণ করতে পারেন, তবে বিশ্ববিদ্যালয় বদলানো তাদের পক্ষে সম্ভব হবে। দেশের ক্ষমতায় যাওয়ার রাজনীতিতে যুযুধান রাজনৈতিক দলের লেজুড় হিসেবে যারা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে নিজ দলের এজেন্ডা বাস্তবায়নে ব্যস্ত থাকেন, তাদের পক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে বৈশ্বিক মানে উন্নীত করা বা এগুলোর গণতন্ত্রায়ণ করা সম্ভব না। এজন্য প্রয়োজন এমন শিক্ষকদের যারা সৎ, গুণী, ন্যায়-নীতিবান, যাদের আছে দীর্ঘ শিক্ষাদান ও মানসম্পন্ন গবেষণার প্রমাণ, যাদের দলীয় লেজুড়বৃত্তির রাজনীতি করার নয়, বরং শিক্ষার্থীবান্ধব, শিক্ষক-শিক্ষার্থীর অধিকার প্রশ্নে উচ্চকণ্ঠ ও প্রতিবাদী হওয়ার নজির আছে।

দলীয় শিক্ষক রাজনীতির বাইরে অনেক শিক্ষক স্বাধীনভাবে গত দেড় দশক ধরে বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে ভাবছেন এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ অনিয়ম ও যথেচ্ছাচারের প্রতিরোধ করতে দমন-পীড়ন সব তুচ্ছ করে শিক্ষক-শিক্ষার্থীর অধিকারের প্রশ্নে সবসময় হাজির থেকেছেন কিংবা চুপ করে ক্ষমতাসীনদের পক্ষাবলম্বন বা ছায়া হিসেবে সুবিধা ভোগ করেননি। এমন শিক্ষকদের মূল্যায়ন হওয়া প্রয়োজন। এ প্রক্রিয়ায় আন্দোলনকারী নির্দলীয় শিক্ষার্থীদের ভূমিকাও বিবেচনা করা যেতে পারে। পুরো শিক্ষাব্যবস্থা ঢেলে সাজাতে একটি শিক্ষানীতি প্রণয়ন এবং শিক্ষা কমিশন গঠন করাও জরুরি।

'এই পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্কের পক্ষ থেকে আমরা বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনসহ বিভিন্ন পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের প্রয়োজনীয় গণতান্ত্রিক সংস্কারে অন্তর্বর্তী সরকারকে মনোযোগী ও সতর্ক হওয়ার আহবান জানাচ্ছি। কেবল দলনিরপেক্ষ নামি অ্যাকাডেমিকই নন, রুগ্ন বিশ্ববিদ্যালয়-ব্যবস্থার সংস্কার নিয়ে যারা বরাবরই ভাবেন এবং সেই পরিবর্তনগুলো আনতেও প্রতিজ্ঞাবদ্ধ, এমন প্রশাসক নির্বাচন করার দাবি জানাচ্ছি।

Comments

The Daily Star  | English

Consensus talks: Poor progress may delay July Charter

Political parties have failed to reach an agreement on any reform proposals for the fifth consecutive day of the consensus talks.

10h ago