আজ রাতে বাইডেনের সঙ্গে ড. ইউনূসের বৈঠক

বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের ফাঁকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করতে যাচ্ছেন।

নিউইয়র্কের স্থানীয় সময় ২৪ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার সকাল ১১টায় (বাংলাদেশ সময় আজ রাত ৯টা) জাতিসংঘ সদর দপ্তরে এই দুই নেতার মধ্যে বৈঠক হবে।

জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী মিশনের কাউন্সিলর ফাহমিদ ফারহান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

ঢাকা ও নিউইয়র্কের উচ্চ পর্যায়ের কূটনীতিকরা বলছেন, বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ দুই নেতার এই বৈঠক ইঙ্গিত করে যে ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে মার্কিন প্রশাসন কূটনৈতিক এবং অর্থনৈতিক সম্পর্ক জোরদার করতে চায়। এর মাধ্যমে মার্কিন প্রশাসন দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়ার স্পষ্ট বার্তা দিচ্ছে।

জো বাইডেন ও ড. ইউনূসের মধ্যকার বৈঠকে বাংলাদেশ এবং যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের নতুন অধ্যায় রচনার ক্ষেত্রে কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক কীভাবে আরও বাড়ানো যায় এবং অন্তর্বর্তী সরকারের গৃহীত সংস্কার কার্যক্রম বাস্তবায়নে মার্কিন সহায়তার বিষয়ে দুই নেতা বিশদ আলোচনা করবেন বলে জানা গেছে।

ছাত্র-জনতার তীব্র আন্দোলনের মুখে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর মাত্র দেড় মাসের মাথায় ড. ইউনূস জাতিসংঘের ৭৯তম সাধারণ অধিবেশনে যোগ দিচ্ছেন। তিনি ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব নেন।

বাংলাদেশের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন বাসসকে বলেন, ড. মুহাম্মদ ইউনূসের মত বিশ্ববরেণ্য ব্যক্তিত্বের জাতিসংঘের অধিবেশনে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেয়া এবং বাংলাদেশের হয়ে কথা বলা একটা ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে বলে বিশ্বাস করি। তাই এবারের অধিবেশন বাংলাদেশের জন্য বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। 

বাংলাদেশের জাতিসংঘ স্থায়ী মিশনের একজন কূটনীতিক জানান, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট যেদিন সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে বক্তৃতা দেন, ওইদিন বিকেলে তিনি জাতিসংঘের অধিবেশনে আগত রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানদের সম্মানে সংবর্ধনার আয়োজন করেন। জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশন চলার ফাঁকে কোনো দেশের শীর্ষ নেতার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের দ্বিপক্ষীয় সাক্ষাৎ বিরল। এখন পর্যন্ত জাতিসংঘের অধিবেশনের ফাঁকে বাংলাদেশের কোনো শীর্ষ নেতার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের কোনো বৈঠক হয়নি। বাংলাদেশের রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানদের সঙ্গে সব সময় যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের সংবর্ধনায় দেখা হয়েছে, কথা হয়েছে। এর বাইরে জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশনে মার্কিন শীর্ষ নেতার সঙ্গে বাংলাদেশের সরকার প্রধানদের কোনো বৈঠক হয়নি।

ড. ইউনূসের সঙ্গে জো বাইডেনের বৈঠকের তাৎপর্যের বিষয়ে বাংলাদেশের ওই কূটনীতিক বলেন, গত ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিদল ১৫ সেপ্টেম্বর ঢাকা সফর করে গেছেন। দুই সপ্তাহের মাথায় প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বৈঠক করছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে। রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর বিভিন্ন খাতের সংস্কারসহ বাংলাদেশের সামনের দিনের অগ্রযাত্রায় যুক্তরাষ্ট্র যে সব ধরনের সহায়তা করবে, নিউইয়র্কের আসন্ন বৈঠক সেই ইঙ্গিত দিচ্ছে।

জো বাইডেনের সঙ্গে বৈঠকের পাশাপাশি ড. ইউনূস জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস, ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনী, কুয়েতের ক্রাউন প্রিন্স শেখ সাবাহ খালেদ আল-হামাদ আল-সাবাহ, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ, নেদারল্যান্ডসের প্রধানমন্ত্রী ডিক স্কোফ, নেপালের প্রধানমন্ত্রী কে পি শর্মা, ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডার লিয়েন, যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন, চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রী ওয়াং ই, আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) মহাপরিচালক গিলবার্ট হাংবো, জাতিসংঘ মানবাধিকার সম্পর্কিত হাই কমিশনার ভলকার টুর্কের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করবেন। এ ছাড়া বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট অজয় বাঙ্গা এবং আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ব্যবস্থাপনা পরিচালক ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভা বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে দেখা করবেন।

ড. ইউনূসের নিউইয়র্ক সফরকালের বিভিন্ন বৈঠক বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছেন বাংলাদেশের কূটনীতিকরা। বিশেষ করে বাংলাদেশের বর্তমান সরকারের সঙ্গে অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ বিভিন্ন দেশ এবং আন্তর্জাতিক অর্থায়ন সংস্থাগুলো যে জোরালোভাবে যুক্ত থাকবে, এটি সেই বার্তাই দিচ্ছে।

ড. মুহাম্মদ ইউনূস আগামী ২৭ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে ভাষণ দেবেন।

Comments

The Daily Star  | English

No place for Islamic extremism in Bangladesh: Yunus

Islamic extremism will never find a place in Bangladesh again, said Chief Adviser Muhammad Yunus recently

52m ago