সরকারি প্রকল্প বন্ধ, কমেছে সিমেন্টের চাহিদা

সংশ্লিষ্টদের মতে, নির্মাণকাজের অন্যতম প্রধান উপকরণ সিমেন্টের বিক্রি কমে যাওয়ায় এই শিল্পের ওপর ব্যাপক প্রভাব পড়েছে। সংকটে পড়েছেন সিমেন্ট উত্পাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো।
সিমেন্ট
আবাসন খাতে নতুন প্রকল্প না আসায় সিমেন্টের চাহিদা আরও কমেছে। ছবি: স্টার ফাইল ফটো

আকস্মিক রাজনৈতিক পটপরিবর্তন ও দেশব্যাপী চলমান অস্থিরতার প্রেক্ষাপটে সরকারি প্রকল্পগুলো বন্ধ থাকায় রিয়েল এস্টেট প্রতিষ্ঠানগুলো নির্মাণকাজ বন্ধ রেখেছে। ফলে গত কয়েক মাসে সিমেন্ট বিক্রি প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছে।

সংশ্লিষ্টদের মতে, নির্মাণকাজের অন্যতম প্রধান উপকরণ সিমেন্টের বিক্রি কমে যাওয়ায় এই শিল্পের ওপর ব্যাপক প্রভাব পড়েছে। সংকটে পড়েছেন সিমেন্ট উত্পাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো।

লাফার্জহোলসিম বাংলাদেশের প্রধান নির্বাহী ইকবাল চৌধুরী দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আন্দোলন ও রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের কারণে স্বাভাবিকের তুলনায় সিমেন্টের চাহিদা প্রায় অর্ধেক কমেছে।'

তিনি আরও বলেন, 'গত ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ঠিকাদাররা পালিয়ে যাওয়ায় অনেক সরকারি প্রকল্প বন্ধ হয়ে গেছে।'

সরকারি খাত থেকে সিমেন্টের চাহিদা কমেছে। এটি বার্ষিক সিমেন্ট ব্যবহারের ৩৫ শতাংশ।

গৃহঋণের উচ্চ সুদের কারণে ফ্ল্যাট বিক্রি কমে যাওয়ায় আবাসন খাতে নতুন প্রকল্প আসছে না। তাই সিমেন্টের চাহিদা আরও কমেছে।

একইভাবে যারা বাড়ি বানানোর কথা ভাবছিলেন, তারাও আকস্মিক রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের কারণে এ ধরনের পরিকল্পনা স্থগিত রেখেছেন।

'বর্তমানে কোনো মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নের পরিকল্পনা নেই। তাই সরকারের পক্ষ থেকে সিমেন্টের চাহিদা বাড়বে না। অন্তর্বর্তী সরকার বালি তোলার ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করেছে। এটি সিমেন্ট খাতকেও প্রভাবিত করছে।'

ইকবাল চৌধুরী আরও বলেন, 'অন্তর্বর্তী সরকার নতুন অবকাঠামো প্রকল্প নেবে না বলে সরকারি অবকাঠামো প্রকল্পে সিমেন্টের চাহিদা বাড়বে না। তাই, বেশিরভাগ বড় নির্মাতারা উত্পাদন সক্ষমতা বাড়ালেও এই খাতটি দীর্ঘ সময় নিস্তেজ থাকবে।'

সিমেন্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর ঠিকাদারদের কাছে মোটা অঙ্কের টাকা পাওনা থাকলেও সরকার বিল পরিশোধ করাতে না পারায় তারাও দায় মেটাতে পারছেন না।

বাংলাদেশ সিমেন্ট ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিসিএমএ) তথ্য অনুসারে, গত জানুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত সিমেন্ট বিক্রি তিন শতাংশের বেশি কমে আড়াই কোটি টনে দাঁড়িয়েছে। এটি গত বছরের একই সময়ে ছিল দুই কোটি ৬০ লাখ টন।

বিসিএমএ আরও জানিয়েছে, গত জুলাই ও আগস্টে সিমেন্ট প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানগুলোর আয় কম হয়েছে। তাদের ব্যবসা স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরতে সময় লাগবে।

প্রতিষ্ঠানটির হিসাবে, দেশে প্রতি বছর প্রায় ৪০ মিলিয়ন টন সিমেন্ট চাহিদার বিপরীতে প্রায় ৭৮ মিলিয়ন টন উৎপাদন হয়।

প্রিমিয়ার সিমেন্ট মিলসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আমিরুল হক ডেইলি স্টারকে বলেন, 'স্বাভাবিক অবস্থায় সিমেন্ট বিক্রি চার লাখ টন থেকে কমে বর্তমানে আড়াই লাখ টনে নেমে এসেছে।'

চাহিদা অনেক কমে যাওয়ায় উৎপাদন কমিয়ে দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। সাধারণত প্রতি মাসে প্রায় সাড়ে চার লাখ টন সিমেন্ট উৎপাদন হয়। এই মুহূর্তে তা কমে দাঁড়িয়েছে দুই দশমিক সাত লাখ টনে।

দ্রুত নগরায়ণের কারণে শহরের তুলনায় গ্রামাঞ্চলে সিমেন্টের ব্যবহার বেশি হওয়ায় রেমিট্যান্স বাড়লে সিমেন্টের চাহিদাও বাড়বে বলে তিনি আশাবাদী।

শীতে সিমেন্ট বিক্রি বাড়বে বলে মনে করেন তিনি। সার্বিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি স্থিতিশীল হলে মানুষ বাড়ির কাজ শুরু করবেন।

আকিজ সিমেন্ট কোম্পানি লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী মশিউর রহমান ডেইলি স্টারকে বলেন, 'সরকারি প্রকল্প বন্ধ থাকায় সিমেন্ট বিক্রি কমেছে। সরকারি প্রকল্পে যেসব ঠিকাদারকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল, তাদের অনেকেরই আগের সরকারের ঘনিষ্ঠ ছিল। রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর তারা পালিয়েছে।'

'অন্যরা ভয়ে কাজ করছেন না' উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, 'আরেকটি কারণ হলো, কাজ শেষে তাদের পারিশ্রমিক দেওয়া হবে এমন নিশ্চয়তা নেই।'

'বর্তমানে কোনো মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নের পরিকল্পনা নেই। তাই সরকারের পক্ষ থেকে সিমেন্টের চাহিদা বাড়বে না। অন্তর্বর্তী সরকার বালি তোলার ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করেছে। এটি সিমেন্ট খাতকেও প্রভাবিত করছে।'

মশিউর রহমান আরও বলেন, 'চাহিদা কমে যাওয়ায় প্রতি মাসে উৎপাদন দুই লাখ ১০ হাজার টন থেকে কমিয়ে এক লাখ ৪৫ হাজার টনে নামিয়ে এনেছি।'

আকিজ সিমেন্টের প্রধান নির্বাহীর মতে, তারা এখন প্রতিদিন চার হাজার ২০০ টন সিমেন্ট সরবরাহ করছে। অতীতে সরবরাহ ছিল সাড়ে ছয় হাজার টন।

প্রতিষ্ঠানটি জানায়, এ প্রেক্ষাপটে আকিজ সিমেন্ট গত কয়েক মাস ধরে প্রতি মাসে গড়ে তিন কোটি ৬০ লাখ টাকা লোকসান দিচ্ছে।

Comments

The Daily Star  | English

An economic corridor that quietly fuels growth

At the turn of the millennium, travelling by road between Sylhet and Dhaka felt akin to a trek across rugged terrain. One would have to awkwardly traverse bumps along narrow and winding paths for upwards of 10 hours to make the trip either way.

12h ago