ধামরাইয়ে ২ মাজার ভাঙচুর নিয়ে নির্বিকার প্রশাসন

ধামরাইয়ে বুচাই পাগলার মাজারে হামলা-ভাঙচুর
ধামরাইয়ে বুচাই পাগলার মাজার | ছবি: সংগৃহীত

ঢাকার ধামরাইয়ে বুচাই পাগলা ও বরকত মা মাজারে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনায় চার দিন পরও দৃশ্যমান কোনো ব্যবস্থা নেয়নি প্রশাসন। দায়সারা বক্তব্যেই আটকে আছেন তারা।

মাজার ভাঙচুরকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে উল্টো তাদের সঙ্গেই আলোচনায় বসার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন প্রশাসন।

গত বুধবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ধামরাইয়ের সানোড়া ইউনিয়নের বাটুলিয়া এলাকায় কালামপুর-সাটুরিয়া আঞ্চলিক সড়কের পাশে বুচাই পাগলা (রহ.) মাজারে হামলা করে দুর্বৃত্তরা। প্রায় দুই ঘণ্টা ধরে মাজারে তাণ্ডব চলার পর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও উপজেলা প্রশাসন এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেয়।

এলাকাবাসীর দাবি, অন্য এলাকার লোকজন এই ঘটনা ঘটিয়েছেন। হামলাকারীরা তাদের অপরিচিত।

তারা আরও বলেন, মাজারে দানের টাকায় একটি মসজিদ পরিচালনা করা হতো। দানের অর্থের একটি অংশ যেত মাদ্রাসায় এবং আরেকটি অংশ থেকে অসহায় মানুষদের সহায়তা করা হতো।

মাজার ভাঙচুরের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। তাতে দেখা যায়, বিভিন্ন বয়সী মানুষ লাঠি হাতে মাজার ভাঙচুর করছেন। একটি এক্সকাভেটর দিয়ে মাজারের মূল ভবনটি গুড়িয়ে দেওয়া হয়।

এর পরদিন বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকে গভীর রাত অবধি ধামরাইয়ের ইসলামপুর এলাকায় 'বরকত মা' মাজারটি ভাঙচুর করা হয়।

স্থানীয়রা জানান, এই মাজারটিতে মূলত নারীরা দল বেঁধে আসতেন। প্রার্থনা করে চলে যেতেন। মাজারটিতে কোনো অনুষ্ঠান হতো না। এমনকি ওরশও হতো না। শুধু কবরটিই বাঁধানো ছিল।

বুচাই পাগালার মাজারটি ভাঙচুরে নিয়েছিলেন কুশুরা দক্ষিণ কান্টাহাটি মসজিদের ইমাম মনিরুল ইসলাম।

তিনি বলেন, এখানে শিরক-বিদাতি কাজকর্ম চলছিল। আলহামদুলিল্লাহ, এখন প্রতিরোধ করার সময় হয়েছে। এখন যদি বসে থাকি, তবে কেয়ামতের ময়দানে হিসাব দিতে হবে। যে কারণে আমরা ধামরাইয়ের আলেম-ওলামারা বিভিন্ন সংগঠন থেকে একত্রিত হয়ে এটি বন্ধ করি। ধামরাই ওলামা পরিষদ, ইমাম পরিষদ, কালামপুর আঞ্চলিক ইমাম পরিষদ এখানে ছিল।'

বুচাই পাগলা (রহ.) এর মাজারের পাশের বাড়িটি জাহাঙ্গীর আলমের (৫৫)। মাজার ভাঙচুরে ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, এলাকার একটি লোকও মাজার ভাঙার সঙ্গে জড়িত না।

বুচাই পাগলা (রহ.) মাজারের অর্থে পরিচালিত মসজিদে গত এক যুগ ধরে ইমামতি করছেন মো. সোহেল মাহমুদ।

তিনি বলেন, 'এই মাজারে সিজদাহ করতে দেওয়া হতো না। মাজারের দানবাক্সের টাকা মানুষের জন্য ব্যয় করা হতো। এলাকার মানুষ খুবই কষ্ট পেয়েছে।'

গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দেশের বিভিন্ন এলাকায় মাজার ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। এসব ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর থেকে। গতকাল শনিবার প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ ঘোষণা দেওয়া হয়। কিন্তু ধামরাইয়ের এই মাজার দুটি ভাঙচুরে ঘটনায় এখনো কোনো দৃষ্টান্তমূলক পদক্ষেপ নেয়নি প্রশাসন। এ নিয়ে স্থানীয়রা চরম ক্ষোভ প্রকাশ করছেন।

মাজার ভাঙচুরের ঘটনায় কি ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে জামতে চাইলে ধামরাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল মামুন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, বুচাই পাগলা (রহ.) মাজারটি ভাঙচুরের খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে উপজেলা প্রশাসন থেকে সেনাবাহিনী ও র‍্যাবের টিমের সঙ্গে একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট পাঠিয়ে ভাঙচুর বন্ধ করা হয়। ভাঙচুরকারীদের কিছু দাবি রয়েছে। আমরা তাদের দাবিগুলো আগামী মঙ্গলবার শুনব। তাদের সাথে ওই দিন বসে একটা সিদ্ধান্ত নেব। আর ইসলামপুর এলাকার মাজারটি ভাঙচুর করা হয় রাতে। আমরা খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে লোক পাঠিয়ে সেটা বন্ধ করি। দুটি বিষয়ই আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। যে নির্দেশনা আসবে আমরা সেটাই পালন করব।

জানতে চাইলে ধামরাই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনিরুল ইসলাম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, আমি সদ্য থানায় যোগদান করেছি। মাজার ভাঙচুরের ঘটনায় আমরা দ্রুত কোনো ব্যবস্থা নিতে পারছি না৷ আমাদের যানবাহন নেই। কেউ চাইলে মামলা করতে পারবে।

হাসিনা সরকারের পতনের পর ধামরাইয়ে স্থবির হয়ে আছে পুলিশের কার্যক্রম। কোনো অপ্রতিকার ঘনটা ঘটলে র‍্যাব ও সেনাবাহিনীর টিম গিয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করে।

মাজার ভাঙচুরের ঘটনায় র‍্যাবের পক্ষ থেকে কি ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে জানতে চাইলে র‍্যাব-৪ (সিপিসি-২) এর কোম্পানি কমান্ডার জালিস মাহমুদ খান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, র‍্যাব মূলত কোনো ঘটনার লিখিত অভিযোগ পেলে ছায়া তদন্ত শুরু করে। ঘটনা উদঘাটন করে। মাজার ভাঙচুরের ঘটনায় কেউ অভিযোগ করেনি। তারপরও আমরা ঘটনা দুটির ভিডিও ফুটেজ সংগ্রহ করেছি। ফুটেজ বিশ্লেষণ করছি।

Comments

The Daily Star  | English

Teknaf customs in limbo as 19 mt of rice, authorised by AA, reaches port

The consignment of rice weighing 19 metric tonnes arrived at Teknaf land port on Tuesday evening with the documents sealed and signed by the Arakan Army

48m ago