দুই মেয়াদের বেশি কেউ প্রধানমন্ত্রী থাকতে পারবে না: প্রস্তাব ইসলামি দলগুলোর

ছবি: পিআইডি

সাতটি ইসলামি দল প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে প্রস্তাব করেছেন, একজন ব্যক্তি যেন দুই মেয়াদের বেশি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে না পারেন, সেই বিধান তৈরি করতে হবে।

এ ছাড়া, প্রয়োজনীয় রাষ্ট্রীয় সংস্কার দ্রুত সম্পন্ন করে যৌক্তিক সময়সীমার মধ্যে জাতীয় নির্বাচনের ব্যবস্থা করার জন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছে অধিকাংশ রাজনৈতিক দল।

আজ শনিবার প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে আলাদা মত বিনিময় সভায় এসব দাবি জানায় দলগুলো।

সূত্র জানায়, প্রধান উপদেষ্টা রাজনৈতিক দলগুলোকে বলেছিলেন যে তার সরকার দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকতে চায় না। তবে সংস্কার করার জন্য তাদের একটি যৌক্তিক সময়সীমা প্রয়োজন।

গ্রহণযোগ্য জাতীয় নির্বাচন নিশ্চিত করা, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার এবং স্বৈরাচার ও দুঃশাসন প্রতিরোধে দেশের নির্বাচন ব্যবস্থা, নির্বাচন কমিশন, পুলিশ, প্রশাসন ও বিচার বিভাগসহ সব রাষ্ট্রীয় অঙ্গকে ঢেলে সাজাতে সরকারকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন নেতারা।

প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎকালে সব রাজনৈতিক দল রাষ্ট্রীয় সংস্কার ও বিভিন্ন দাবির বিষয়ে পৃথকভাবে লিখিত প্রস্তাব পেশ করে। দলগুলোর শীর্ষ নেতারাও তাদের আলোচনার ফলাফল সম্পর্কে গণমাধ্যমকে জানান।

এর মধ্যে সাতটি ইসলামি দল জানায়, তারা প্রধান উপদেষ্টাকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন এবং আসন্ন দুর্গাপূজায় যেকোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দিয়েছে।

রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় ছয়টি ইসলামি দলের সঙ্গে প্রাথমিক বৈঠকের মাধ্যমে প্রধান উপদেষ্টা দফায় দফায় মত বিনিময় সভা শুরু করেন।

সভায় আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল, শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান, ধর্ম উপদেষ্টা এ এফ এম খালিদ হোসেন, প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মাহফুজ আলম উপস্থিত ছিলেন।

খেলাফত মজলিস, নিজামে ইসলাম, হেফাজতে ইসলাম, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, খেলাফত আন্দোলন ও জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের জ্যেষ্ঠ নেতারা দুপুর ৩টায় যমুনায় পৌঁছান এবং অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রধানের সঙ্গে এক ঘণ্টাব্যাপী বৈঠক করেন।

এরপর বিকেল ৪টায় ইসলামী আন্দোলনের নেতারা প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।

এরপর লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি), জাতীয়তাবাদী সমন্বয় জোট, ১২ দলীয় জোট, বাংলাদেশ জাসদ, গণফোরাম, জাতীয় পার্টিসহ বেশ কয়েকটি দলের শীর্ষ নেতারাও প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে আলোচনা করেন। রাত ৮টা পর্যন্ত এই আলোচনা চলে।

সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এলডিপির চেয়ারম্যান অলি আহমদ বলেন, তারা প্রধান উপদেষ্টাকে জানান, রাজনৈতিক দলগুলোকে সম্পৃক্ত রাখার একমাত্র উপায় হচ্ছে নির্বাচনের সুস্পষ্ট রোডম্যাপ বা পূর্বাভাস দেওয়া।

তিনি বলেন, 'এই রোডম্যাপ ছয় মাস বা নয় মাস পর্যন্ত হতে পারে। প্রয়োজনীয় সংস্কার সম্পন্ন হওয়ার পরে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়া উচিত বলে আমরা জোর দিয়েছি। নির্বাচন অবশ্যই হতে হবে এবং যত তাড়াতাড়ি নির্বাচন হবে ততই অন্তর্বর্তীকালীন সরকার, রাজনৈতিক দল এবং দেশের জন্য মঙ্গল।'

তিনি জোর দিয়ে বলেন, শান্তি, সুশাসন ও গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠায় প্রয়োজনীয় সংস্কার সম্পন্ন করার আগে নির্বাচন পরিচালনা করা উচিত নয়।

তিনি বলেন, 'আগে সংস্কার সম্পন্ন করতে হবে। দেশের মানুষের মধ্যে মানবিকতা ফিরিয়ে আনতে হবে।'

রাজনৈতিক দলগুলোকে ব্যস্ত রাখতে সরকার জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোর নির্বাচন করতে পারে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

নির্বাচন নিয়ে এলডিপির বক্তব্যের বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টার প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'প্রধান উপদেষ্টা জোর দিয়ে বলেছেন, প্রতিটি ইস্যুতে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐক্য গুরুত্বপূর্ণ। আমি যদি উত্তর দিকে যাই আর আপনি দক্ষিণে যান, তাহলে দেশের সমস্যার সমাধান হবে না। সব পক্ষের ঐকমত্যে পৌঁছাতে হবে।'

এলডিপি নেতা আরও বলেন, তারা রাষ্ট্রীয় সংস্কারের বিষয়ে ৮৩ দফা প্রস্তাব প্রধান উপদেষ্টার কাছে জমা দিয়েছেন।

তিনি বলেন, ড. ইউনূসকে তারা বলেছেন যে, ছোটখাটো কারণে যদি জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল করা যায়, তাহলে হাজার হাজার ছাত্র-মানুষ হত্যা এবং ১৫ বছর ধরে বিরোধীদলীয় নেতাকর্মীর গুমের জন্য দায়ী আওয়ামী লীগের নিবন্ধন কেন বাতিল করা হবে না? তাদের নিবন্ধন বাতিল করা একান্ত প্রয়োজন।

ওলি বলেন, তারা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে সতর্ক করে বলেছিলেন যে আগামী দিনে আরও অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটতে পারে।

তিনি বলেন, 'আমি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে জানিয়েছি, তারা এখনও শঙ্কামুক্ত নয়। ষড়যন্ত্রকারীরা সক্রিয়... যারা হাসিনার অনুগত ছিল তাদের বরখাস্ত করা হয়নি, তাদের বিরুদ্ধে তদন্তও শুরু হয়নি। কেবল তাদের এক অবস্থান থেকে অন্য অবস্থানে স্থানান্তর করা সমস্যার সমাধান করবে না ... তারা দেশের শত্রু, তাদের জেলে ঢোকানো উচিত।'

ছয় দলের প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক শেষে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের সাধারণ সম্পাদক মাওলানা মামুনুল হক বলেন, 'আমাদের মধ্যে ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে। আমরা তাকে (ড. ইউনূস) বলেছি যৌক্তিক সময়সীমার মধ্যে প্রয়োজনীয় সংস্কার বাস্তবায়ন করতে এবং নির্বাচন আয়োজনে অপ্রয়োজনীয় বিলম্ব এড়াতে।'

তিনি বলেন, প্রধান উপদেষ্টা আরও বলেছেন, প্রয়োজনীয় সংস্কারের পর তারা অনতিবিলম্বে নির্বাচন আয়োজন করবেন।

মামুনুল বলেন, প্রধান উপদেষ্টা ইঙ্গিত দিয়েছেন এ জন্য প্রস্তুতি ও ব্যবস্থা চলছে।

তিনি বলেন, 'আমরা নির্দিষ্ট কোনো সময়সীমা নিয়ে আলোচনা করিনি।'

মামুনুল হক বলেন, বৈঠকে ইসলামি দলগুলো দুর্গাপূজায় মন্দির ও পূজামণ্ডপের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে পূর্ণ সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে।

তিনি বলেন, হেফাজতে ইসলামের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে দায়ের করা প্রায় তিনশ মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানানো হয়েছে। আমরা অনুরোধ করেছি, নির্বাহী আদেশ ও আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে যত দ্রুত সম্ভব এসব মামলা প্রত্যাহার করা হোক।

 

Comments

The Daily Star  | English

Crowd control: Police seek to stop use of lethal weapon

The police may stop using lethal weapons and lead pellets for crowd control as their widespread use during the July mass uprising led to massive casualties and global criticism.

3h ago