ত্রাণ নিতে গিয়ে সড়কে ঝরল ৩০ বছর অপেক্ষার সন্তানের প্রাণ

ত্রাণ নিতে গিয়ে সড়কে ঝরল ৩০ বছর অপেক্ষার সন্তানের প্রাণ
ফেনী জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগের করিডোরে রিজিয়া খাতুন | ছবি: আহমাদ ইশতিয়াক/স্টার

বন্যায় বাড়ি-ঘর প্লাবিত হওয়ায় হুমায়ূন কবির, তার স্ত্রী রিজিয়া খাতুন ও সাত বছর বয়সী একমাত্র সন্তান জাফরুল ইসলাম প্রান্তকে নিয়ে আশ্রয় নিয়েছিলেন ফেনীর দাগনভূঞার জায়লস্কর ইউনিয়নের সিলোনিয়া বাজারের পাশে এক আত্মীয়ের বাড়িতে।

পরিকল্পনা ছিল তারা আগামীকাল পার্শ্ববর্তী উত্তর আলমপুর গ্রামে নিজেদের বাড়িতে ফিরে যাবেন। বন্যার আঘাত সামলে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা শুরু করবেন। তার আগেই এই দম্পতির জীবনে আরও বড় আঘাত নেমে এলো!

আজ বুধবার দুপুরে সিলোনিয়া বাজারের পাশের এলাকায় বন্যার্তদের মধ্যে ত্রাণ হিসেবে খিচুড়ি বিতরণ করা হয়। বিকেলে সেই ত্রাণ নিতে যাওয়ার সময় ট্রাকচাপায় ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় তাদের একমাত্র ছেলের।

স্বজনরা জানান, রিজিয়া পেছন থেকে অনেকবার ডেকেছিলেন। কিন্তু প্রান্ত
কানে তোলেনি।

এদিন বিকেল ৪টার দিকে ফেনী-নোয়াখালী আঞ্চলিক মহাসড়কে এই সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে।

স্বজনরা আরও জানান, বিয়ের পরে প্রায় তিন যুগ নিঃসন্তান ছিলেন হুমায়ূন-রিজিয়া। সন্তানের আশা যখন এক প্রকার ছেড়ে দিয়েছিলেন, সে সময় বিয়ের ৩০ বছর পর তাদের ঘর আলো করে কোলে আসে প্রান্ত। দীর্ঘ অপেক্ষার সন্তানকে সারাক্ষণ চোখে চোখে রাখতেন রিজিয়া।

এদিন বিকেলে ফেনী জেনারেল হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, শিশুটির মায়ের বুকফাটা আহাজারিতে ভারী হয়ে উঠেছে চারপাশ। নির্বাক দাঁড়িয়ে আছেন হুমায়ূন।

হাসপাতালের দ্বিতীয় তলার জরুরি বিভাগের করিডোরে রিজিয়া আহাজারির সুরে বলছিলেন, 'আঁর হেডের মানিকরে কোনুগা আনি দ না (আমার বুকের মানিককে কেউ এনে দাও)। আঁই অন কারে লই বাঁচমু (আমি এখন কাকে নিয়ে বাঁচবো)। আঁই আঁর মানিকরে হিচকিনারের তুন মানা কইছিলাম এঁরে তুই যাইচ্চা (আমি আমার মানিকরে পেছন থেকে মানা করে বলেছিলাম, ওরে তুই যাস না)। হেতে কইলো, আম্মা আমনের লাইও আনমু (সে বললো, আম্মা আপনার জন্যও আনবো)। আঁর মানিকরে আঁর কাছে দিই দেন গোঁ (আমার মানিককে আমার কাছে দেন)। এগো আঁর মানিকরে ইক্কিনি চামু (আমি আমার মানিককে শুধু একটু দেখতে চাই)।'

রিজিয়ার আর্তনাদে হাসপাতালের অন্য রোগী ও তাদের স্বজনদের চোখ ভিজে যায়।

প্রান্তর এক স্বজন রেহেনা খানম জানান, '৩০ বছর পরে ছেলের জন্ম হওয়ায় রিজিয়া দীর্ঘ দিন ধরে শারীরিক নানা জটিলতাতে ভুগেছিলেন।'

হাসপাতালে আসা আরেক রোগীর স্বজন সজল আহমেদ বলেন, '৩০ বছর পর একটা ছেলে হয়েছিল, তাও এভাবে মারা গেল! আমরা মানতেই পারছি না। এই মা কী করে সহ্য করবেন!'

ফেনী জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা আসিফ ইকবাল ডেইলি স্টারকে বলেন, 'বর্তমানে নিহত শিশুটির মরদেহ হাসপাতালের মর্গে রয়েছে। প্রয়োজনীয় পুলিশি তদন্ত শেষে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে।'

Comments

The Daily Star  | English
Drug sales growth slows amid high inflation

Drug sales growth slows amid high inflation

Sales growth of drugs slowed down in fiscal year 2023-24 ending last June, which could be an effect of high inflationary pressure prevailing in the country over the last two years.

18h ago