গাজী টায়ার কারখানায় আগুন

‘আল্লাগো, আমার মার কোলটা যেন খালি না হয়’

গাজী টায়ার কারখানায় আগুনের ঘটনায় ভবনের ভেতরে ঢুকে পড়া অনেকে নিখোঁজ বলে অভিযোগ করেন স্বজনরা। ছবি: স্টার

রূপগঞ্জে গাজী টায়ার কারখানার একটি ছয়তলা ভবনে তখনো আগুন জ্বলছিল। কারখানার মূল ফটকের সামনে দাঁড়িয়ে এক যুবক মোবাইল ফোনে বলছিলেন, 'এহোনো কোনো লাশ পাওয়া যায় নাই। দোয়া কইরেন ভাইডারে যেন সুস্থ শরীলে পাই।'

মুঠোফোনে কথা বলা যুবকের নাম মো. মিজান। তার ভাই মাছ বিক্রেতা মো. বেল্লাল হোসেন (৩৬) গত রোববার রাতে কারখানায় লুটপাট চলার সময় গিয়েছিলেন। তখন থেকে নিখোঁজ বেল্লাল।

মিজানের সঙ্গে কথা বলতে চাইলে দ্য ডেইলি স্টারকে তিনি জানান, কারখানার অদূরে বরপা এলাকায় পরিবার নিয়ে থাকেন তার ভাই বেল্লাল। রোববার রাতে এলাকার কয়েকজন বন্ধুর সঙ্গে গাজী টায়ার কারখানার দিকে গিয়েছিলেন।

এরপর থেকে ভাই বেল্লালের খোঁজ পাচ্ছেন না মিজান। নিখোঁজ ভাইয়ের কথা বলতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন এ যুবক।

তিনি বলেন, 'আমার ভাই ব্যবসার কাজ শ্যাষ কইরা সকালে বাড়িতে ফেরে। আমরা ভাবছি সে আড়তে আছে। সকাল ১০টার পর তারে ফোন দিলে ফোন বন্ধ পাই। জানতে পারি রাতে আড়তেও যায় নাই।'

বিলাপ করে বলেন, 'আল্লাগো আমার মার কোলডা যেন খালি না হয়। আমার মায় পোলা হারাইলে মইরা যাইব গা। তারে আল্লা বাঁচাইয়া রাইখ।'

গতকাল রাত ৯টার দিকে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের রুপসী এলাকার ওই কারখানায় আগুন লাগে। তবে কাল দুপুর থেকেই স্থানীয়রা কারখানায় ঢুকে লুটপাট শুরু করে।

প্রায় ২২ ঘণ্টা পর আজ সোমবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। তবে, লুটপাটের সময় কারখানায় প্রবেশ করা অনেকেই আগুন লাগার পর কারখানার ভেতরে আটকা পড়েন বলে জানা গেছে।

সেখানে কর্তব্যরত ফায়ার সার্ভিসের কর্মীদের কাছে স্বজন নিখোঁজের অভিযোগ করেন স্থানীয় অনেকে।       

আজ বিকেলে জ্বলন্ত কারখানা ভবনের সামনে দাঁড়িয়ে কাঁদছিলেন কিশোরী সুমাইয়া আক্তার। তার বাবা সজীব ভূঁইয়া গতরাতে কারখানায় গিয়েছিলেন বলে জানায় মেয়েটি। রাত থেকে সজীব ভুঁইয়ার খোঁজ মিলছে না।

সুমাইয়ার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা তার মা কল্পনা আক্তার ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমার স্বামীর একটি জামদানি শাড়ি তৈরির কারখানা আছে। গতকাল কারখানার শ্রমিক মো. সাদ্দাম গাজী কারখানা লুটপাটের সময় এসেছিল। তার খোঁজে আমার স্বামী রাতে কারখানায় এসেছিলেন। সবশেষ রাত ১০টায় ফোনে সে মায়ের সঙ্গে কথা বলে। এরপর থেকে ফোন বন্ধ।'

পাশেই কাঁদছিলেন কারখানার অদূরে কলাবাগ এলাকার বাসিন্দা মনি আক্তার। তিনি জানান, তার রাজমিস্ত্রি স্বামী মো. রাশেদ গতরাত সাড়ে ৮টার দিকে কারখানায় গিয়েছিলেন। তার সঙ্গে ওই এলাকার আরেক বাসিন্দা। রাতে রাশেদ বাসায় না ফেরেননি। মোবাইল ফোনে কল দিলেও বন্ধ পান মনি।

মনি বলেন, 
'সারারাত ধরে স্বামীকে খুঁজতেছি পাই নাই। যার সাথে আসছিল তার আমি চিনি না। আমি এখন কী করমু?'  বলে কাঁদতে কাঁদতে রাস্তায় বসে পড়েন তিনি।

Comments

The Daily Star  | English
Protests disrupt city life in Dhaka

Protests disrupt city life, again

Protests blocking major thoroughfares in Karwan Bazar and Shahbagh left the capital largely paralysed

1h ago