ভেঙে গেছে মুছাপুর স্লুইসগেটের রেগুলেটর, নোয়াখালীতে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি

মুছাপুর স্লুইসগেটের রেগুলেটর ভেঙে পড়ায় কোম্পানীগঞ্জে বন্যার পানি প্রবেশ করছে। ছবি: সংগৃহীত

প্রবল বর্ষণ ও উজানের পানির চাপে নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জে ছোট ফেনী নদীতে মুছাপুর স্লুইসগেটের রেগুলেটর ভেঙে গেছে।

নোয়াখালী পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মুন্সি আমির ফয়সাল দ্য ডেইলি স্টারকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

আজ সোমবার সকাল ১০টার দিকে রেগুলেটর ভেঙে যায়। এতে কোম্পানীগঞ্জ ও কবিরহাট উপজেলার বন্যা পরিস্থিতি আশঙ্কাজনকভাবে অবনতির সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।

গত শনিবার রাত থেকে আজ সোমবার সকাল পর্যন্ত টানা  বৃষ্টিতে নোয়াখালী জেলার ৮ উপজেলা ও ৭ পৌর এলাকার  ৮২টি ইউনিয়নে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। বৃষ্টির কারণে পানি বেড়েছে ৩-৪ ইঞ্চি। 

নোয়াখালীর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক শারমিন আরা দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, গত ২১ আগস্ট থেকে এ পর্যন্ত বন্যায় নোয়াখালীতে ৫ জন মারা গেছেন। এর মধ্যে ৩ শিশু পানিতে ডুবে ও ২ যুবক বিদ্যুৎস্পৃষ্টে মারা যান। 

তিনি বলেন, 'জেলায় ২০ লাখ মানুষ পানিবন্দি। এক হাজার ৯৮টি আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছেন এক লাখ ৮২ হাজার  ৩০৯ জন।'

বেগমগঞ্জ উপজেলার বাংলাবাজার এলাকার বাসিন্দা আরিফুল ইসলাম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'বেগমগঞ্জে শুক্র ও শনিবার বৃষ্টি ছিল না। শনি ও রোববার রাত থেকে টানা বৃষ্টিতে পানি আবার বেড়েছে। পানিবন্দিদের মাঝে খাবার ও বিশুদ্ধ পানির তীব্র অভাব দেখা দিয়েছে।'

স্থানীয়রা জানায়, বেগমগঞ্জের চৌমুহনী পৌরসভার সরকারি এসএ কলেজ রোড, গনিপুর, নরত্তোমপুর, হাজীপুর, বিসিক শিল্প এলাকা, মীর ওয়ারিশপুর, একলাশপুর ও শরীফপুর ইউনিয়নের প্রতিটি বাড়ি ৩-৪ ফুট পানির নিচে। 

সেনবাগ পৌরসভার বাসিন্দা নূরনবী বাচ্চু ডেইলি স্টারকে বলেন, 'গত ১৮-২০ দিন ধরে আমরা পানিবন্দি। গত দুই দিনের বৃষ্টিতে পানি বেড়েছে। পানিবন্দি হাজারো মানুষ দুর্বিষহ জীবনযাপন করছে। খাবার ও বিশুদ্ধ পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে।'

তিনি আরও বলেন, 'সেনবাগে নৌকার অভাবে উপজেলা সদর থেকে ৫-৬ কিলোমিটার দূরের বানভাসিদের কাছে ত্রাণ পৌঁছানো সম্ভব না।'

চাটখিল উপজেলা নির্বাহী অফিসার শেখ আহছান উদ্দিন ডেইলি স্টারকে বলেন, 'বৃষ্টিতে পানি ৬-৭ ইঞ্চি বেড়ে গেছে। পানি নিষ্কাশনের কোনো ব্যবস্থা নেই। ত্রাণ হিসেবে ২০ টন চাল ও এক লাখ টাকা পেয়েছি। ৬২টি আশ্রয়কেন্দ্রে উপজেলার ৭ হাজার বানভাসি মানুষ আশ্রয় নিয়েছে।'

সোনাইমুড়ীর উপজেলা নির্বাহী অফিসার কানিজ ফাতেমা বলেন, 'গতকালের বৃষ্টির কারণে বন্যার পানি ২-৩ ইঞ্চি বেড়েছে। ২০০ আশ্রয়কেন্দ্রে ৬০ হাজারের মতো মানুষ আশ্রয় নিয়েছে। ৮০ মেট্রিক টন চাল ও নগদ ৩ লাখ টাকা বরাদ্দ পাওয়া গেছে।'

কুমিল্লার লাকসাম ও মনোহরগঞ্জ উপজেলার পানি সোনাইমুড়ীর ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় পানি বেড়েছে বলে জানান তিনি।

সেনবাগের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জিসান বিন মাজেদ বলেন, 'ফেনী থেকে পানির চাপ আসছে। পানি নামার জমিদারহাট ও চৌমুহনী খাল ভরাট থাকায় পানি নামার কোনো সুযোগ নেই। তাই সেনবাগে বন্যা পরিস্থিতি দীর্ঘায়িত হওয়ার আশঙ্কা আছে।'

কোম্পানীগঞ্জের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জানান, সিরাজপুর ও চরপার্বতী ইউনিয়ন দিয়ে ফেনীর পানি প্রবেশ করছে উপজেলায়। সোমবার সকাল ১০টার দিকে মুছাপুর রেগুলেটর ভেঙে গিয়ে পানির চাপ বৃদ্ধির শঙ্কা দেখা দিয়েছে। ভাটার সময় পানি কমলেও জোয়ারের সময় পানির কোম্পানীগঞ্জে প্রবেশ করবে।

অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক শারমিন আরা জানান, নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকায় পানি সরছে না। মুছাপুরের রেগুলেটর সোমবার সকালে ভেঙে যাওয়ায় বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতির আশঙ্কা আছে।

তিনি বলেন, 'আশ্রয়কেন্দ্রে জেলার এক লাখ ৮২ হাজার ৩০৯ জন আশ্রয় নিয়েছে। বন্যাকবলিত এলাকার জন্য নগদ ৫০  লাখ টাকা এবং ৮৮২ মেট্রিকটন চাল ও এক হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।'

Comments

The Daily Star  | English

Thailand sees growing influx of patients from Bangladesh

Bangladeshi patients searching for better healthcare than that available at home are increasingly travelling to Thailand instead of India as the neighbouring country is limiting visa issuances for Bangladeshi nationals.

13h ago