‘কার্টুনে বিদ্রোহ’

ছবি: সাদী মুহাম্মাদ আলোক/স্টার

কার্টুন যে কতটা শক্তিশালী ও প্রতিবাদের অনন্য ভাষা হতে পারে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে তার আঁচ বেশ ভালোভাবেই পাওয়া গেছে। এবারের কোটা সংস্কার আন্দোলন থেকে সরকার পতনের এক দফা পর্যন্ত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ছিল প্রতিবাদী ও ব্যঙ্গাত্মক কার্টুনে সয়লাব। এক কথায় বলতে গেলে 'কার্টুনে কার্টুনে বিদ্রোহ' হয়েছে যেন।

ছবি: সাদী মুহাম্মাদ আলোক/স্টার

সেইসব কার্টুন নিয়ে বাংলাদেশ কার্টুনিস্ট অ্যাসোসিয়েশন, দৃক ও ইয়ার্কির সহযোগিতায় রাজধানীর দৃক গ্যালারিতে চলছে 'কার্টুনে বিদ্রোহ' নামে ব্যতিক্রমী এক প্রদর্শনী। শুক্রবার বিকেলে এই প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক উমামা ফাতেমা। ৮২ জন কার্টুনিস্টের আঁকা প্রায় ১৭৫টি কার্টুনের এই প্রদর্শনী ২৩ আগস্ট (বিকেল ৩টা থেকে রাত ৮টা) পর্যন্ত চলবে।

ছবি: সাদী মুহাম্মাদ আলোক/স্টার

আয়োজকরা এক বিবৃতিতে জানান, দেশের প্রতিটি মানুষ এই মুহূর্তে রাজনীতি সচেতন, প্রতিটি আড্ডা রাজনৈতিক আলাপে মুখর। মানুষ প্রাণ খুলে কথা বলছে, অন্যের মতামত গ্রহণ করছে, উপভোগ করছে বাকস্বাধীনতা। অথচ এই কিছুদিন আগেও দেখা যেত মতপ্রকাশে কী অদ্ভুত সংকোচ। রাজনৈতিক ঘটনা জাতীয় জীবনে ঘটে চলেছিল অহরহ, কিন্তু এ নিয়ে কার্টুন একেবারে হাতেগোনা। যারা করে গেছেন, তাদেরও মাথায় রাখতে হয়েছে অনেক আশঙ্কা, ভীতি।

ছবি: সাদী মুহাম্মাদ আলোক/স্টার

বিবৃতিতে বলা হয়, সাম্প্রতিক বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে দেখা গেছে অভূতপূর্ব এক দৃশ্য। যতই ভয় চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে, তা জয় করে জনতা হয়ে উঠছে ততই দুর্দম। আর ভয়কে জয় করলে, মতপ্রকাশে অসংকোচ হয়ে উঠলে কার্টুন কেমন জ্বলে উঠতে পারে, এবার আমরা দেখেছি। প্রথম আর্টওয়ার্ক এসেছে কার্টুনিস্টদের কাছ থেকেই। প্রথিতযশারা তো এঁকেছেনই, প্রাণখুলে তাতে যোগ দিয়েছেন নবীনরা। কেউ প্রকাশ করেছেন ব্যক্তিগত সোশ্যাল মিডিয়ায়, কেউ এঁকেছেন সংবাদমাধ্যমের পাতায়। কেউ নামে এঁকেছেন, কেউ বেনামে এঁকেছেন, অসংখ্য মানুষের শেয়ারে তা ছড়িয়ে গেছে অন্তর্জালে।

ছবি: সাদী মুহাম্মাদ আলোক/স্টার

এই প্রদর্শনীর বিষয়ে কার্টুনিস্ট মেহেদী হক দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'একটা সময় আমাদের দেশে কার্টুনের খরা যাচ্ছিল, মানুষ আঁকতে ভয় পেত। তবে এবার তরুণরা সেই ভয় থেকে যেমন বের হয়ে এসেছে, অন্যান্যদেরও বের হয়ে আসতে সাহায্য করেছে। এটা ইতিহাসের একটা বড় মোড় পরিবর্তন, যদিও আল্টিমেট না। সামনে আমরা কী দেখব তা জানি না। তবে এই প্রদর্শনীটির ঐতিহাসিক গুরুত্ব অনেক।'

ছবি: সাদী মুহাম্মাদ আলোক/স্টার

'সবাই এস্থেটিক জিনিস দেখতে দেখতে অভ্যস্ত হয়ে যাচ্ছিল। তবে এবার তরুণরা আমাদের বুঝিয়ে দিয়েছে যে, সাহস করে আঁকলে কিছু হয় না। কয়জনকে গুলি করে মারবে। সাহসিকতার এই বিষয়টি কার্টুনেও উঠে এসেছে। এটা যে প্রতিবাদের একটা অনন্য মাধ্যম হতে পারে, যে আঁকলো না, সে-ও দেখলো। তার মধ্যেও এক ধরনের প্রতিবাদের ভাষা তৈরি হবে', যোগ করেন তিনি।

ছবি: সাদী মুহাম্মাদ আলোক/স্টার

ইয়ার্কি সম্পাদক সিমু নাসের ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমরা মাঝে মাঝে বলি, আর্ট-কালচার কী কাজে লাগে? তবে এবার আমরা দেখতে পেলাম যে আর্ট-কালচার কী কাজে লাগে। পুরো আন্দোলনের বড় অংশেই ছিল স্লোগান, গ্রাফিতি, কার্টুন, র‌্যাপ গান। চারদিকে একটা দারুণ জিনিস হয়ে গেছে। তরুণদের পথ রুদ্ধ করে দিলে তারা যে সব কিছু ভেঙে-চুড়ে এই কাজগুলো করতে পারে, এই কার্টুনগুলো তার বড় প্রমাণ।'

'আমাদের একটি দুঃখ ছিল যে, আগে যে হারে পলিটিক্যাল কার্টুন হতো, সেটা আর হচ্ছিল না, দৈনিক পত্রিকায় হচ্ছিল না। তবে এবার নবীন, প্রবীণ সবাই মন খুলে কার্টুন এঁকেছেন, শেয়ার করেছেন। এই ধরনের পরিস্থিতিতে কার্টুন যে কতটা শক্তিশালী, তা আবার আমরা টের পেলাম', বলেন তিনি।

ছবি: সাদী মুহাম্মাদ আলোক/স্টার

প্রদর্শনীতে আসা সংগীতশিল্পী রেজাউল করিম লিমন ডেইলি স্টারকে বলেন, 'কার্টুন তো একটা শক্তিশালী মাধ্যম, সময়ের প্রতীক। কার্টুনের মাধ্যমে আমরা প্রতিবাদ দেখেছি। এগুলোর যে ম্যাসেজ, সেটা তো খুব শক্তিশালী। আন্দোলনের সময় কিছু কার্টুন আমরা ফেসবুকে দেখেছি। কিন্তু একসঙ্গে সবগুলো এখন দেখা যাচ্ছে। ব্যাপারটি অত্যন্ত আনন্দের। কার্টুনের মাধ্যমে প্রতিবাদের যে ভাষা, সেটা তো চমৎকার। একটা কার্টুন এঁকে সঙ্গে ছোট দুইটা লাইন থাকলে অনেক কিছু বলা যায়, শক্তিশালী বার্তা দেওয়া যায়, মানুষের কাছে পৌঁছানো যায়।'

'আমরা চাই আরও বেশি করে কার্টুনের চর্চা হোক। একইসঙ্গে মুক্তভাবে সব শিল্পেরই চর্চা হোক। মানুষের প্রতিবাদের অধিকার বজায় থাকুক। মত প্রকাশের স্বাধীনতা থাকুক। এসবের মাধ্যমেই আমরা উন্নত দেশ হিসেবে এগিয়ে যাব', যোগ করেন তিনি।

Comments

The Daily Star  | English

Teknaf customs in limbo as 19 mt of rice, authorised by AA, reaches port

The consignment of rice weighing 19 metric tonnes arrived at Teknaf land port on Tuesday evening with the documents sealed and signed by the Arakan Army

4h ago