আমি কি আবার ফুটবল খেলতে পারবো?

আমি কি আবার ফুটবল খেলতে পারবো?
মুহাম্মদ সোলাইমান | ছবি: শাহীন মোল্লা/স্টার

রাজধানী ঢাকার মিরপুর-১৩ নম্বর সেকশন এলাকায় গত ১৯ জুলাই সন্ধ্যায় নাস্তা কিনতে বাসা থেকে বের হয়ে গুলিবিদ্ধ হয় নয় বছর বয়সী রিফাত হাওলাদার।

তার ডান পায়ে একটি গুলি লেগে হাঁটুর উপরের হাড় ভেঙে যায়, আরেকটি গুলি লাগে তার বাম পায়ে। তার ডান হাতেও একটি গুলি লাগে।

এরপর থেকে জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানের (পঙ্গু হাসপাতাল) বিছানায় শুয়ে আছে রিফাত। সে শেরেবাংলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্র।

রিফাতের বাবা সোহাগ হাওলাদার পেশায় উবারচালক।

তিনি বলেন, 'রিফাত সবাইকে বলছে ওকে বাসায় নিয়ে যেতে। আগের মতো বন্ধুদের সঙ্গে ফুটবল খেলতে চায়। ও বুঝতে পারছে না, আর হয়তো কখনোই দৌড়াতে পারবে না।'

রিফাতের বয়স যখন তিন বছরেরও কম, তখন তার বাবা-মা আলাদা হয়ে যান। গত কয়েক বছর ধরে সে তার খালার কাছে বড় হয়েছে।

'আমার ক্ষুধা পেয়েছিল। খাবার কিনতে বাইরে গিয়ে দেখি দোকান বন্ধ। এরপর গণ্ডগোল আর গুলির শব্দ শুনতে পাই। সবাই বলছিল, পুলিশ মানুষকে গুলি করছে। লোকজনকে দৌড়াতে দেখে আমিও দৌড়াতে শুরু করি। কিছুক্ষণের মধ্যেই আমি মাটিতে পড়ে যাই, দেখি আমার পা দিয়ে রক্ত বের হচ্ছে। তখন আমি উঠে দাঁড়িয়ে হাঁটার চেষ্টা করলাম কিন্তু আবার পড়ে গেলাম। এবার আর নড়াচড়া করতে পারছিলাম না। কিছুক্ষণ পরে বড় দুইজন ছেলে এসে আমাকে রাস্তা থেকে তুলে নিয়ে আসে,' বলে রিফাত।

হাসপাতালের আরেক বিছানায় কাতরাচ্ছে ১৪ বছর বয়সী মুহাম্মদ সিফাত। তার ডান হাঁটুতে একটি গুলি লেগেছিল। চিকিৎসক তার বাবা-মাকে জানিয়েছেন, সিফাত হয়তো আর কখনোই স্বাভাবিকভাবে হাঁটতে পারবে না।

সিফাত পল্লবীর মাজেদুল ইসলাম মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির ছাত্র। গত ১৮ জুলাই সে বন্ধুদের সঙ্গে মিছিলে গিয়েছিল, সে সময় সিফাত পুলিশের গুলিতে জখম হয়।

তার মা রেখা আখতার বলেন, 'জানি না আমার ছেলে আবার কবে হাঁটতে পারবে। তিনটি অপারেশন করা হয়েছে। ডাক্তার বলেছে, আরও একটি অপারেশন করতে হবে।'

পঙ্গু হাসপাতালে গুলিবিদ্ধ অন্তত ১২ শিশু ভর্তি রয়েছে। গত ১৮ জুলাই থেকে ৫ আগস্টের মধ্যে তারা গুলিবিদ্ধ হয়েছে। তাদের প্রায় প্রত্যেকেরই এক বা একাধিক অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন ছিল। তাদের কারও কারও হাত-পা কেটে ফেলতে হয়েছে।

মুহাম্মদ সোলাইমানের বয়স এখন ১২ বছর। সে ফুটবল ভালোবাসে। দরিদ্র বাবা-মা পড়ার খরচ চালাতে না পারায় মাদ্রাসা ছেড়ে কাজ শুরু করেছে সোলাইমান। রাজধানীর শনির আখড়া এলাকার একটি নিটিং কারখানায় কাজ করে সে। মাসে বেতন পাঁচ হাজার টাকা।

কাজ শেষে ফিরে সোলাইমান গত ১৯ জুলাই এলাকার অন্য ছেলেদের সঙ্গে খোলা জায়গায় ফুটবল খেলছিল। হঠাৎ সে দেখে, লোকজন মাঠের দিকে দৌড়াচ্ছে।

'বিক্ষোভকারী আর পুলিশ খেলার মাঠের দিকে আসছে দেখে আমরা দৌড়াতে শুরু করি। কিছুক্ষণের মধ্যে আমার পায়ে গুলি লাগে। দয়া করে ডাক্তারদের জিজ্ঞাসা করবেন—আমি কি আবার ফুটবল খেলতে পারবো,' সাগ্রহে এই প্রতিবেদকদের বলে সোলাইমান।

হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়া শিশুদের অধিকাংশই দরিদ্র পরিবারের। চিকিৎসার ব্যয় বহন করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে তাদের।

মাত্র ১৭ বছর বয়সী মুহাম্মদ মিনহাজ তার পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। যাত্রাবাড়ী কাঁচাবাজারে কাজ করে সে। গত ১৮ জুলাই বাজারের কাছে তার বাম পায়ে গুলি করা হয়।

এ পর্যন্ত তার পায়ে চারবার অস্ত্রোপচার করা হয়েছে। চিকিৎসকদের ভাষ্য আরও অস্ত্রোপচার প্রয়োজন হবে। চিকিৎসার খরচ জোগাতে এরই মধ্যে তার বাবা-মা ঋণ নিয়েছেন।

'আমি রিকশা চালাতাম। অসুস্থ হয়ে যাওয়ার পর থেকে আমার ছেলেই পরিবারের দেখাশোনা করছে। মিনহাজ মাছ বাজারে কাজ করে দিনে ৫০০ থেকে ৮০০ টাকা আয় করে। সেই একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি ছিল,' বলেন তার বাবা বাচ্চু মিয়া।

তিনি আরও বলেন, 'জানি না মিনহাজের চিকিৎসা কীভাবে চলবে! আমার কাছে কোনো টাকা নেই, উপার্জনেরও কোনো পথ নেই।'

Comments

The Daily Star  | English

Teknaf customs in limbo as 19 mt of rice, authorised by AA, reaches port

The consignment of rice weighing 19 metric tonnes arrived at Teknaf land port on Tuesday evening with the documents sealed and signed by the Arakan Army

2h ago