এএফপির বিশ্লেষণ

বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের সামনে ৫ চ্যালেঞ্জ

বিশ্লেষকরা বলছেন নতুন যে সরকার গঠিত হবে তাকে বড় চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হবে।
বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের ৫ চ্যালেঞ্জ
ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ফাইল ছবি

বাংলাদেশে ছাত্র জনতার অভ্যুত্থানের মুখে শেখ হাসিনার পতন হলেও অন্তর্বর্তী সরকারের জন্য সামনের দিনগুলো সহজ হবে না। বিশ্লেষকরা বলছেন নতুন যে সরকার গঠিত হবে তাকে বড় চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হবে।

পদত্যাগ করে শেখ হাসিনার দেশত্যাগের পর যে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হতে চলেছে তাতে নেতৃত্ব দেবেন ৮৪ বছর বয়সী শান্তিতে নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

শেখ হাসিনার পদত্যাগে গুরত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে সেনাবাহিনী। দেশের আগামীর পথরেখা তৈরিতেও সেনাবাহিনীকে ভূমিকা পালন করতে হবে।

নতুন অন্তর্বর্তী সরকারকে মূলত পাঁচটি চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে।

সেনাবাহিনী

অন্তর্বর্তী সরকার বেসামরিক নেতৃত্বাধীন হতে চলেছে, তবে সেনাবাহিনীর হাতে কতটা নিয়ন্ত্রণ থাকবে তা স্পষ্ট নয়।

ওয়াশিংটন-ভিত্তিক উইলসন সেন্টারের দক্ষিণ এশিয়া ইনস্টিটিউটের পরিচালক মাইকেল কুগেলম্যান বলেন, 'এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারে সামরিক বাহিনীর নেতৃত্বের প্রধান ভূমিকা থাকবে, এমনকি আনুষ্ঠানিকভাবে তারা নেতৃত্ব না দিলেও।'

সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনের সূত্রপাত হলেও সরকারের শেষ সময়ে এসে সামরিক বাহিনীর অবস্থান সরকারের ভাগ্য নির্ধারণ করে দেয়।

বিক্ষোভ দমনে বলপ্রয়োগের ব্যাপারে পুলিশ ও অন্যান্য বাহিনীর সঙ্গে একমত হয়নি সেনাবাহিনী। প্রধানমন্ত্রীর প্রতি সেনাবাহিনীর আনুগত্যের অবসান শেখ হাসিনার পতন ঘটায়।

কুগেলম্যান আরও বলেন, 'বাংলাদেশে অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদ দীর্ঘায়িত হলে সেটি সামরিক বাহিনীর নিয়ন্ত্রণকে পাকাপোক্ত করতে পারে বলে বাংলাদেশে অনেকে আশঙ্কা করেন। তবে এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে বাংলাদেশের সেনাবাহিনী রাজনীতির ব্যাপারে মুখ্য ভূমিকায় অবতীর্ণ হবে না যেমনটা কয়েক দশক আগেও ঘটেছে।

নিরাপত্তা

বিক্ষোভকারী ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মধ্যে কয়েক সপ্তাহের সংঘর্ষে ৪০০ জনের বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন।

শেখ হাসিনা দেশত্যাগ করার পর তার সহযোগীরা জনরোষের মুখে পড়ছেন। মানবাধিকার সংগঠনগুলো হিন্দুদের ওপর হামলার ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে আসছে।

অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের স্মৃতি সিং বলেছেন, মানুষের জীবনধারণের অধিকার, বাকস্বাধীনতার এবং শান্তিপূর্ণ সমাবেশের সুরক্ষা নিশ্চিত করা এবং সহিংসতা বন্ধ করা যেকোনো অন্তর্বর্তী সরকারের জন্য প্রথম কাজ হওয়া উচিত।

যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সিটির রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অধ্যাপক আলী রিয়াজ বলেছেন, নিরাপত্তা বাহিনী যদি নিরপেক্ষভাবে সরকারকে সহযোগিতা করে তাহলে পরিস্থিতি শান্ত হবে বলে তিনি বিশ্বাস করেন।

অর্থনীতি

২০০৯ সাল থেকে বাংলাদেশের বার্ষিক প্রবৃদ্ধি ছয় শতাংশের বেশি ছিল। মাথাপিছু আয়ের দিক থেকে বাংলাদেশ ২০২১ সালে ভারতকে ছাড়িয়ে যায়।

কিন্তু অর্থনীতির প্রবৃদ্ধির সুফল বাংলাদেশে সবাই পায়নি। ২০২২ সালের সরকারি হিসাব বলছে, ১৫-২৪ বছর বয়সী ১ কোটি ৮০ লাখের বেশি বাংলাদেশি কর্মহীন ছিল।

সাম্প্রতিক অস্থিরতা গার্মেন্টস শিল্পকেও নাড়া দিয়েছে। সহিংসতার মুখে গার্মেন্টস কারখানাগুলো বন্ধ রাখতে হয়েছে।

বাংলাদেশে ৫৫ বিলিয়ন ডলার রপ্তানি আয়ের মধ্যে ৮৫ শতাংশই আসে এই খাতের প্রায় সাড়ে তিন হাজার কারখানা থেকে।

লিভাইস, জারা এবং এইচএন্ডএমসহ বহু শীর্ষস্থানীয় ব্র্যান্ড বাংলাদেশ থেকে পোশাক আমদানি করে। পোশাক রপ্তানিতে চীনের পরই বাংলাদেশের অবস্থান।

যুক্তরাষ্ট্রের পোশাক প্রস্তুতকারক হুলা গ্লোবাল, জানিয়েছে তারা ইতোমধ্যে তাদের কিছু উৎপাদন সরিয়ে নিয়েছে। কোম্পানির প্রধান করণ বোস বলেন, আমরা বছরের বাকি সময়ে বাংলাদেশে যাওয়া সব নতুন অর্ডার বন্ধ করে দিয়েছি।

নির্বাচন

গত জানুয়ারি মাসে শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ যে নির্বাচনে জয়লাভ করে সেই নির্বাচনে বিশ্বাসযোগ্য কোনো বিরোধীদল ছিল না।

ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের বিশ্লেষক থমাস কিন বলেছেন, বিক্ষোভ আন্দোলন ব্যাপক জনসমর্থন পাওয়ার কারণের একটি অংশ হল দেশটি ১৫ বছরে প্রতিযোগিতামূলক নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়নি।

'অন্তর্বর্তী সরকারকে বাংলাদেশে গণতন্ত্র পুনর্গঠনের দীর্ঘ কাজ শুরু করতে হবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে যেই পথ থেকে সরে গিয়েছিল বাংলাদেশ।'

অন্তর্বর্তী সরকার এখনও গঠিত না হওয়ায়, এটি কতদিন ক্ষমতায় থাকতে পারে, কখন নির্বাচন হতে পারে এবং কারা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারে তা এখনো নিশ্চিত নয়।

ন্যায়বিচার

বাংলাদেশে সেনাবাহিনী ও পুলিশকেই জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে যারা কিনা আন্দোলন দমনে ব্যর্থ হয়েছে।

শেখ হাসিনার পতনের পর থেকে পুলিশ প্রধান এবং একজন উচ্চপদস্থ সেনা কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করা হয়েছে। আন্দোলন চলাকালে যারা গ্রেপ্তার হয়েছেন তারা মুক্তি পেতে শুরু করেছেন। সেই সঙ্গে রাজনৈতিক বন্দিরাও মুক্ত হচ্ছেন।

বাংলাদেশে জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারী গোয়েন লুইস বলেন, 'আশা করি এই নতুন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার নতুন করে কাজ শুরু করবে এবং একটি নতুন ব্যবস্থা ফিরবে... যেটি বিশ্বাসের উপর নির্মিত হবে এবং জনগণকে জবাবদিহি করতে বাধ্য থাকবে।'

অনেক বিক্ষোভকারী শেখ হাসিনার বিচার দাবি করবেন এবং শেখ হাসিনার মিত্রদের বিচারের মুখোমুখি করা হবে।

ক্রাইসিস গ্রুপের কিন জানান, নতুন প্রশাসনের 'সাম্প্রতিক সময়ে যে মর্মান্তিক ঘটনা ঘটেছে সেগুলোর বিশ্বাসযোগ্য তদন্ত করা উচিত'।

Comments

The Daily Star  | English
Bangladeshi-Americans eager to help build new Bangladesh

July uprising and some thoughts of Bangladeshi-Americans

NRBs gathered in New Jersey showed eagerness to assist in the journey of the new Bangladesh forward.

3h ago