প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ টিআইএনধারী আয়কর রিটার্ন জমা দেন না

আয়কর
অলঙ্করণ: স্টার ডিজিটাল গ্রাফিক্স

বাংলাদেশে সম্প্রতি এক কোটির বেশী মানুষ করদাতা শনাক্তকরণ নম্বর (টিআইএন) নিলেও তাদের প্রায় ৫৯ শতাংশ সদ্য সমাপ্ত ২০২৩-২৪ অর্থবছরে আয়কর রিটার্ন দাখিল করেনি।

নিবন্ধিত করদাতার সংখ্যা ধীরে ধীরে বাড়ছে। তবে রিটার্ন জমা দেওয়া ব্যক্তিদের সংখ্যা সেই তুলনায় কম।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) হিসাবে, গত অর্থবছর শেষে দেশে টিআইএন ছিল এক কোটি চার লাখ।

আয়কর রিটার্ন জমা দিয়েছেন মাত্র ৪৩ লাখ। এটি আগের বছরের তুলনায় ২২ শতাংশ বেশি।

গত এক দশকে উচ্চ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন করলেও বাংলাদেশ বিশ্বের সর্বনিম্ন কর-জিডিপি অনুপাতের দেশগুলোর একটি।

পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) গবেষণা পরিচালক এম এ রাজ্জাক দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'টিআইএনধারীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়া ইতিবাচক উন্নয়ন। সামগ্রিকভাবে দেশে এখনো কর আদায় ব্যবস্থা যথাযথভাবে সম্প্রসারিত হয়নি।'

'ট্যাক্স রিটার্ন জমা পড়ার সংখ্যা খুবই কম। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়ার তুলনায় বাংলাদেশ এখনো পিছিয়ে আছে,' যোগ করেন তিনি।

তিনি মনে করেন, অনেক করদাতা কাগজপত্র এড়াতে ও কর প্রশাসন থেকে হয়রানির শিকার হওয়ার আশঙ্কায় আয়কর রিটার্ন জমা দেন না।

অটোমেশনের মাধ্যমে রাজস্ব কর্মকর্তা ও করদাতাদের মধ্যে ব্যক্তিগত যোগাযোগ কমানোর পরামর্শ দিয়ে এই অর্থনীতিবিদ বলেন, 'দুর্নীতি-হয়রানি কমাতে এনবিআরের নিরীক্ষায় অটোমেশন নিশ্চিত করতে হবে।'

বর্তমানে টিআইএনধারী সবার জন্য আয়কর রিটার্ন দাখিল বাধ্যতামূলক।

এনবিআরের তথ্য অনুসারে, বর্তমানে প্রায় ৪৫টি সেবা নিতে টিআইএন প্রয়োজন হওয়ায় অনেকেই তা নিলেও আয়কর রিটার্ন জমা দেন না।

বিশ্লেষকরা কম সংখ্যক রিটার্ন জমা দেওয়ার জন্য অপর্যাপ্ত পর্যবেক্ষণ ও আইনের প্রয়োগ, স্বাধীন প্রতিষ্ঠানগুলোর নিয়মিত করদাতা জরিপের অনুপস্থিতি এবং কর প্রশাসনের অটোমেশনের ধীর গতিকে দায়ী করেছেন।

সম্প্রতি তৈরি করা প্রতিবেদনে এনবিআর বলেছে, প্রায় পাঁচ লাখ মানুষ আয়কর রিটার্ন জমা দেন না। কারণ তাদের শুধু জমি হস্তান্তরের জন্য টিআইএন প্রয়োজন। প্রায় চার লাখ মানুষ নির্দিষ্ট সেবা নিতে টিআইএন নেন।

এনবিআরের তথ্য বলছে, ইতোমধ্যে দুই লাখের বেশি টিআইএনধারী মারা গেছেন। প্রায় তিন লাখ টিআইএনধারী বিদেশে। আরেকটি প্রধান কারণ হলো করদাতাদের মধ্যে সচেতনতার অভাব।

এছাড়াও টিআইএন নিবন্ধিত বিপুল সংখ্যক প্রতিষ্ঠান নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছে।

এনবিআরের অনুসন্ধানে দেখা গেছে, রেজিস্ট্রার অব জয়েন্ট স্টক কোম্পানিজ অ্যান্ড ফার্মসের অধীনে দেশে প্রায় এক লাখ ৩৭ হাজার নিষ্ক্রিয় প্রতিষ্ঠান আছে।

বিপুল সংখ্যক মানুষ ট্রেড লাইসেন্স পেতে টিআইএন নিলেও পরে সেসব প্রতিষ্ঠান নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ে।

এনবিআরের করনীতির সাবেক সদস্য শামসুদ্দিন আহমেদ ডেইলি স্টারকে বলেন, 'কর দেওয়ার সংস্কৃতি ধীরে ধীরে গড়ে তুলতে হবে।'

করদাতাদের উদ্বুদ্ধ করতে এনবিআর নানান উদ্যোগ নিয়েছে জানিয়ে তিনি আশা করেন, আগামীতে দেশ গঠনে করদাতাদের অংশ নেওয়ার আগ্রহ বাড়বে।

ডিজিটালাইজেশনের নতুন পদ্ধতি ও উদ্ভাবনী ব্যবসায়িক মডেল সম্পর্কে কর কর্মকর্তাদের মধ্যে বোঝা-পড়ার অভাব আছে বলেও মনে করেন তিনি।

Comments

The Daily Star  | English

‘No room for politics under AL name, ideology’

Nahid Islam, adviser to the interim government, spoke with The Daily Star on the nation's key challenges and the way forward.

14h ago