গণতান্ত্রিক দেশে অধিকার আদায়ের লড়াইয়ে এত প্রাণহানি মানা যায় না: সুজন

কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে প্রতিটি হত্যাকাণ্ডের নির্মোহ তদন্ত, ঢালাওভাবে মামলা ও গ্রেপ্তার বন্ধ এবং শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতের দাবি জানিয়েছে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)।

আজ শুক্রবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ দাবি জানায় সুজন।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, 'আমরা গভীর উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠার সঙ্গে লক্ষ করছি যে, সরকারি চাকরিতে কোটা প্রথার সংস্কারের লক্ষ্যে সাধারণ শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের জের ধরে সৃষ্ট অচলাবস্থা এখনও নিরসন হয়নি। সহিংতায় মৃত্যুর সংখ্যাও দিন দিন বেড়েই চলেছে।

গণমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, নিহতের সংখ্যা ২০০ ছাড়িয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে উস্কানিমূলক বক্তব্য দেওয়া, স্বার্থান্বেষী মহলের ইন্ধন ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অতিরিক্ত বলপ্রয়োগের ফলে এত প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে বলে আমরা মনে করি। এতে দেশে গণতন্ত্র ও সুশাসনের ঘাটতি পরিলক্ষিত হয়েছে বলেও আমরা মনে করি। কোনো স্বাধীন ও গণতান্ত্রিক দেশে কোনো অধিকার আদায়ের লড়াইয়ে এত প্রাণহানি কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। আমরা মনে করি, প্রত্যেকটি প্রাণই গুরুত্বপূর্ণ। কোনো কিছুর বিনিময়ে তা পূরণ হওয়ার নয়।'

এতে আরও বলা হয়, 'আমরা নিরপেক্ষ ব্যক্তি ও বিশেষজ্ঞদের নিয়ে একটি কমিশন গঠন করে প্রত্যেকটি হত্যার নির্মোহ তদন্ত করা এবং দোষী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনি পদক্ষেপ ও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য জোর দাবি জানাচ্ছি। একইসঙ্গে ঢালাওভাবে মামলা ও গ্রেপ্তার বন্ধ করার জন্য সরকারের প্রতি অনুরোধ জানাচ্ছি।'

'আমরা আরও মনে করি, আন্দোলনের নামে সহিংসতা চালানো এবং সরকারি স্থাপনায় হামলা, ভাঙচুর ও আগুন দেওয়া কোনোভাবেই যুক্তিযুক্ত নয়। যারা রাষ্ট্রীয় সম্পদ ধ্বংস করেছে তাদেরকেও আইনের আওতায় আনার দাবি জানাচ্ছি। তবে রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিতের ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে সরকারের সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর সামর্থ্য ও প্রস্তুতি বাড়ানো দরকার বলেও আমরা মনে করি।

তবে কিছুটা দেরিতে হলেও আদালতের নির্দেশনা মেনে কোটা পদ্ধতির সংস্কার করায় আমরা সরকারকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। তবে এ আন্দোলনকে ঘিরে যাতে ভবিষ্যতে শিক্ষার্থীদের আর নতুন করে হয়রানি না করা হয় এবং বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসগুলোতে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয় সেদিকে দৃষ্টি দেওয়ার জন্য আমরা সরকারের প্রতি অনুরোধ জানাচ্ছি', যোগ করা হয় সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে।

সুজন আরও বলে, 'আমরা মনে করি, বর্তমান লেজুড়ভিত্তিক ছাত্ররাজনীতির কারণে আমাদের কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলো প্রায়ই রণক্ষেত্রে পরিণত হয় ও শিক্ষার পরিবেশ ব্যাহত হয় এবং প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তার ফলে ছাত্রনেতাদের হাতে সাধারণ শিক্ষার্থীরা নানাভাবে বঞ্চিত ও নিগৃহীত হয়, যা গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘন। গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (সংশোধিত) অধ্যাদেশ ১৯৭২ অনুযায়ী, নিবন্ধিত দলের অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন রাখা বেআইনি। ড. শামসুল হুদা কমিশনের মেয়াদকালে সকল রাজনৈতিক দলের সম্মতিতে এ বিধানটি আরপিওতে যুক্ত করা হয়, যা রাজনৈতিক দলগুলো বাস্তবায়ন করেনি। তাই লেজুড়ভিত্তিক ছাত্ররাজনীতির অবসান ঘটানো এবং তরুণদের নেতৃত্ব বিকাশে নিয়মিত ছাত্র সংসদের নির্বাচন অনুষ্ঠান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে আমরা মনে করি।'

'আমরা মনে করি, সরকারের উচিত কোটা আন্দোলনকে ঘিরে সাধারণ শিক্ষার্থীসহ মানুষ কেন এত ক্ষুব্ধ তা উপলব্ধিতে আনার চেষ্টা করা। আমাদের আশঙ্কা যে, কোটা সংস্কার আন্দোলনের মাধ্যমে যে জন-বিস্ফোরণ হয়েছে তা রোগের উপসর্গমাত্র। মূল রোগ হলো ভোটাধিকার থেকে শুরু করে জনগণের অন্যান্য নাগরিক অধিকার না পাওয়ার বঞ্চনা। তাই, স্থায়ীভাবে সংকটের নিরাময় ঘটাতে হলে উপসর্গের নয়, রোগের চিকিৎসা আবশ্যক', তারা বলেন।

'এ লক্ষ্যে সকল অংশীজনকে, বিশেষ রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে অনতিবিলম্বে সংলাপের আয়োজন এবং গুরুতর সমস্যাগুলোর একটি টেকসই সমাধানে পৌঁছার জন্য আমরা সরকারের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি। একইসঙ্গে অবিলম্বে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করে এবং তাদের যৌক্তিক দাবিগুলো মেনে নিয়ে সকল ধরনের অচলাবস্থা নিরসনের জন্য আমরা জোর দাবি জানাচ্ছি', যোগ করা হয় সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে।

Comments

The Daily Star  | English

July being used as a moneymaking machine: Umama Fatema

Former spokesperson accuses leadership of corruption and control from Hare Road

3h ago