সাদা ছড়ি হাতে বাজারে এলো ‘ব্লাইন্ড বার্বি’

দীর্ঘদিন ধরে ম্যাটেল ও বার্বি পুতুলের বিরুদ্ধে অভিযোগ, সাধারণ মানুষের বাস্তবসম্মত প্রতিনিধিত্ব নেই এসব খেলনায়
বাজারে এসেছে অন্ধ বার্বি পুতুল। ছবি: ম্যাটেলের ওয়েবসাইট থেকে সংগৃহীত
বাজারে এসেছে অন্ধ বার্বি পুতুল। ছবি: ম্যাটেলের ওয়েবসাইট থেকে সংগৃহীত

দেশে-বিদেশে শিশুদের খেলার পুতুলের ব্র্যান্ড হিসেবে বার্বি খুবই জনপ্রিয়। এবার নির্মাতা ম্যাটেল এক ব্যতিক্রমধর্মী উদ্যোগে সাদা ছড়ি হাতে 'ব্লাইন্ড' বার্বি বাজারে এনেছে। 

আজ বৃহস্পতিবার এই তথ্য জানিয়েছে এনডিটিভি।

অন্ধত্বে ভুগছেন এমন মানুষ যেভাবে তাকিয়ে থাকেন, এই বার্বির মুখভঙ্গিমা সেভাবেই তৈরি করা হয়েছে। বার্বির লাঠির অগ্রভাগটি লাল ও বাকি অংশ সাদা—যেমনটা অন্ধ ব্যক্তিরা ব্যবহার করে থাকেন। সঙ্গে চশমাও রয়েছে একজোড়া।

বিশ্লেষকদের মতে, এই বার্বির মাধ্যমে অন্ধত্ব বা চোখের সমস্যায় ভুগছেন এমন মানুষদের নিখুঁত প্রতিফলন ঘটেছে। 

বিশ্লেষকরা আরও বলেছেন, শিশুদের জন্য তৈরি এই বার্বির মাধ্যমে সামাজিক অন্তর্ভুক্তিতে উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছেন ম্যাটেল।

অ্যামেরিকান ফাউন্ডেশন ফর দ্য ব্লাইন্ডের সঙ্গে অংশীদারিত্বের মাধ্যমে ম্যাটেল এই পুতুল তৈরি করেছে।

পুতুলের প্যাকেটে অন্ধদের পড়ার উপযোগী ব্রেইল ভাষা ও বার্বির জন্য বিশেষ পোশাক সংযুক্ত করা হয়েছে।

ইতোমধ্যে এই পুতুলটি বহুলভাবে প্রশংসিত হয়েছে।

শারীরিক প্রতিবন্ধকতায় ভুগছেন এমন মানুষদের অধিকারের জন্য আন্দোলনরত মানবাধিকার কর্মীরা এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন এবং একে 'যুগান্তকারী' বলে অভিহিত করেছেন।

বার্মিংহামের বাসিন্দা ও অধিকারকর্মী লুসি এডোয়ার্ডস পেশায় একজন ব্রডকাস্টার। তিনি ১৭ বছর বয়সে চোখের দৃষ্টিশক্তি হারান। তিনি নতুন পুতুলের প্রচারণা অংশ নিয়েছেন।

বিবিসিকে লুসি বলেন, 'আমি আমার হাতের সাদা লাঠি নিয়ে সব সময় বিব্রত হতাম। কিন্তু সে সময় লাঠি হাতে বার্বি পেলে আমি নিজেকে এতটা একা ভাবতাম না।'

সাদা ছড়ি হাতে বাজারে এলো ‘অন্ধ বার্বি’ । ছবি: ম্যাটেলের ওয়েবসাইট থেকে
সাদা ছড়ি হাতে বাজারে এলো ‘অন্ধ বার্বি’ । ছবি: ম্যাটেলের ওয়েবসাইট থেকে

রয়েল ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ব্লাইন্ড পিপল (আরএনআইবি) নামের সংগঠনের প্রতিনিধি ডেবি মিলার সিএনএনকে বলেন, এ ধরনের বার্বি বাজারে আনলে তা অন্ধত্বে ভুগছে এমন শিশুদের প্রতিনিধিত্ব করবে।

এই পুতুলটি বাজারে আনার জন্য আরএনআইবির সঙ্গেও অংশীদারিত্বে গেছে ম্যাটেল।

দীর্ঘদিন ধরে ম্যাটেল ও বার্বি পুতুলের বিরুদ্ধে অভিযোগ, সাধারণ মানুষের বাস্তবসম্মত প্রতিনিধিত্ব নেই এসব খেলনায়। বরং এই পুতুলের মাধ্যমে প্রথাগত সৌন্দর্যের মানদণ্ডের প্রচারণা চালানো হয়। এ কারণে অনেকেই বিভিন্ন সময় বার্বি বয়কটের ডাক দিয়েছেন।

ধারাবাহিকভাবে জনপ্রিয় এই পুতুলের বিক্রি কমে যাওয়ার ফলে ২০১৬ সাল থেকে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিত্ব করে এমন বার্বি বাজারে আনতে শুরু করে ম্যাটেল। সাম্প্রতিক সময়ে শাড়ি পরিহিত ভারতীয় বার্বি কিংবা বোরখা পরা আরব বার্বিও বাজারে দেখা গেছে।

২০১৯ সালে ম্যাটেল 'বার্বি ফ্যাশনিস্তা' নামে নতুন একটি সিরিজ বাজারে আনে। এই সিরিজের পুতুলগুলো হুইলচেয়ার, কৃত্রিম পা, হিয়ারিং এইড ও অন্যান্য শারীরিক সক্ষমতায় ভোগা মানুষের প্রতিনিধিত্ব করে।

এ বছর অন্ধ বার্বি বাজারে আনার পর ডাউন সিন্ড্রোমে ভুগছে এমন বার্বি বাজারে আনার কথা জানিয়েছে ম্যাটেল।

Comments