কোপা আমেরিকার ফাইনালে আর্জেন্টিনার সাফল্য-ব্যর্থতার চিত্র কেমন?

ছবি: এএফপি

গায়ের সঙ্গে সেঁটে আছে হট ফেভারিট তকমা। সেটার সঙ্গে তাল মিলিয়ে কোপা আমেরিকার ফাইনালে ফের জায়গা করে নিয়েছে বর্তমান চ্যাম্পিয়ন আর্জেন্টিনা। দক্ষিণ আমেরিকার ফুটবল শ্রেষ্ঠত্বের আসরের শিরোপা ধরে অভিযানে তাদের সামনে রয়েছে আর মাত্র একটি ধাপ। তবে প্রায় আড়াই বছর ও ২৮ ম্যাচ ধরে অপরাজিত থাকা দুর্দান্ত কলম্বিয়া প্রতিপক্ষ হিসেবে বেশ শক্ত।

এবারের আসরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দ্বৈরথের আগে দেখে নেওয়া যাক কোপার ফাইনালের মঞ্চে সাফল্য ও ব্যর্থতার নিক্তিতে আর্জেন্টিনার অবস্থান কেমন।

এক শতাব্দীরও বেশি আগে ১৯১৬ সালে যাত্রা শুরু করে কোপা আমেরিকা। তখন এই প্রতিযোগিতা পরিচিত ছিল দক্ষিণ আমেরিকান ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপ নামে। খেলা হতো রাউন্ড রবিন বা লিগ পদ্ধতিতে, পয়েন্টের ভিত্তিতে জিততে হতো শিরোপা। তাই ছিল না কোনো আনুষ্ঠানিক ফাইনাল। ১৯৭৫ সালে নাম পাল্টে কোপা আমেরিকা করে দক্ষিণ আমেরিকার সর্বোচ্চ ফুটবল নিয়ন্ত্রক সংস্থা (কনমেবল)। পাশাপাশি ফরম্যাটেও আসে পরিবর্তন। গ্রুপ পর্ব শেষে চালু হয় নকআউট পর্বের ব্যবস্থা। যদিও মাঝে ব্যতিক্রম ঘটিয়ে ১৯৮৯ ও ১৯৯১ সালের আসরে চ্যাম্পিয়ন নির্ধারণ করা হয়েছিল পুরনো সেই লিগ পদ্ধতিতে।

সে যাই হোক, ফাইনালের মাধ্যমে বিজয়ী খুঁজে নেওয়া হয়েছে— এমন ক্ষেত্রে ১৫ বারের শিরোপাজয়ী আর্জেন্টিনার সাফল্যের চেয়ে ব্যর্থতার পাল্লাই ভারী। কোপায় এর আগে ছয়বার ফাইনাল খেলেছে দলটি। দুবার চ্যাম্পিয়ন হলেও বাকি চারবার তারা পেয়েছে রানার্সআপ হওয়ার যন্ত্রণা।

কোপার ১৯৯৩ সালের আসরে প্রথমবারের মতো ফাইনালে অংশ নিয়েই শেষ হাসি হাসে আর্জেন্টিনা। শিরোপা নির্ধারণী মঞ্চে তারা ২-১ গোলে জেতে মেক্সিকোর বিপক্ষে। এরপর টানা ২৮ বছর শিরোপাখরায় ভুগতে হয় তিনবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের। সেই অপেক্ষার ইতি ঘটে আরেকটি কোপা আমেরিকা দিয়েই। ২০২১ সালে অনুষ্ঠিত সবশেষ আসরের ফাইনালে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ব্রাজিলকে তাদের মাটিতেই ১-০ গোলে হারিয়ে উল্লাসে মাতে আর্জেন্টিনা।

মাঝে চারবার কোপা আমেরিকার ফাইনালে উঠলেও শিরোপা উঁচিয়ে ধরা হয়নি আর্জেন্টিনার। ২০০৪ ও ২০০৭ সালে পরপর দুই আসরে ব্রাজিলের সঙ্গে পেরে ওঠেনি তারা। প্রথমটিতে নির্ধারিত সময়ের খেলা ২-২ গোলে ড্র হওয়ার পর (কোনো অতিরিক্ত সময় ছিল না) টাইব্রেকারে ৪-২ গোলে হার মানে দলটি। পরেরটিতে তারা রীতিমতো বিধ্বস্ত হয় ৩-০ গোলে। এরপর ২০১৫ ও ২০১৬ সালের আসরেও ভীষণ আক্ষেপে পুড়তে হয় আর্জেন্টিনাকে। দুবারই চিলির বিপক্ষে নির্ধারিত ও অতিরিক্ত সময় মিলিয়ে গোলশূন্য থাকার পর টাইব্রেকারে হারে তারা। একবার ৪-১ ব্যবধানে, আরেকবার ৪-২ ব্যবধানে।

২০১৬ সালের ফাইনালে লিওনেল মেসি গোল করতে ব্যর্থ হন টাইব্রেকারে। তীব্র হতাশায় জাতীয় দল থেকে অবসরের ঘোষণাও দেন তিনি। কিন্তু পরে সিদ্ধান্ত পাল্টে আন্তর্জাতিক ফুটবলে ফিরে আসেন। সেই থেকে মুদ্রার উল্টো পিঠ দেখছেন তিনি। ২০২১ সালে কোপার শিরোপা উঁচিয়ে ধরার পর ২০২২ সালে কাতারের মাটিতে ফ্রান্সকে হারিয়ে আর্জেন্টিনা জেতে পরম আকাঙ্ক্ষিত বিশ্বকাপ। মাঝে ঘরে তোলে ফিনালিসিমাও।

মেসির নেতৃত্বে আরেকবার চ্যাম্পিয়ন হওয়ার খুব কাছে আর্জেন্টিনা। এবারের আসরের ফাইনালে কলম্বিয়াকে হারাতে পারলে এককভাবে (উরুগুয়েও ১৫ বারের চ্যাম্পিয়ন) কোপার সফলতম দলে পরিণত হবে তারা, জিতবে রেকর্ড ১৬তম শিরোপা। সেই লক্ষ্য পূরণ হয় কিনা তা জানতে থাকতে হচ্ছে অপেক্ষায়।

আগামী সোমবার কোপার ৪৮তম আসরের ফাইনাল অনুষ্ঠিত হবে বাংলাদেশ সময় সকাল ৬টায়। ম্যাচের ভেন্যু যুক্তরাষ্ট্রের মায়ামির হার্ডরক স্টেডিয়াম।

একদিকে মহাতারকা মেসি, আরেকদিকে হামেস রদ্রিগেজ; একদিকে লিওনেল স্কালোনি, আরেকদিকে নেস্তর লরেঞ্জো। ভক্ত-সমর্থকরা তাই দারুণ একটি লড়াই দেখার প্রত্যাশা করতেই পারেন। উল্লেখযোগ্য ব্যাপার হলো, কলম্বিয়া শেষবার হেরেছিল আর্জেন্টিনার কাছেই। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের ম্যাচে ১-০ গোলে জিতেছিল আলবিসেলেস্তেরা।

Comments

The Daily Star  | English

Yunus meets Chinese ambassador to review China visit, outline next steps

Both sides expressed a shared commitment to transforming discussions into actionable projects across a range of sectors

5h ago