ভারী বর্ষণে ডুবল খুলনা শহর

ভারী বর্ষণে ডুবল খুলনা শহর
খুলনা শহরের আজ শুক্রবার সকালের চিত্র। ছবি: হাবিবুর রহমান/স্টার

আষাঢ়ের ভারী বর্ষণে খুলনা শহরের অধিকাংশ রাস্তা ও নিম্নাঞ্চল ডুবে গেছে।

শুক্রবার ভোররাত থেকে শুরু হওয়া বৃষ্টি একনাগাড়ে সকাল ১০টা পর্যন্ত অব্যাহত থাকে।

একটানা এই বর্ষণে দুর্ভোগে পড়েছেন নিম্নবিত্ত ও খেটে খাওয়া মানুষ। একইসঙ্গে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে শিক্ষক নিবন্ধনের অংশ নেওয়া প্রার্থীদেরও। সকালে যানবাহনের অভাবে অনেক পরীক্ষার্থী কেন্দ্রে ঠিক সময়ে পৌঁছাতে পারেননি।

খুলনা আবহাওয়া অফিসের জ্যৈষ্ঠ আবহাওয়াবিদ আমিরুল আজাদ দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, গত ২৪ ঘণ্টায় শহরে মোট বৃষ্টি হয়েছে ৮৯ মিলিমিটার। এর মধ্যে সকাল ৬টা থেকে ৯টা পর্যন্ত তিন ঘণ্টায় হয়েছে ৫৫ মিলিমিটার।

খুলনায় আজ সারাদিন বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানান তিনি।

খুলনা সিটি করপোরেশন এলাকার মধ্যে সড়ক আছে প্রায় এক হাজার ২১৫টি, যার দুই-তৃতীয়াংশই বৃষ্টির পানিতে ডুবে গেছে।

খুলনা সিটি করপোরেশন (কেসিসি) জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের আওতায় গত ছয় বছরে ১০৪টি ড্রেন পুনর্নির্মাণ করেছে। ময়ূর নদসহ সাতটি খাল পুনরায় খনন ও ৩২টি ড্রেনের সংস্কার চলছে। এতে ব্যয় হয়েছে প্রায় ৫০২ কোটি টাকা। এই বিপুল অর্থ ব্যয়ের পরও নগরীর জলাবদ্ধতা পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি। এখনো কিছুটা ভারী বৃষ্টি হলেই তলিয়ে যাচ্ছে নগরীর নিম্নাঞ্চল। প্রধান সড়কগুলোয় তৈরি হচ্ছে জলজট।

জানা গেছে, খুলনা নগরীর ফুলবাড়ী গেট, রেলগেট, মহেশ্বর পাশা, দৌলতপুর, নতুন রাস্তার মোড়, আলমনগর, বাস্তুহারা কলোনি, নেভি চেকপোস্ট, রায়েরমহল, বয়রা বাজার, গল্লামারি, ময়লাপোতা, রয়েল মোড়, টুটপাড়া জোড়া কল বাজার, মহির বাড়ির খালপাড়, রূপসা ঘাট, নতুন বাজারসহ আরও কিছু এলাকা বৃষ্টির পানিতে ডুবে গেছে। অধিকাংশ নিম্নাঞ্চলে হাঁটু থেকে কোমর সমান পানি।

ভারী বর্ষণে ডুবল খুলনা শহর
ছবি: হাবিবুর রহমান/স্টার

সরেজমিনে সকালে নগরীর রায়ের মহল, বয়রা বাজার, রয়েল মোড়, বাইতি পাড়া, নতুন রাস্তা, কে ডি এভিনিউ, ডাকবাংলা মোড়সহ অন্তত পাঁচটি ওয়ার্ড ঘুরে দেখা গেছে, প্রায় সর্বত্র হাঁটুপানি। কোথাও কোথাও সড়ক বৃষ্টির পানিতে ডুবে নৌকা চলাচলের মতো অবস্থা তৈরি হয়েছে।

রয়েল মোড়, কে ডিএ এভিনিউ, বয়রা বাজার, মুজগুন্নী পার্ক, বাস্তুহারা, রূপসা স্ট্যান্ড রোড ও চানমারি বাজার এলাকা প্রায় পুরোটাই ডুবে গেছে।

শহরের নয় নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা আসলাম শেখ ডেইলি স্টারকে বলেন, একটু বৃষ্টি হলেই এই ওয়ার্ডের অধিকাংশ এলাকা পানির নিচে ডুবে যায়। এই ওয়ার্ডের মাঝ বরাবর চলে গেছে মুজগুন্নি মহাসড়ক। ওই মহাসড়কের দুই পাশে ৩১ কোটি টাকা খরচ করে ড্রেন তৈরি করা হয়েছে। কিন্তু সেই ড্রেন এত সরু যে রাস্তাসহ আশেপাশের বাড়ির পানি ধারণ করতে পারে না। ফলে রাস্তাসহ আশেপাশের পানি প্রবাহে বাধাগ্রস্ত হয়ে এটি পুকুরে রূপ নেয়।

'তা ছাড়া এই ওয়ার্ডসহ আশেপাশের বায়রা বাজার, মুজগুন্নি, বৈকালী ও খালিশপুরের পানি পশ্চিম দিক থেকে নামার যে খালগুলো ছিল, তা দখল ও ভরাট হয়ে গেছে। বাস্তুহারা খাল, কারিগরপাড়া খাল সংস্কারের অভাবে ভরাট হয়েছিল। যদিও সিটি করপোরেশন এখন তা খনন করার উদ্যোগ নিয়েছে। কিন্তু ভারী বৃষ্টি হলে সঠিকভাবে পানি সরবরাহের কোনো পথ এখনো তৈরি হয়নি', বলেন তিনি।

খুলনা নগরীর ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা শরিফুল ইসলাম সেলিম বলেন, আমার বাড়ির একেবারে সীমানা দিয়ে বড় ড্রেন চলে গেছে। কিন্তু তারপরও আমার বাড়ির নিচতলার কয়েকটি ঘর ডুবে গেছে। আসলে সঠিকভাবে পানি নিষ্কাশন হয় না এই ড্রেনের মাধ্যমে। এই ড্রেনটি দক্ষিণ দিকে গিয়ে পড়েছে তালতলা খালে। কিন্তু সেই খাল সংস্কারের অভাবে পানি ধারণ করতে পারে না। ফলে বৃষ্টি হলেই বিভিন্ন জায়গার ড্রেন উপচে পানিতে ডুবে যায় এলাকা।

'সিটি করপোরেশন নিয়মিতভাবে ড্রেন পরিষ্কার করে না। দায়সারা ড্রেন পরিষ্কার করলে এই পরিস্থিতিই হয়! পরিকল্পিত উপায়ে ড্রেনগুলো নিয়মিত পরিষ্কার করা হলে এই জলাবদ্ধতা দূর করা যেত', বলেন তিনি।

খুলনা সিটি করপোরেশন সূত্র জানিয়েছে, 'খুলনা শহরের জলাবদ্ধতা দূরীকরণে ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়ন' নামে একটি প্রকল্প একনেকে অনুমোদন পায় ২০১৮ সালের জুলাইয়ে। প্রকল্প ব্যয় ছিল ৮২৩ কোটি টাকা। প্রকল্পের প্রথম ধাপের কাজ শুরু হয় ২০২০ সালের অক্টোবরে। নতুন প্রকল্পে এসব ড্রেনের কাভার দেওয়ার ফলে নগরবাসী খোলা ড্রেনে আর ময়লা ফেলতে পারছে না। কিন্তু আধুনিক ময়লা পরিষ্কার করার যন্ত্র না থাকায় এসব ড্রেনের ভেতর পানির প্রবাহে বয়ে আসা পলিথিন, চিপসের প্যাকেটসহ অন্যান্য ময়লা জমে ভরাট হয়ে পানি প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। ফলে নিম্ন অঞ্চলের পানি অপসারণ হতে সময় লাগছে।

সিটি করপোরেশনের প্রধান কনজারভেন্সি অফিসার আনিসুর রহমান ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমরা নিয়মিত ড্রেন পরিষ্কার করি। তা ছাড়া ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়নে যে প্রকল্পগুলো চলছে, সেগুলো এবং খাল খননের কাজ শেষ হলে এই জলাবদ্ধতার সমস্যা আর থাকবে না।'

Comments

The Daily Star  | English

Nowfel gained from illegal tobacco trade

Former education minister Mohibul Hassan Chowdhoury Nowfel received at least Tk 3 crore from a tobacco company, known for years for illegal cigarette production and marketing including some counterfeit foreign brands.

3h ago