সিরাজগঞ্জ

বন্যাকবলিত এলাকায় গো-খাদ্যের তীব্র সংকট

বন্যা কবলিত সিরাজগঞ্জে গো-খাদ্যের সংকটে পড়েছেন খামারিরা। গো-চারণভূমি তলিয়ে যাওয়ায় গবাদি পশুর খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে।
বন্যা কবলিত সিরাজগঞ্জে গো-খাদ্যের সংকটে পড়েছেন খামারিরা। গো-চারণভূমি তলিয়ে যাওয়ায় গবাদি পশুর খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে। ছবি: সংগৃহীত

সিরাজগঞ্জে প্রতি বছর বন্যা আক্রান্ত হয় জেলার বিস্তীর্ণ অঞ্চল। বন্যার সময় সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগের শিকার হয় দেশের অন্যতম বৃহত্তম গবাদিপশু সমৃদ্ধ অঞ্চলটি।

বন্যা আক্রান্ত হয়েছে জেলার পাঁচটি উপজেলার ৩৪টি ইউনিয়নের প্রায় ৩৩৬ বর্গকিলোমিটার এলাকা। ইতোমধ্যে জেলার বন্যা আক্রান্ত এলাকার প্রায় ৪০ হাজার গবাদি পশু পানিবন্দি হয়ে পড়েছে বলে জানায় সিরাজগঞ্জ জেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর।

জেলার বিস্তীর্ণ চরাঞ্চলে প্রতিটি বাড়িতেই কিছু না কিছু গবাদি পশু রয়েছে। বন্যার পানিতে চরাঞ্চলের বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। ফলে বন্যা কবলিত এলাকাগুলোতে গবাদি পশু নিয়ে বিপাকে পড়েছেন কৃষক।

বন্যার্তরা নিজেদের সাথে সাথে গবাদি পশু নিয়ে নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে ছুটে বেড়াচ্ছেন। কোনোভাবে গবাদি পশুগুলোকে নিরাপদ আশ্রয়ে নিতে পারলেও পশুর মুখে চাহিদামত খাবার দিতে পারছে না খামারিরা। 

সরেজমিনে বন্যা আক্রান্ত এলাকা ঘুরে দেখা গেছে বন্যা কবলিত প্রতিটি এলাকায় গবাদি পশু নিয়ে দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন কৃষকরা।

সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার দোগাছি কাওয়াকোলা গ্রামের মাজেদা বেগম বলেন, প্রায় ১০ দিন ধরে তার বাড়িতে পানি। দুটি গরু আর তিনটি ছাগল নিয়ে গ্রামের একটি মসজিদের পাশে অবস্থান নিয়েছেন। নিজেরা আধা পেট খেয়ে কোনোভাবে দিন পার করলেও গবাদি পশুগুলোকে অনাহারেই রাখতে হচ্ছে বেশি সময়।

বিস্তীর্ণ চরাঞ্চলের কোথাও শুকনো জায়গা নেই, কোথাও ঘাসের দেখা নেই। শুকনো খড়ের যোগান নেই। চরের পানির মধ্যে থেকে কিছু কাশ কেটে এনে গরুকে খেতে দিয়েছি, কলাগাছের কিছু পাতা খেতে দিয়েছি ছাগলকে। খাবার ইচ্ছা না থাকলেও ক্ষুধার্ত পশুরা এসব খেয়েই কোনোরকমে বেচে আছে।

ছোট কয়রা গ্রামের কৃষক শরিফ হোসেন বলেন, গবাদি পশু পালন করেই তার সংসার চলে। বন্যার কারণে বাড়িতে পানি ওঠায় গত এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে বন্যা আশ্রয়কেন্দ্র মুজিব কেল্লাতে আশ্রয় নিয়েছি। নিজেদের সাথে বাড়ির গবাদি পশুগুলোকেও নিয়ে আসতে হয়েছে।

নিজে এক প্যাকেট ত্রান পেলেও গবাদি পশুর জন্য কিছু জোটেনি। বাড়িতে খরের স্তুপ থাকলেও বন্যা আক্রান্ত হওয়ায় খরের স্তুপ থেকে পর্যাপ্ত খড় নিয়ে আসা হয়নি। খাদ্যের অভাবে সংসারের আয়ের উৎস গবাদি পশুগুলোকেও অনেক কষ্ট করতে হচ্ছে বলে জানান তিনি।

একই অবস্থা সিরাজগঞ্জের বিস্তীর্ণ বন্যা কবলিত এলাকায়।

জেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগ সূত্র জানায়, জেলায় মোট ৩৭ হাজার খামারে প্রায় ১৭ লাখ গবাদি পশু রয়েছে। তবে খামার পর্যায়ে তেমন কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি।

সিরাজগঞ্জ জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. ওমর ফারুক বলেন, বন্যা আক্রান্ত এলাকগুলোতে গো-চারণভূমি তলিয়ে যাওয়ায় গবাদি পশুর খাদ্য সংকট হয়েছে। ইতোমধ্যে জেলার প্রায় ২০০ হেক্টর জমির কাঁচা ঘাস পানিতে তলিয়ে গেছে।

ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোতে গো-খাদ্য সরবরাহ করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।

এদিকে, খামার পর্যায়ে গবাদি পশুগুলো শুকনো খাবারের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ায় গবাদিপশু পালনে খরচ বেড়ে গেছে।

সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার রাম খারুয়া গ্রামের খামারি রাজু আহমেদ বলেন, তার খামারে প্রায় ৫০টি গরু রয়েছে। বর্ষার কারণে পুরো এলাকা জলমগ্ন হয়ে পড়ায় গবাদি পশুর জন্য কোথাও কাঁচা ঘাসের ব্যবস্থা করতে পারছেন না তিনি।

শুকনো খাবার এবং কেনা দানাদার খাবারের প্রতি নির্ভরশীল খামারে গবাদি পশুগুলোকে লালন পালন করতে হচ্ছে ফলে গবাদি পশু পালনের খরচ বেড়েছে, পাশাপাশি দুধের উৎপাদন কমে গেছেও বলে জানান তিনি।

Comments

The Daily Star  | English

65pc of suicide victims among students are teens: survey

Teenagers (aged 13-19) made up 65.7% of 310 students who died by suicide in 2024, according to a survey by Aachol Foundation.

1h ago