মধ্যপ্রাচ্য ভ্রমণে মনোমুগ্ধকর ৭ গন্তব্য

মধ্যপ্রাচ্যের বিস্ময়কর একটি গন্তব্য। ছবি: সংগৃহীত

ভ্রমণের জন্য সাধারণত সবাইকে নির্দিষ্ট কিছু জনপ্রিয় জায়গাকেই বেছে নিতে দেখা যায়। তবে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির মনোমুগ্ধকর দিক সম্পর্কে হয়তো অনেকেরই অজানা। 

ঐশ্বর্যে পরিপূর্ণ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ তাদের ঐতিহাসিক মহিমা, প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য দ্বারা ভ্রমণপ্রেমীদের কাছে খুবই জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। 

চলুন দেখে আসা যাক ভ্রমণ পরিকল্পনায় মধ্যপ্রাচ্যের কোন কোন জায়গাগুলো বিবেচনা করা যায়।

দাহাব, মিশর 

গরমের ছুটি কাটাতে মিশরের শান্ত ও অপূর্ব গ্রাম দাহাব হতে পারে আপনার গন্তব্য। ডুবুরিদের স্বর্গ নামে পরিচিত এই নির্জন জায়গাটিতে রয়েছে অপূর্ব প্রবাল প্রাচীর এবং ছবির মতো মনোরম নীল রঙের একটি উপহ্রদ। 

এই শহরের দুটি অংশ—মাসবাত ও নিউ দাহাব ভ্রমণের জন্য অপূর্ব দুটি স্থান। দাহাবে স্যান্ডবোর্ডিং ও সাফারির ব্যবস্থা আছে। তাই দেরি না করে পরবর্তী ভ্রমণের কিছু সুন্দর স্মৃতি নিয়ে বাড়ি ফেরার জন্য ঘুরে আসতে পারেন মিশরের দাহাবে।  

ছবি: সংগৃহীত

পেত্রা, জর্দান 

অধিকাংশ মানুষের ভ্রমণ বাকেট লিস্টে হয়ত জর্দানের নাম নেই। তবে যারা ভ্রমণপ্রেমী তারা কিন্তু ঘুরে আসতে পারেন মধ্যপ্রাচ্যের প্রাচীন সব বিস্ময়ে ভরা জর্দানের পেত্রা থেকে। বাইজেনটাইন আমলের প্রাচীন ও রঙ-বেরঙের স্থাপনায় সজ্জিত এই শহরটি নিজেই একটি প্রত্নতাত্ত্বিক সম্পদ। দ্য গ্রেট টেম্পল, দ্য ট্রেজারি, দ্য সিক, দ্য দাম এবং দ্য স্ট্রিট অব ফ্যাসাডস—এগুলো পেত্রা শহরের বিখ্যাত জায়গা। আপনি যদি প্রাচীন নগর ঘুরে দেখতে ভালোবাসেন এবং ইতিহাস ও ঐতিহ্য সম্পর্কে আগ্রহী হোন তবে ঘুরে আসুন জর্দানের পেত্রা নগরী। 

ছবি: সংগৃহীত

বিলাদ সাইট, ওমান 

আল হাজর পর্বতমালার নিম্নপ্রান্তে অবস্থিত বিলাদ সাইট একটি মরূদ্যান। ওমানে গেলে অবশ্যই এই জায়গাটি ঘুরে দেখা উচিৎ। এই প্রত্যন্ত জায়গায় যাওয়ার একমাত্র উপায় হাইকিং। 

ওয়াদি বানি আউফ এবং ওয়াদি আল সাহতান উপত্যকায় হাইক শেষে আপনি পৌঁছে যাবেন বিলাদ সাইটে। শেষ ধাপ পার করার পর আপনার চোখে পড়বে বিশাল সোপানভূমি আর  তার চারপাশে অসংখ্য ফলভর্তি খেজুর গাছ। 

ছবি: সংগৃহীত

চারিদিকে পাহাড়ে মোড়ানো এবং ট্যান ও আইভরি রঙের স্থাপনাগুলো দেখে মনে হয় এগুলো যেন পাথুরে পাহাড়ের গা থেকে নেমে এসেছে। এই গ্রামে হাইকিং করে আপনি প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের সান্নিধ্য পাবেন। এছাড়া এখানকার প্রাচীন ওয়াচটাওয়ার থেকে আপনি মধ্যযুগীয় ঘরবাড়িগুলোর একটি অসাধারণ দৃশ্য দেখতে পাবেন। 

আল-ফাতেহ্‌ মসজিদ, বাহরাইন

বাহরাইনের সবচেয়ে জনপ্রিয় স্থাপনাগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো মানামায় অবস্থিত আল-ফাতেহ্‌ মসজিদ। আশির দশকে স্থাপিত এই মসজিদ বাহরাইনের সবচেয়ে বড় মসজিদ যেখানে একত্রে ৭ হাজার মানুষ নামাজ পড়তে পারেন। মসজিদটি বানানো হয়েছে হালকা রঙের ইতালিয়ান মার্বেল পাথর দিয়ে আর মূল নামাজ ঘরের উপরে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ফাইবার গ্লাসের তৈরি গম্বুজ। 

আল ফাতেহ্‌ মসজিদ বাহরাইনের প্রথম মসজিদ যা পর্যটকদের ঘুরে দেখার সুযোগ রয়েছে। মসজিদের  মিহরাবটি সুসজ্জিত করা হয়েছে অস্ট্রিয়া থেকে আনা একটি বিশাল ঝাড়বাতি দ্বারা। আর তার চারপাশে রয়েছে বাহরাইনের বিখ্যাত প্রাচীন ঘরানার ক্যালিগ্রাফি। এখানে গিয়ে আপনি যেমন বিভিন্ন বিষয়ে জ্ঞান অর্জন করতে পারবেন তেমনি আপনার ভ্রমণটিও ভীষণ আকর্ষণীয় হয়ে উঠবে। 

ছবি: সংগৃহীত

বৈরুত, লেবানন

ভূমধ্যসাগরের অপরূপ সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারবেন লেবাননের বৈরুত থেকে। এখানে রয়েছে ঐতিহাসিকভাবে উল্লেখযোগ্য এবং সাংস্কৃতিক তাৎপর্য  সমৃদ্ধ অসংখ্য দর্শনীয় স্থান। পর্যটকরা এখানে বৈরুতের মধ্যযুগীয় প্রত্নবস্তুর জাতীয় জাদুঘর ঘুরে দেখতে পারেন। 

এছাড়া পর্যটকরা এখানকার স্থানীয় দোকানে ঘুরে সুভেনির কিনতে পারেন। আমেরিকান ইউনিভার্সিটি অব বৈরুতে রয়েছে কিছু অমূল্য পুরাকীর্তি। পর্যটকরা মোহাম্মদ আল-আমিন মসজিদটিও ঘুরে দেখতে পারেন।দুইটি জায়গাই আপনাকে বৈরুতের গৌরবময় অতীত সম্পর্কে ধারণা প্রদান করবে। 

সালমিয়া, কুয়েত 

কুয়েত শহর থেকে মাত্র ১৫ কিলোমিটার দূরে অপূর্ব সালমিয়া শহরটি অবস্থিত। কুয়েতের ইতিহাস ও সংস্কৃতি সম্পর্কে আগ্রহী হলে এই শহর থেকে ঘুরে আসতে পারেন। 

এখানকার তারেক রজব মিউজিয়াম অব ইসলামিক ক্যালিগ্রাফিতে দেখা মিলবে ইসলামিক পাণ্ডুলিপি, ক্যালিগ্রাফি, ভাস্কর্য, গহনাসহ ৩০ হাজারের বেশি প্রত্নবস্তু। অন্যদিকে শেখ আবদুল্লাহ আল সালেম সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে ২২টি গ্যালারী এবং ১১০০ টিরও বেশি সামগ্রী  রয়েছে।

সালেম আল-মুবারক স্ট্রিট, দেশটির অন্যতম বৃহত্তম এবং প্রাচীনতম খুচরা বাজার , সালমিয়াতে অবস্থিত। যদিও শহরটির কিছু অংশে আধুনিকতার ছোঁয়া লেগেছে, তবে কিছু অংশ আপনাকে পুরনো কুয়েতের কাছাকাছি নিয়ে যাবে। 

ছবি: সংগৃহীত

লিওয়া ওয়াসিস, সংযুক্ত আরব আমিরাত 

আবুধাবি এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের শাসক নাহিয়ান রাজবংশের জন্মস্থান ছিল এই অঞ্চল যা বর্তমানে লিওয়া নামে পরিচিত। এখান থেকে এম্পটি কোয়ার্টারের সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়। এম্পটি কোয়ার্টার একটি বিস্তীর্ণ মরুভূমি যা সংযুক্ত আরব আমিরাত, ইয়েমেন, ওমান এবং সৌদি আরবের ওপর প্রসারিত। ধারণা করা হয়, এই মরুভূমিতে সবচেয়ে বেশি মরুপাহাড় রয়েছে। এখানকার 'মরিব দুন' ৩০০ মিটার লম্বা যা পৃথিবীর সবচেয়ে বড় মরুপাহাড়।

অনুবাদ: সৈয়দা সুবাহ আলম 

 

Comments

The Daily Star  | English

What's causing the unrest among factory workers?

Kalpona Akter, labour rights activist and president of Bangladesh Garment and Industrial Workers Federation, talks to Monorom Polok of The Daily Star about the recent ready-made garments (RMG) workers’ unrest.

8h ago