সক্রিয় হবে লা নিনা, আগস্টে আবারও বন্যার আশঙ্কা
বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট প্রবল ঘূর্ণিঝড়ের ক্ষত না শুকাতেই বন্যার কবলে পড়েছে দেশের উত্তরপূর্বাঞ্চল, উত্তরাঞ্চল ও দক্ষিণপূর্বাঞ্চল। ইতোমধ্যে ১৫টি জেলায় লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন।
ধারণা করা হচ্ছে, চলমান বন্যা পরিস্থিতি আরও দীর্ঘায়িত হতে পারে এবং বন্যাকবলিত জেলার সংখ্যাও বাড়তে পারে। এরই মধ্যে আলোচনা শুরু হয়েছে আগামী মাসে নতুন করে বন্যার আশঙ্কা নিয়ে।
বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী সরদার উদয় রায়হান শনিবার দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'খুব সুনির্দিষ্ট করে বলার সময় এখনো আসেনি। তবে আগস্ট মাসে আরেকটি মৌসুমি বন্যার ঝুঁকি আছে।'
তিনি বলেন, 'সেই বন্যায় কী পরিমাণ ক্ষতি হতে পারে কিংবা বন্যা স্বল্প মেয়াদি, মধ্য মেয়াদি নাকি দীর্ঘ মেয়াদি হবে—তা ধারণা করার মতো তথ্য-উপাত্ত এখনো আমাদের হাতে আসেনি।'
রায়হান বলেন, 'তবে অতীত ইতিহাস অনুযায়ী দুটি করে পিক আসে। ইতোমধ্যে বন্যা চলমান। বর্ষা মাত্র শুরু হয়েছে এবং আবহাওয়া অধিদপ্তর তাদের দীর্ঘমেয়াদি পূর্বাভাসে জানিয়েছে, এ মাসে সামগ্রিকভাবে দেশে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা আছে।
'আরও বলা হয়েছে, বঙ্গোপসাগরে একটি বা দুটি লঘুচাপের সৃষ্টি হতে পারে, যার মধ্যে একটি মৌসুমি নিম্নচাপে পরিণত হতে পারে। মৌসুমি ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনার কথাও বলা হয়েছে। এছাড়া লা নিনা সক্রিয় হওয়ার সম্ভাবনাও আমরা দেখতে পাচ্ছি। এসব মিলিয়ে এবং ঐতিহাসিক পরিসংখ্যানে আলোকে বলা যায়, আগস্টে আরেকটি বন্যার ঝুঁকি আছে,' যোগ করেন তিনি।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ এসএম কামরুল হাসান ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আবহাওয়া মডেল অনুসারে লা নিনা বর্তমানে নিরপেক্ষ অবস্থায় আছে। আগস্ট-সেপ্টেম্বরে লা নিনা সক্রিয় হতে শুরু করবে এবং আগামী বছরের শুরুর দিকেও সক্রিয় অবস্থায় থাকতে পারে।'
প্রসঙ্গত, এল নিনোর ফলে পৃথিবীর কোথাও কোথাও স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি গরম হয়, অনাবৃষ্টি বা তুলনামূলক কম বৃষ্টি, কখনো কখনো খরা হয়। লা নিনা হলে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি ঠান্ডা, অতিবৃষ্টি দেখা দেয়। ২০১৭-১৮ সাল ছিল লা নিনা বছর। অধিকাংশ প্রাকৃতিক দুর্যোগ এই সময়ে হয়েছে এবং অনেকটা লা নিনার কারণে হয়েছে।
বর্তমানে সিলেট, সুনামগঞ্জ, নেত্রকোণা, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, রংপুর, জামালপুর, গাইবান্ধা, ফেনী, রাঙ্গামাটি, বগুড়া, কুড়িগ্রাম, সিরাজগঞ্জ, লালমনিরহাট, কক্সবাজার জেলায় লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে আছেন।
এর আগে গত ২৬ মে বাংলাদেশের উপকূলে আঘাত হানে ঘূর্ণিঝড় রিমাল। সম্প্রতি দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী মো. মহিববুর রহমান জানিয়েছেন, রিমালের আঘাতে দেশের ২০টি জেলায় প্রায় ছয় হাজার ৮৮০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের প্রাথমিক প্রতিবেদন অনুসারে, ৪৮টি জেলার কৃষিতে রিমালের প্রভাব পড়ে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় বরিশাল, খুলনা ও চট্টগ্রাম অঞ্চলের ১৩টি জেলায় এক লাখ ৭১ হাজার ১০৯ হেক্টর ফসলি জমির ক্ষতি হয়।
Comments