ইরানের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে সুবিধাজনক অবস্থানে সংস্কারপন্থীরা

পেজেশকিয়ান জানান, ইরানকে একঘরে করে রাখা হয়েছে। এই অবস্থা থেকে তিনি দেশকে মুক্তি দিতে চান। জয়ী হলে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার উদ্যোগ নেবেন, এমনটাও জানিয়েছেন এই নেতা। 
প্রেসিডেন্সিয়াল ডিবেটে অংশ নেওয়ার পর দুই প্রার্থী জালিলি ও পেজেশকিয়ান শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। ছবি: রয়টার্স
প্রেসিডেন্সিয়াল ডিবেটে অংশ নেওয়ার পর দুই প্রার্থী জালিলি ও পেজেশকিয়ান শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। ছবি: রয়টার্স

ইরানের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের দ্বিতীয় ধাপের ভোটগ্রহণ শুরু হয়েছে। প্রথম ধাপের ফল শেষে স্পষ্ট ব্যবধানে এগিয়ে আছেন একমাত্র সংস্কারপন্থী প্রার্থী মাসুদ পেজেশকিয়ান 

আজ শুক্রবার এই তথ্য জানিয়েছে এএফপি।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আহমাদ ওয়াহিদি রাষ্ট্রীয় টিভিতে দ্বিতীয় ধাপের ভোট শুরুর ঘোষণা দেন।

'আমরা ইরানের ১৪তম প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের দ্বিতীয় ধাপের ভোট শুরু করছি। দুই প্রার্থীর মধ্য থেকে দেশের পরবর্তী প্রেসিডেন্টকে বেছে নেওয়ার জন্য দেশের ৫৬ হাজার ৬৩৮ ভোটকেন্দ্রে ভোটগ্রহণ শুরু হয়েছে', জানান তিনি।

প্রথম ধাপের ভোটে চার প্রার্থীর মধ্যে ৪২ শতাংশ ভোট পেয়ে এগিয়ে ছিলেন পেজেশকিয়ান। ইরানের পরমাণু চুক্তির মধ্যস্থতাকারী জ্যেষ্ঠ নিরাপত্তা কর্মকর্তা সাইদ জালিলি ৩৯ শতাংশ ভোট পেয়ে দ্বিতীয় স্থান দখল করেন।

ইরানের নারী ভোটাররা ভোট দিচ্ছেন। ছবি: এএফপি
ইরানের নারী ভোটাররা ভোট দিচ্ছেন। ছবি: এএফপি

কোনো প্রার্থী এককভাবে ৫০ শতাংশ ভোট না পাওয়ায় এই শীর্ষ দুই প্রার্থীর মধ্যে দ্বিতীয় ধাপের নির্বাচন হচ্ছে আজ।

প্রথম ধাপে ছয় কোটি ১০ লাখ ভোটারের মধ্যে মাত্র ৪০ শতাংশ ভোটার ভোট দিয়েছেন। ইরানে ১৯৭৯ সালের ইসলামিক বিপ্লবের পর কোনো নির্বাচনে এত কম মানুষ ভোট দেয়নি।

বুধবার দেশের জনগণকে ভোট দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে শীর্ষ ধর্মীয় নেতা আয়াতোল্লাহ আলী খামেনি এক ভিডিও বার্তায় বলেন, 'প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের দ্বিতীয় ধাপ খুবই গুরুত্বপূর্ণ।'

গত সপ্তাহের ভোটে ১৩ দশমিক আট শতাংশ ভোট পেয়ে তৃতীয় স্থান দখল করেন পার্লামেন্টের স্পিকার ও রক্ষণশীল প্রার্থী বাঘের গালিবাফ। ইসলামিক নেতা মোস্তফা পুরমোহাম্মাদি এক শতাংশেরও কম ভোট পেয়েছেন।

মে মাসে কট্টরপন্থী প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় নিহত হওয়ার পর নির্বাচনের দিন ঘোষণা করা হয়।

দ্বিতীয় ধাপের ভোটের আগে দুই প্রার্থী দুইটি প্রেসিডেন্সিয়াল বিতর্কে অংশ নেন। সেখানে তারা ইরানের অর্থনীতি, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক, ইন্টারনেটের বিধিনিষেধ ও কম ভোটারের উপস্থিতি নিয়ে আলোচনা করেন। 

পেজেশকিয়ান (৬৯) পেশায় একজন হার্ট-সার্জন। ২০০৮ সাল থেকে তিনি পার্লামেন্টে উত্তর-পশ্চিমের শহর তাবরিজের প্রতিনিধিত্ব করছেন।

ভোট দেওয়ার পর ছবির জন্য পোজ দেন খামেনি। ছবি: এএফপি
ভোট দেওয়ার পর ছবির জন্য পোজ দেন খামেনি। ছবি: এএফপি

সাবেক সংস্কারপন্থী প্রেসিডেন্ট মোহাম্মাদ খাতামি ও হাসান রুহানি তার প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন। সার্বিকভাবে, দেশটির সবচেয় বড় সংস্কারপন্থী জোটের সমর্থন আদায় করতে সমর্থ হয়েছেন পেজেশকিয়ান।

জালিলি (৫৮) কট্টরপন্থীদের সমর্থন পেয়েছেন। একইসঙ্গে তিনি গালিবাফ ও অপর দুই রক্ষণশীল প্রার্থীর কাছ থেকেও সমর্থন পেয়েছেন। প্রথম ধাপের ভোটের আগেই তেহরানের মেয়র আলিরেজা জাকানি ও রাইসির সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট আমির-হোসেন গাজিজাদেহ হাশেমি তাদের প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেন।

ওয়াশিংটন ও ইউরোপের অন্যান্য দেশের সঙ্গে 'গঠনমূলক সম্পর্ক' সৃষ্টির আহ্বান জানিয়েছেন পেজেশকিয়ান। 

পেজেশকিয়ান জানান, ইরানকে একঘরে করে রাখা হয়েছে। এই অবস্থা থেকে তিনি দেশকে মুক্তি দিতে চান। জয়ী হলে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার উদ্যোগ নেবেন, এমনটাও জানিয়েছেন এই নেতা। 

অপরদিকে, জালিলি পশ্চিম-বিরোধী অবস্থানের জন্য পরিচিত। তিনি দাবি করেছেন, ইরানের উন্নয়ন যাত্রায় ২০১৫ সালের পারমাণবিক চুক্তি বাস্তবায়নের কোনো প্রয়োজনীয়তা নেই। 

জালিলির ভাষায়, যুক্তরাষ্ট্র ও বিশ্বের অন্যান্য পরাশক্তিদের প্রস্তাবিত এই চুক্তি ইরানের জন্য ক্ষতিকর। এই চুক্তির ফলে ইরানের পারমাণবিক কার্যক্রমে বিধিনিষেধ আরোপের বিনিময়ে অর্থনৈতিক বিধিনিষেধ থেকে ইরানকে মুক্তি দেওয়ার কথা বলা হয়েছে।

২০১৮ সালে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের উদ্যোগে এই চুক্তি থেকে সরে আসে যুক্তরাষ্ট্র। সে সময় থেকে বিষয়টি নিয়ে অচলাবস্থা চলছে।

বিশ্লেষকরা এই নির্বাচনকে সংস্কারপন্থী বনাম রক্ষণশীলদের লড়াই হিসেবে অভিহিত করলেও, একইসঙ্গে তারা স্বীকার করে নিয়েছেন, নির্বাচনের ফল যাই হোক এবং প্রেসিডেন্ট পদে যেই আসুক, তাকে শীর্ষ ধর্মীয় নেতা খামেনির বেঁধে দেওয়া নির্দেশনা অনুযায়ী দেশ পরিচালনা করতে হবে।

Comments

The Daily Star  | English

Ex-president Badruddoza Chowdhury passes away

He breathed his last at 3:15am today while undergoing treatment at the Uttara Women’s Medical College

1h ago