হবিগঞ্জে গ্রাম পঞ্চায়েতের চাপে দুই শিশুর মরদেহ ভাসানো হলো নদীতে

hobigonj_map.jpg
ছবি: স্টার অনলাইন গ্রাফিক্স

হবিগঞ্জের আজমিরীগঞ্জে পানিতে ডুবে মারা যাওয়া দুই শিশুর মরদেহ শ্মশানের সমাধি থেকে তুলে নদীতে ভাসিয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। গত শনিবার উপজেলার বদলপুর ইউনিয়নের পাহাড়পুরের মাহমুদপুর গ্রামের পঞ্চায়েতের নেতাদের চাপে এই ঘটনা ঘটে।

শনিবার ফুটবল খেলা শেষে পুকুরে গোসল করতে নেমে মারা যায় ওই গ্রামের দুই শিশু প্রলয় দাস (৭) ও সুর্য দাস (৬)। সনাতন ধর্মের রীতি অনুযায়ী মানুষের মরদেহের শেষকৃত্য হিসেবে দাহ করা হয়। তবে শিশুদের মরদেহ দাহ না করে সমাধিস্থ করার রীতি রয়েছে।

ঘটনার দিন বিকেলে প্রলয়ের মরদেহ শ্মশানে সমাধিস্থ করে তার পরিবার। বিষয়টি গ্রাম পঞ্চায়েতের মাতব্বররা জানার পর প্রলয়ের বাবা গোবিন্দ দাসকে ডেকে এনে শ্মশানে মরদেহ না রাখতে নির্দেশ দেয়। সমাধি থেকে মরদেহ তুলে পানিতে ফেলে দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়।

এক পর্যায়ে শিশুটির মরদেহ সমাধি থেকে তুলে বস্তাবন্দি করে কালনী নদীতে ফেলে দিতে বাধ্য হন গোবিন্দ দাস। প্রলয়ের মরদেহ নদীতে ফেলে দিতে দেখে মারা যাওয়া আরেক শিশু সূর্যের পরিবারও তার মরদেহ বস্তাবন্দি করে নদীতে ফেলে দেয়।

প্রলয়ের বাবা গোবিন্দ দাস বলেন, 'বিকেলে আমি আমার ছেলেকে পাহাড়পুর মহাশ্মশানের দেয়াল সংলগ্ন মাটির নীচে সমাধিস্থ করি। কিন্তু গ্রাম পঞ্চায়েত কমিটির সাধারণ সম্পাদক দীপেশ দাস ও কোষাধ্যক্ষ অসিত সরকারসহ গ্রাম পঞ্চায়েতের লোকেরা আমাকে ডেকে লাশ তুলে নদীতে ভাসিয়ে দিতে বলেন। আমি লাশ না তোলার জন্য গ্রাম পঞ্চায়েত কমিটির সাধারণ সম্পাদক, কোষাধ্যক্ষসহ উপস্থিত সবার হাতে পায়ে ধরে কান্নাকাটি করলেও তারা আমার কথা শুনেননি। অবশেষে পঞ্চায়েত কমিটির চাপে সন্ধ্যায় ছেলের লাশ তুলে নদীতে ভাসিয়ে দিতে বাধ্য হই।'

অন্য শিশুটির বাবা রুবেল দাস বলেন, 'শ্মশানে গোবিন্দ দাসের ছেলের লাশ সমাধিস্থ করতে বাধা দেওয়ার বিষয়টি জানার পর আমার ছেলে সূর্যের লাশ বস্তায় ভরে নদীতে ফেলে দিয়েছি।'

গ্রাম পঞ্চায়েত কমিটির সাধারণ সম্পাদক দীপেশ সরকার বলেন, 'এটি আমার একার সিদ্ধান্ত না। গ্রাম কমিটির সবার সিদ্ধান্ত ছিল।'

পঞ্চায়েতের কোষাধ্যক্ষ অসিত সরকার বলেন, 'গ্রামের কমিটির সিদ্ধান্ত হল শ্মশান পরিষ্কার রাখার জন্য কোনো সমাধি করা যাবে না। এই সিদ্ধান্ত এলাকার সবার জন্য প্রযোজ্য।'

বদলপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সুসেনজিৎ চৌধুরীর বলেন, 'বিষয়টি লোকমুখে শুনেছি। ঘটনাটি অমানবিক। শ্মশান তো মানুষের সৎকারের জন্যই। এখানে সমাধি করা হলে শ্মশানের পরিচ্ছন্নতার বিষয় কেন আসবে।'

আজমিরীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ডালিম আহমেদ বলেন, 'এ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে দেখছি। অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।'

তিনি আরও বলেন, 'পুরো ঘটনাটি অমানবিক। একটি গ্রামের পঞ্চায়েত কমিটি এটা করতে পারে না। আমরা এলাকা পরিদর্শন করে ভিকটিমকে অভিযোগ দিতে বলে এসেছি।'

Comments

The Daily Star  | English

Chief adviser calls for urgent reforms in social services to prioritise senior citizens, girls

Political interference led to unfair distribution of benefits in the past, he says

1h ago