বেনজীর ও তার পরিবারের সম্পদ নিয়ে দুদকের তদন্ত শেষ পর্যায়ে

বেনজীর আহমেদ। ছবি: সংগৃহীত

পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক বেনজীর আহমেদের সম্পদের বিষয়ে নথিপত্র ও মাঠ পর্যায়ের তদন্তের পুঙ্খানুপুঙ্খ বিশ্লেষণ সম্পন্ন করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। জানা গেছে দুই মাসব্যাপী তদন্তের শেষ পর্যায়ে পৌঁছেছে কমিশন।

এদিকে বৈধভাবে এসব সম্পদ অর্জিত হয়েছে বলে বেনজীরের লিখিত দাবি গ্রহণ করেনি দুদক।

দুদকের টিম কমিশনে জমা দেওয়ার জন্য একটি বিস্তৃত প্রতিবেদন তৈরি করছে। প্রতিবেদনে বেনজীর আহমেদ, তার স্ত্রী জিসান মির্জা এবং তার দুই মেয়ে ফারহিন রিশতা বিনতে বেনজীর এবং তাহসিন রাইসা বিনতে বেনজীরের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের সুপারিশ করা হতে পারে।

তবে বেনজীরের কাছ থেকে বিস্তারিত সম্পদ বিবরণী চাওয়া হবে কিনা তা নিয়ে কমিশনের মধ্যে কিছুটা অনিশ্চয়তা আছে। প্রাপ্ত নির্দেশনার উপর নির্ভর করে, দুদক দল হয় সম্পদের বিবরণের জন্য একটি নোটিশ জারি করতে পারে বা সরাসরি চার্জ দাখিলের সুপারিশ করতে পারে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দুদকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, বেনজীর ও তার পরিবার লিখিত বক্তব্যে দাবি করেছেন, তাদের সম্পদ বৈধভাবে অর্জিত হয়েছে। কিন্তু তাদের ব্যাখ্যা নতুন কিছু যোগ করে না এটি তাই অগ্রহণযোগ্য। সংগৃহীত তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণের ভিত্তিতে দুদক দল শিগগিরই কমিশনে তাদের প্রতিবেদন দাখিল করবে।

বেনজীর ও তার পরিবারের লিখিত বক্তব্য গত ২০ জুন দুদক চেয়ারম্যানের কাছে জমা দেওয়া হয় বলে জানিয়েছেন দুদক সচিব খোরশেদা ইয়াসমিন।

'আশা করি, আমরা আমাদের সময়সূচি অনুযায়ী আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করতে পারব।'

এদিকে গুলশানে বেনজীরের চারটি ফ্ল্যাট পরিদর্শনের জন্য একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট চেয়ে আদালতে আবেদন করার পরিকল্পনা করছে দুদকের সম্পদ ব্যবস্থাপনা ইউনিট। ইউনিটটি এই ফ্ল্যাটগুলোর অভ্যন্তরে থাকা জিনিসপত্রের একটি তালিকা করতে চায়। এরপর এসব সম্পদ ব্যবস্থাপনার বিষয়ে আদালতের নির্দেশনা চাইবে দুদক।

সাবেক আইজিপির পরিবার এই চারটি ফ্ল্যাটে থাকতেন, যা বর্তমানে তালাবদ্ধ রয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে পরিবারটি দেশে নেই।

অনুসন্ধানের অংশ হিসেবে গত ৬ জুন বেনজীর এবং ৯ জুন তার স্ত্রী ও দুই মেয়েকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করা হলেও তারা হাজির হননি। তবে দুদকের পক্ষ থেকে তাদের বিরুদ্ধে কোনো ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়নি।

গত ২৩ ও ২৪ জুন তাদের আবারও তলব করা হয়। হাজির না হয়ে গত ২০ জুন তারা তাদের আইনজীবীর মাধ্যমে লিখিত বক্তব্য দাখিল করেন। বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, পরিবারটি বিদেশে আছে।

দুর্নীতি ও বিপুল পরিমাণ অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগের পাশাপাশি বেনজীরের বিরুদ্ধে পাসপোর্টে পুলিশের পরিচয় গোপন করারও অভিযোগ রয়েছে। পুলিশ বাহিনীতে উচ্চ পদে অধিষ্ঠিত হওয়া সত্ত্বেও তিনি সরকারি চাকরি ও পাসপোর্ট বিধি লঙ্ঘন করে বেসরকারি চাকরিজীবী হিসেবে পাসপোর্ট সংগ্রহ করেন।

পাসপোর্ট রিনিউ করার সময় এর সম্পর্কে জানা যায়। যার ফলে পাসপোর্ট অফিস এই প্রক্রিয়া বন্ধ করে দেয়। সেই সময়ে, বেনজীর র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের মহাপরিচালক ছিলেন এবং তার প্রভাব খাটিয়ে পাসপোর্ট নেন।

বেনজীর ও তার পরিবারের সদস্যদের সাতটি পাসপোর্ট পেয়েছে দুদক।

গত ২৫ জুন বেনজীরের পাসপোর্ট জালিয়াতির বিষয়ে পাসপোর্ট অফিসের আট কর্মকর্তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে কমিশন।

গত ৩১ মার্চ একটি জাতীয় দৈনিকে বেনজীর ও তার পরিবারের অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ প্রকাশিত হলে তা যাচাই-বাছাই করে তদন্ত শুরু করে দুদক।

গত ২২ এপ্রিল উপ-পরিচালক হাফিজুল ইসলামের নেতৃত্বে তদন্ত শুরু হয়। দলে দুদকের প্রধান কার্যালয় থেকে তিন সদস্যের বিশেষ তদন্ত দলও রয়েছে।

 

Comments

The Daily Star  | English

Election in first half of April 2026

In his address to the nation, CA says EC will later provide detailed roadmap

12h ago