প্রস্তাবিত বাজেটে উপেক্ষিত স্টার্টআপ

এতে দেশের বেসরকারি ১৩ হাইটেক পার্কের বিকাশ বাধাগ্রস্ত হবে। সেখানকার স্টার্টআপগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
স্টার্টআপ
অলঙ্করণ: আনোয়ার সোহেল/স্টার ডিজিটাল গ্রাফিক্স

আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে স্টার্টআপের জন্য সুখবর নেই। তাদের দীর্ঘদিনের দাবিগুলো উপেক্ষা করা হয়েছে। এটি সরকারের 'স্মার্ট বাংলাদেশ' রূপকল্পের সঙ্গে সাংঘর্ষিক বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। এই রূপকল্পে স্টার্টআপকে ধরা হয়েছে অর্থনৈতিক মূল চালিকাশক্তি হিসেবে।

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, স্টার্টআপের চাহিদা পূরণ না করার পাশাপাশি, বাজেটে কিছু সুবিধা বন্ধ করা হয়েছে। ফলে তাদের চ্যালেঞ্জ আরও বেড়ে যাবে। স্টার্টআপগুলো ইতোমধ্যে অর্থ সংকটে পড়েছে।

অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী ঘোষণা দিয়েছেন, আগামী অর্থবছর থেকে হাইটেক পার্কের বিনিয়োগকারী ও ডেভেলপাররা তাদের আয়ের ওপর ১০ বছরের কর মওকুফ হারাতে যাচ্ছেন।

এতে দেশের বেসরকারি ১৩ হাইটেক পার্কের বিকাশ বাধাগ্রস্ত হবে। সেখানকার স্টার্টআপগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেসের (বেসিস) সভাপতি রাসেল টি আহমেদ স্টার্টআপগুলোর সুবিধা বজায় রাখতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এ ধরনের ব্যবস্থা সরকারের দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গেও মেলে না।'

তিনি আরও বলেন, 'বিনিয়োগ পেতে হাইটেক পার্কগুলো এমনিতেই হিমশিম খাচ্ছে।'

সরকারি হাইটেক পার্কের ক্ষেত্রে আগামী অর্থবছর থেকে মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানিতে এক শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হবে।

আইওটি ডিভাইস নির্মাতা প্রতিষ্ঠান বন্ডস্টাইন টেকনোলজিস লিমিটেডের মীর শাহরুখ ইসলাম ডেইলি স্টারকে বলেন, 'মূলত এসব সুবিধার কারণেই হাইটেক পার্কের প্রতি বিনিয়োগকারীরা আকৃষ্ট হয়েছেন। এগুলো তুলে নিলে বিনিয়োগকারীরা নিরুৎসাহিত হবেন।'

সরকারকে বিদ্যমান শুল্কমুক্ত সুবিধা বজায় রাখতে ও বিনিয়োগ বাড়াতে বেসরকারি খাতকে সহযোগিতা করার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। তার আশা, 'এর ফলে আগামী কয়েক বছরে হাইটেক পার্কে বিদেশি বিনিয়োগ উল্লেখযোগ্য হারে বাড়বে।'

সরকারের 'স্মার্ট বাংলাদেশ'র মূল ভিত্তি স্মার্ট নাগরিক, স্মার্ট সরকার, স্মার্ট সমাজ ও স্মার্ট অর্থনীতি।

'বাজেটে এমন কিছু দেখেননি যা স্টার্টআপের প্রবৃদ্ধি বাড়াতে পারে' উল্লেখ করে বেসিসের সাবেক সভাপতি ফাহিম মাসরুর বলেন, 'ই-কমার্স ও লজিস্টিক স্টার্টআপগুলো পার্সেল ডেলিভারির ওপর ১৫ শতাংশ ভ্যাট ও অনলাইনে পণ্য বিক্রির ওপর পাঁচ শতাংশ ভ্যাট তুলে নেওয়ার দাবি জানিয়ে আসছে। তাদের দাবি পূরণ হয়নি।'

স্মার্ট অর্থনীতির অধীনে ২০৪১ সালের মধ্যে কমপক্ষে ২৫ স্টার্টআপ প্রতিষ্ঠান গড়ার লক্ষ্য নিয়ে অর্থনীতিতে আইসিটি খাতের অবদান ৫০ বিলিয়ন ডলার করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।

একটি স্টার্টআপ প্রতিষ্ঠানের দাম এক বিলিয়ন ডলারেরও বেশি।

'বাজেটে এমন কিছু দেখেননি যা স্টার্টআপের প্রবৃদ্ধি বাড়াতে পারে' উল্লেখ করে বেসিসের সাবেক সভাপতি ফাহিম মাসরুর বলেন, 'ই-কমার্স ও লজিস্টিক স্টার্টআপগুলো পার্সেল ডেলিভারির ওপর ১৫ শতাংশ ভ্যাট ও অনলাইনে পণ্য বিক্রির ওপর পাঁচ শতাংশ ভ্যাট তুলে নেওয়ার দাবি জানিয়ে আসছে। তাদের দাবি পূরণ হয়নি।'

গত ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটে সরকার স্টার্টআপ স্যান্ডবক্স চালু করেছিল। টার্নওভার করের হার শূন্য দশমিক ছয় শতাংশ থেকে কমিয়ে শূন্য দশমিক এক শতাংশ করা হয়েছে।

তবে শর্ত দেওয়া হয়, পাঁচ বছরের বেশি পুরোনো স্টার্টআপ স্যান্ডবক্সের সুবিধা নিতে পারবে না।

ফাহিম মাসরুর আরও বলেন, 'দেশের শীর্ষ স্টার্টআপগুলোর অধিকাংশেই বয়স পাঁচ বছরের বেশি। তারা এই সুবিধার জন্য আবেদন করতে পারবে না। যতদূর জানি, কোনো প্রতিষ্ঠান এই সুবিধা নেয়নি।'

প্রস্তাবিত বাজেটে সরকার ১৯ আইসিটি ব্যবসায়ের জন্য আগামী তিন বছর কর অব্যাহতি ঘোষণা করেছে। তবে শর্ত, তাদেরকে নগদহীন লেনদেন প্রক্রিয়া বাস্তবায়ন করতে হবে।

ক্লাউড পরিষেবা ও ওয়েব হোস্টিং সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে তালিকা থেকে সরিয়ে দেওয়ায় স্টার্টআপগুলোর মধ্যে উদ্বেগ সৃষ্টি হয়। কেননা, এই ধরনের পরিষেবার ওপর তারা নির্ভরশীল।

সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, ওয়েব হোস্টিং ও ক্লাউড পরিষেবা স্টার্টআপগুলোর জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কেননা, তারা কম খরচে অনলাইনে কাজ, ডেটা স্টোরেজ ও অ্যাপ রাখার ব্যবস্থা করে।

এই খাতে কর আরোপের ফলে স্টার্টআপগুলোর ব্যবসার খরচ বাড়বে।

সারা বিশ্বে তহবিল সংকটের কারণে গত জানুয়ারি-মার্চ প্রান্তিকে দেশের স্টার্টআপগুলোয় বিনিয়োগ ৭০ শতাংশ কমে প্রায় ছয় দশমিক সাত মিলিয়ন ডলার হয়েছে।

ম্যানেজমেন্ট কনসাল্টিং ফার্ম লাইটক্যাসল পার্টনার্সের মতে, গত বছরের একই সময়ের তুলনায় তা কমেছে ৮২ শতাংশ।

Comments

The Daily Star  | English

An economic corridor that quietly fuels growth

At the turn of the millennium, travelling by road between Sylhet and Dhaka felt akin to a trek across rugged terrain. One would have to awkwardly traverse bumps along narrow and winding paths for upwards of 10 hours to make the trip either way.

11h ago