ব্যাটিংয়ের মতন নেতিবাচক নেতৃত্বেও প্রশ্নবিদ্ধ শান্ত  

আফগানিস্তানের কাছে হারের ধাক্কায় তখন বিহ্বল বাংলাদেশের মানুষ। ম্যাচ হারের চেয়ে সেমিফাইনালের সমীকরণ মেলাতে না পারা কিংবা সেই লক্ষ্যে প্রশ্নবিদ্ধ অ্যাপ্রোচ তখন মানুষকে ধাক্কা দিয়েছে প্রবল। কিন্তু ধাক্কার যে তখনো বাকি! যখন কিনা অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত স্পষ্ট করে জানালেন, তাদের অগ্রাধিকারের মধ্যে সেমিফাইনাল সমীকরণ ছিলোই না!
Najmul Hossain Shanto
ফাইল ছবি: একুশ তাপাদার/স্টার

আফগানিস্তানের কাছে হারের ধাক্কায় তখন বিহ্বল বাংলাদেশের মানুষ। ম্যাচ হারের চেয়ে সেমিফাইনালের সমীকরণ মেলাতে না পারা কিংবা সেই লক্ষ্যে প্রশ্নবিদ্ধ অ্যাপ্রোচ তখন মানুষকে ধাক্কা দিয়েছে প্রবল। কিন্তু ধাক্কার যে তখনো বাকি! যখন কিনা অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত স্পষ্ট করে জানালেন, তাদের অগ্রাধিকারের মধ্যে সেমিফাইনাল সমীকরণ ছিলোই না! শুরুতে তারা চেষ্টা করবেন, তবে উইকেট হারালে কোনরকমভাবে জেতার চেষ্টাই থাকবে মুখ্য!

অধিনায়কের মুখে এমন অবিশ্বাস্য কথা হজম হওয়ার কথা নয় কারো। এমন রক্ষণাত্মক ও উদ্দেশ্যবিহীন পরিকল্পনায় শুধু অধিনায়ক নন, নিশ্চিতভাবে কোচ ও টিম ম্যানেজমেন্টের অন্যরাও যুক্ত থাকেন। তবে অধিনায়কের দায়টাই সবচেয়ে বেশি। ক্রিকেট মূলত অধিনায়ক নির্ভর খেলা, তার সিদ্ধান্তের প্রভাবই সবচেয়ে প্রবল।

সংবাদ সম্মেলনে গুছিয়ে কথা বলেন বলে সুনাম শান্তর। আফগানদের কাছে হেরেও গুছিয়েই কথা বলেছেন। তবে তার সেসব কথা এতটাই নেতিবাচক চিন্তায় ভরপুর যে গোটা বাংলাদেশ দলের সংস্কৃতিকে তুলে দিয়েছে কাঠগড়ায়। শান্ত বলেছেন, 'প্রথমত আমরা ম্যাচটা জিততে চেয়েছি। শুরুর পরিকল্পনা সেটিই ছিল। প্রথম ইনিংস পরে যখন স্কোর-বোর্ডে তাদের রান ১১৫ আমরা দেখলাম, আমাদের একটি পরিকল্পনা ছিল যে আমরা ১২.১ ওভারে জিততে পারি।'

'আমাদের পরিকল্পনা ছিল প্রথম ছয় ওভারে চেষ্টা করবো। যদি ভালো শুরু করি, শুরুতে উইকেট না পড়ে তাহলে আমরা ওই সুযোগটা নিবো (সেমিতে যাওয়ার)। কিন্তু যখন আমাদের দ্রুত তিন উইকেট পড়ে গেল, তখন আমাদের পরিকল্পনা ছিল কীভাবে ম্যাচটা জিততে পারি।'

অবিশ্বাস্যভাবে হলেও সত্যি পুরস্কার বিতরণী আয়োজন ও সংবাদ সম্মেলন মিলিয়ে এসব কথাই বেরিয়েছে বাংলাদেশ অধিনায়কের মুখ দিয়ে।

যেকোনো উইকেটেই ১২.১ ওভারে ১১৬ রান করা বাংলাদেশ দলটির জন্য সহজ না। হ্যাঁ, সেন্ট ভিনসেন্টের মাঠের কঠিন উইকেটে সেটা অনেক বেশি চ্যালেঞ্জের। কিন্তু সেই চ্যালেঞ্জ না দিয়ে স্রেফ পানসে একটা জয় নিয়ে বাংলাদেশ দলের লাভটা কি ছিলো? সেই তো বিশ্বকাপ থেকে বিদায়। যখন হাতের কাছে কঠিন হলেও সেমিফাইনালে যাওয়ার অভাবনীয় একটা সুযোগ এসেছে, সেই চেষ্টায় কেন পুরোপুরি ঝাঁপাবে না একটা দল? এবং অধিনায়ক পরে স্বীকার করে নিয়ে বলবেন, তারা নিরাপদ পথে হেঁটে জিততেই চেয়েছেন কেবল। সেই জয়ে কিছু অর্থপ্রাপ্তি ছাড়া গৌরবের কিছু ছিলো না। তাও যদিও পরে পায়নি বাংলাদেশ।

এবার বিশ্বকাপে ৭ ম্যাচে শান্ত স্রেফ ১৬ গড় ও ৯৫.৭২ স্ট্রাইকরেটে করেছেন ১১২ রান। টি-টোয়েন্টিতে এমনিতেই শান্তর পরিসংখ্যান বেশ নাজুক। ৪৬টা ম্যাচ খেলে ২৩.২৮ গড়ে ৯০৮ রান করলেও তার স্ট্রাইকরেট মাত্র ১০৭.৭১। তার ব্যাটিংয়ের ধরণের সঙ্গে এই সংস্করণ যায় কিনা এই প্রশ্ন আগেই উঠেছে। তবে অধিনায়কত্বের কারণে খেলে যাচ্ছিলেন তিনি। তার নেতৃত্ব অনেকবার প্রশংসাও পেয়েছে।

বিশ্বকাপের সুপার এইটের মঞ্চে দুটি চল্লিশ ছাড়ানো ইনিংসে সামান্য রানের দেখা পেলেও এবার নেতৃত্ব করল হতাশ। তিন ম্যাচেই এমন কিছু রক্ষণশীল মনোভাব তিনি দেখালেন যেটাতে তাকে নিয়ে এই সংস্করণে বাজি ধরা কঠিন।

আফগানিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচের কথা তো বলা হলোই। অস্ট্রেলিয়া ও ভারতের বিপক্ষে আগের দুই ম্যাচেও তিনি দেখিয়েছেন তার নেতিবাচক চিন্তার ছাপ। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে টস হেরে ব্যাটিং পাওয়ার পর বলেছিলেন, 'উইকেট বেশ ভালো, এখানে ১৫০-১৬০ রান করলে চ্যালেঞ্জ জানানো যাবে।'  বাংলাদেশ আড়ষ্ট, জড়সড়ো হয়ে করল ১৪০ রান। যেই রান অজিদের কাছে মনে হলো তুড়ি মেরে তুলে নেওয়ার মতন। উইকেট আসলে এতটাই ভালো ছিলো। সেখানে ব্যক্তিগত চিন্তা থেকে যে কেউ মন্থর খেলেননি, দলেরই পরিকল্পনা ছিলো ম্যাচ হেরে তা জানান শান্ত নিজেই, 'শুরুর দিকে আমাদের একটু দেখে খেলারই পরিকল্পনা ছিলো। কারণ আগের ম্যাচগুলোতে আমরা ভালো শুরু পাচ্ছিলাম না। কাজেই ছয় ওভার কীভাবে আমরা উইকেট হাতে নিয়ে শেষ করতে পারি এটা একটা পরিকল্পনা ছিলো।'

ভারতের বিপক্ষে পরের ম্যাচে টস জিতে ব্যাটিং স্বর্গে শক্তিশালী প্রতিপক্ষকে ব্যাট করতে পাঠালেন। সেদিনও টসের সময় বলেছিলেন, 'উইকেট বেশ ভালো, ১৫০-১৬০ রানের মধ্যে আটকাতে পারলে জিততে পারব।' অর্থাৎ শান্তর কাছে ব্যাট করার জন্য ভালো উইকেট মানেও সেটা ১৬০ রানের রেঞ্জের। ফলাফল আমরা দেখলাম ভারত চড়ল ১৯৬ রানের পাহাড়ে। বাংলাদেশ পুরো ২০ ওভার খেলেও দেড়শো রান করতে পারল না।

শান্ত নিজের ব্যাটিং ঘরানার মতই দলের পরিকল্পনা রেখেছিলেন রয়েসয়ে। টি-টোয়েন্টি সংস্করণে যা করে আসলে বড় কিছুর দেখা পাওয়া মুশকিল।

Comments

The Daily Star  | English

S Alam’s tax file shows no foreign income

S Alam Group owner Mohammed Saiful Alam’s 2022-2023 tax file is a puzzle. In that tax year, he declared personal assets worth Tk 2,532 crore, but did not show any personal bank loans from Bangladesh or his foreign income.

25m ago