ভালো বেতনে ‘চাকরির লোভ’ দেখিয়ে ভারতে পাচার, টার্গেট নারী পোশাককর্মী

গ্রেপ্তার মো. তারেক। ছবি: সংগৃহীত

কিশোর বয়সী দরিদ্র পোশাক কর্মীদের ভারতের পার্লারে বেশি বেতনে চাকরির লোভ দেখিয়ে বিক্রি ও পাচারের অভিযোগে আন্তর্জাতিক সংঘবদ্ধ মানবপাচার চক্রের এক সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

ভারতে পাচার হওয়া এক কিশোরী দেশে ফিরে মামলা করার পর চক্রের সদস্য মো. তারেককে (৩৪) শনাক্ত করে গ্রেপ্তার করে বন্দরনগরী চট্টগ্রামের বায়েজিদ বোস্তামী থানা পুলিশ। 

বায়েজিদ বোস্তামী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সঞ্জয় কুমার সিনহা দ্য ডেইলি স্টারকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

তিনি জানান, রোববার রাতে নগরীর চন্দ্রনগর এলাকার একটি বহুতল ভবনে অভিযান চালিয়ে মো. তারেককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

ওসি বলেন, 'গ্রেপ্তার যুবক দীর্ঘদিন ধরে কিশোরীদের সড়কপথে যশোর নিয়ে গিয়ে, সেখান থেকে অবৈধভাবে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে ভারতে পাচার করে আসছিল। ওই কিশোরীদের ভারতের বিভিন্ন জায়গায় বিক্রি করে যৌন নিপীড়ন করা হয়।'

তিনি আরও বলেন, 'ভারত থেকে উদ্ধার এক কিশোরী গত ৬ জুন বাংলাদেশে ফিরে আসার পর পুলিশের কাছে অভিযোগ করলে তদন্ত শুরু হয়। ওই কিশোরীর সঙ্গে পাচার হওয়া ২৫ বছর বয়সী আরও এক তরুণী বর্তমানে ভারতে অবস্থান করছেন। তিনিও পোশাককর্মী ছিলেন।'

পুলিশ কর্মকর্তা সঞ্জয় সিনহা বলেন, 'গ্রেপ্তার তারেকের স্ত্রী ঝুমুসহ আরও নারী সদস্য আছে এই চক্রে। চক্রের সদস্যদের নেটওয়ার্ক চট্টগ্রাম থেকে যশোর জেলার সীমান্ত এলাকা পর্যন্ত বিস্তৃত। আমরা মামলাটি অতি গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করছি।'

হেঁটে সীমান্ত পার

পুলিশ জানায়, উদ্ধার হওয়া রংপুরের ১৯ বছরের সেই তরুণী হাটহাজারীতে থাকতেন এবং বায়েজিদ এলাকার একটি গার্মেন্টসে চাকরি করতেন। ভারতে পাচার হওয়া তার বান্ধবীও একই গার্মেন্টসে চাকরি করতেন। তারা আরও ভালো বেতনের চাকরির জন্য গত এপ্রিল মাসে চাকরি ছেড়ে দেন। 

মামলার এজাহারে ওই তরুণী উল্লেখ করেন, চক্রের সদস্য পেশায় পোশাককর্মী পারভীন আক্তারের সঙ্গে তাদের অন্য একটি পোশাক কারখানায় দেখা হয়। পারভীন তাদের ভালো বেতনে ভারতের বিউটি পার্লারে চাকরির অফার দেন এবং চক্রের সদস্য তারেকের স্ত্রীর ঝুমুর কথা বলেন। 

পারভীন নিজেও ভারতে যাচ্ছে বলে তাদের জানান। তার কথামতো বিস্তারিত জানতে বায়েজিদে তারেকের বাসায় কয়েকদিন পর যান ওই দুজন। সেখানে চাকরির খুঁটিনাটি সম্পর্কে ধারনা দেন ঝুমু ও তারেক। 

দুজনকেই মাসে ৪০ হাজার টাকা বেতনের চাকরি প্রস্তাব দেন তারা। ঝুমু, তারেক ও পারভীনের কথায় আশ্বস্ত হয়ে দুজনই রাজি হন ভারতে যেতে।

মামলার বরাত দিয়ে ওসি বলেন, 'পাচার হওয়া দুই নারী ও চক্রের তিন সদস্য চট্টগ্রামের দামপাড়া বাস কাউন্টার এলাকায় শ্যামলী পরিবহনের একটি গাড়িতে করে যশোর যান গত ২৯ মে বিকেলে। পরদিন যশোরে পৌঁছালে চক্রের আরেক সদস্য আনিসুর দুজনকে তার বাসায় নিয়ে যান।'

'সেই বাসায় তিন চারজনের একটি গ্রুপ এসে আনিসুরের সঙ্গে কথা বলে। সন্ধ্যার পর আনিসুর ওই দুজনসহ আরও কয়েকজনকে লোকাল বাসে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী এক গ্রামের অজ্ঞাতস্থানে নিয়ে রাখে। সেখান থেকে রাত ৯টার পর তাদের বের করে হাঁটতে বলা হয়,' বলেন ওসি সঞ্জয়।

প্রায় ছয় কিলোমিটার হাঁটার পর রাতে একটি বাগানে তাদের রাখা হয়। ৩১ মে ভোরে তাদের সীমান্তের কাঁটাতার পার করানো হয়। সে সময় তাদের সঙ্গে ঝুমু ও পারভীনও ছিল। কাঁটাতারের ওপারে  আরেকটি দলের কাছে দুজনকে বুঝিয়ে দেওয়া হয়। 

মামলার বরাতে ওসি জানান, ওই দুজনকে সেখানে থেকে দুটি গ্রুপ ভারতের রাঁচিতে একটি হোটেলে নিয়ে রাখে। হোটেলে যাওয়ার পর তারা বুঝতে পারেন যে তাদের বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে এবং প্রতিবাদ করলে ভুক্তভোগীকে রাঁচিতে আরেকটি হোটেলে নিয়ে রাখা হয়।

এজাহারে আরও বলা হয়েছে, এক পর্যায়ে আবারো রাঁচির সেই হোটেলে ভুক্তভোগীকে আনা হলে তিনি জানতে পারেন তার বান্ধবী সেখান থেকে পালিয়ে গেছেন। পরে সেখানে আরেক নারী ভুক্তভোগীকে কলকাতা রেলস্টেশনের একটি টিকিট কেটে দেয় এবং কলকাতায় গিয়ে তার ভাইকে ফোন করলে স্থানীয়দের সহায়তায় তিনি বাংলাদেশে ফিরে আসেন।

ওসি সঞ্জয় বলেন, 'এই চক্রটি মূলত দরিদ্র পোশাক কর্মীদের টার্গেট করে। চট্টগ্রামের পোশাক কারখানাগুলোতে দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে কাজ করতে আসেন নারীরা। আসামি তারেক জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছে যে অবৈধভাবে সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে নিয়ে কিশোরীদের পাচারে সংঘবদ্ধ চক্রের ভারতীয় সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করতেন তার স্ত্রী।'

'এই চক্রটি এখন পর্যন্ত কতজনকে ফাঁদে ফেলেছে তা আমরা জানার চেষ্টা করছি,' বলেন ওসি।

Comments

The Daily Star  | English

Dhaka airport receives 2nd bomb threat

Operations at HSIA continue amid heightened security

41m ago