সরকার নির্ধারিত দরে বিক্রি হচ্ছে না কাঁচা চামড়া

কোরবানি, কোরবানির ঈদ, গরুর চামড়া, কোরবানির চামড়া, কাঁচা চামড়া,
পুরান ঢাকার সিদ্ধেশ্বরী রোডে স্তূপ করে রাখে কোরবানির পশুর চামড়া। ছবি: স্টার

সারাদেশে মৌসুমি ব্যবসায়ীদের কাছে কাঁচা চামড়ার চাহিদা কম থাকায় সরকার নির্ধারিত মূল্যে বিক্রি হচ্ছে না বলে দাবি করেছেন কোরবানির ঈদে পশু কোরবানি দেওয়া ব্যক্তিরা।

তারা বলছেন, গরুর চামড়ার জন্য মৌসুমি ব্যবসায়ীরা অনেক কম দাম দিচ্ছেন।

উদাহরণ হিসেবে এখানে বলা যেতে পারে, এক লাখ টাকায় কেনা একটি গরুর চামড়ার জন্য মাত্র ৪০০ টাকা দিতে চেয়েছেন মৌসুমি ব্যবসায়ীরা। একইভাবে এক লাখ ১৬ হাজার টাকায় কেনা আরেকটি গরুর চামড়া বিক্রি হয়েছে মাত্র ৪০০ টাকায়।

নরসিংদীর মোবারক হোসেন বলেন, 'আমি মাত্র ৪০০ টাকা দরে গরুর চামড়া বিক্রি করেছি।'

মোবারক হোসেন জানান, এ বছর দাম অনেক কম হলেও মৌসুমি ব্যবসায়ীদের কাছে কাঁচা চামড়ার চাহিদা আছে।

কারণ ট্যানারি কারখানায় পুরাতন চামড়ার মজুত থাকায় গত কয়েক বছর ধরে কাঁচা চামড়ার চাহিদা ছিল খুবই কম।

এছাড়া করোনা মহামারি ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক অস্থিতিশীলতা দেখা দেয়। ফলে, বিশ্ব জুড়ে চামড়াজাত পণ্য ও চামড়াজাত জুতার মতো বিলাসবহুল পণ্যের দাম ও চাহিদা দুটোই কমেছে।

চাহিদা ও দাম কমার এই প্রবণতা বাংলাদেশের কাঁচা চামড়ার বাজারে প্রভাব ফেলেছে। ফলে দেশের বাজারে চামড়ার দাম কমেছে।

মৌসুমি চামড়া ব্যবসায়ী হায়াত উল্লাহ জানান, ঈদের দিন তিনি ২৫ পিস গরুর চামড়া কিনেছেন। এ বছর ২৫ হাজার টাকার কাঁচা চামড়া কেনার লক্ষ্য আছে তার। তিনি প্রতি পিস গরুর চামড়া কিনছেন ৪০০ টাকা থেকে ৬০০ টাকায়।

হায়াত উল্লাহ বলেন, 'এ বছর ট্যানারি মালিকদের চাহিদা কম থাকায় কাঁচা চামড়ার দাম কম।'

এদিকে এবার রাজধানীতে লবণযুক্ত গরুর চামড়ার দাম নির্ধারণ করা হয়েছে প্রতি বর্গফুট ৫৫ থেকে ৬০ টাকা এবং ঢাকার বাইরে ৫০ থেকে ৫৫ টাকা।

গত বছর ঢাকায় প্রতি বর্গফুট দাম ছিল ৫০ থেকে ৫৫ টাকা এবং ঢাকার বাইরে ৪৭ থেকে ৫২ টাকা।

নতুন দর অনুযায়ী, রাজধানীতে প্রতি পিস গরুর চামড়ার দাম সর্বনিম্ন ১ হাজার ২০০ টাকা এবং ঢাকার বাইরে ১ হাজার টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।

এছাড়া সারা দেশে প্রতি বর্গফুট খাসির চামড়ার দাম ২০ থেকে ২৫ টাকা এবং বকরির চামড়ার দাম ১৮ থেকে ২০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।

এবারের ঈদুল আজহায় সারাদেশে প্রায় ১ কোটি ৭০ লাখ পশু কোরবানি হবে বলে আশা করা হচ্ছে। এর মধ্যে ৫৫ লাখ গরু-মহিষ এবং বাকিগুলো খাসি, বকরি, ভেড়াসহ অন্যান্য পশু। গত বছর ঈদুল আজহায় ১ কোটি ১০ লাখ পশু কোরবানি হয়েছিল।

বাংলাদেশ হাইড অ্যান্ড স্কিন মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আফতাব খান বলেন, কাঁচা চামড়া কেনা-বেচা পুরোদমে শুরু হয়নি। সাধারণত ঈদুল আজহার পরের দিন দেশের বিভিন্ন বড় হাট থেকে কাঁচা চামড়া কিনে থাকেন ব্যবসায়ীরা।

ব্যবসায়ীরা মূলত মৌসুমি ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে লবণযুক্ত কাঁচা চামড়া কিনে আনেন।

আজ সোমবার আফতাব খান মুঠোফোনে দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আশা করা হচ্ছে এবারের ঈদে সারাদেশে এক কোটির বেশি কাঁচা চামড়া সংগ্রহ করা হবে।'

গত কয়েক বছরে তৃণমূল পর্যায়ের মৌসুমি ব্যবসায়ীরা অত্যন্ত কম দাম দিতে চাওয়ায় বিপুল পরিমাণ কাঁচা চামড়া নদীতে ফেলে দেওয়া হয়েছে বা মাটিতে পুঁতে ফেলা হয়েছে।

মৌসুমি ব্যবসায়ীরা কাঁচা চামড়া ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে টাকা না পাওয়ায় এবং ব্যবসায়ীরা ট্যানারদের কাছ থেকে তাদের বকেয়া না পাওয়ায় এমনটি হয়েছে।

উল্লেখ্য, বছরে সংগৃহীত কাঁচা চামড়ার প্রায় অর্ধেকই ঈদুল আজহা থেকে আসে। অর্থাৎ বাংলাদেশের বিলিয়ন ডলারের রপ্তানিমুখী চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য শিল্পের মূল কাঁচামাল এখান থেকে আসে।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শাহীন আহমেদ বলেন, এ বছর ৮০ কোটি টাকার কাঁচা চামড়া কেনা-বেচা হতে পারে।

ব্যাংকগুলো ২৮০ কোটি টাকা বিতরণ করলেও আগের বকেয়া পুনঃতফসিলের কারণে পুরো টাকা বাজারে বিনিয়োগ করা যাচ্ছে না। তাই এ সময়ে ৮০ কোটি টাকার কাঁচা চামড়া কেনাবেচা হতে পারে বলে আজ মুঠোফোনে দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন তিনি।

তিনি আরও বলেন, আন্তর্জাতিক ক্রেতাদের কাছে চাহিদা কম থাকায় ট্যানারিগুলোতে এখনো ৩০ শতাংশের বেশি টেনড চামড়া অবিক্রীত থেকে গেছে।

Comments

The Daily Star  | English

Thailand sees growing influx of patients from Bangladesh

Bangladeshi patients searching for better healthcare than that available at home are increasingly travelling to Thailand instead of India as the neighbouring country is limiting visa issuances for Bangladeshi nationals.

14h ago