বান্দরবানে ঈদেও কাটছে না পর্যটক খরা

বান্দরবান, ঈদুল আজহা, বান্দরবান, কেএনএফ, পর্যটন,
বান্দরবানের থানচি নৌকা ঘাট। ১৫ জুন ২০২৪। ছবি: মং সিং মারমা

একদিন পরেই পবিত্র ঈদুল আজহা। অথচ ঈদের ছুটিতেও বান্দারবানের পর্যটক খরা কাটছে না বলে দাবি করেছেন জেলার পর্যটন ব্যবসায়ীরা। তারা বলছেন, ঈদের ছুটিতে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে বান্দরবান ভ্রমণে আসেন দেশের বিভিন্ন জেলার পর্যটক। কিন্তু এবারের ঈদে আশানুরূপ পর্যটকের দেখা মিলছে না।

সাধারণত ঈদের ছুটিতে বান্দরবানের বিভিন্ন পর্যটেন কেন্দ্রে পর্যটকদের উপচে পড়া ভিড় থাকলেও এ বছর জেলার বিভিন্ন পর্যটন কেন্দ্র, হোটেল, মোটেল, রিসোর্টগুলো প্রায় ফাঁকা বলে জানিয়েছেন তারা।

ব্যবসায়ীরা জানান, পাহাড়ে নানা সমস্যার কারণে ঈদের সময়েও হোটেল-মোটেল প্রায় শূন্য। গত বছর কিছুটা বুকিং থাকলেও এবার ঈদে তেমন অগ্রিম বুকিং নেই। অনেক হোটেল মালিক কর্মচারীদের ছাঁটাই করতে বাধ্য হচ্ছেন। এছাড়া বিপাকে পড়েছেন টুরিস্ট গাইড, চাঁদের গাড়ি চালক, আবাসিক হোটেলের কর্মচারীসহ অনেকেই। কারণ দীর্ঘদিন ধরে তাদের আয় বন্ধ আছে।

পাহাড়ে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড নির্মূল করে দ্রুত জেলার সব পর্যটন কেন্দ্র ভ্রমণের উপযোগী করে দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন তারা।

তিন চাকার মাহিন্দ্রাচালক (সিএনজি) মং সা চিং মার্মা বলেন, 'পর্যটকরা বান্দরবানে নীলাচল, মেঘলা, নীলগিরি, চিম্বুক পাহাড়,  প্রান্তিক লেক ও শৈলপ্রপাত পর্যটন কেন্দ্রে ভ্রমণে আসতে পারেন। এসব এলাকায় কোনো সমস্যা নেই, নির্বিঘ্নে ভ্রমণ করতে পারবেন। তারপরও এসব পর্যটন কেন্দ্রে গত বছর থেকে পর্যটকের সংখ্যা কমে গেছে।'

পূরবী মার্কেটের দোকানি হ্লায়ই রাখাইন বলেন, 'এবার ঈদে পর্যটকরা আসবেন কি না জানি না। পর্যটক এলে বেচা-বিক্রি ভালো হয়, তাই ব্যবসাও ভালো হয়।'

হোটেল গার্ডেন সিটির মালিক জাফর আলম বলেন, 'পাহাড়ের বিভিন্ন সমস্যার কারণে হোটেলে তেমন বুকিং হচ্ছে না। এভাবে চললে ব্যবসা ছেড়ে দেওয়া ছাড়া আর কোনো উপায় দেখছি না। তারপরও এ ঈদুল আজহার বন্ধে পর্যটকদের জন্য হোটেলের প্রতিটা রুম সাজিয়ে গুছিয়ে রেখেছি।'

গ্রীন পিক রিসোর্টের ব্যবস্থাপক শাহ নেওয়াজ নাহিদ বলেন, 'কেএনএফের কর্মকাণ্ডের প্রভাব পুরো জেলায় পড়েছে। তাই এ ঈদে আশানুরূপ পর্যটকের সাড়া পাওয়া যায়নি। পর্যটকরা তো জানে না যেসব এলাকায় যৌথ অভিযান চলছে সেগুলো বান্দরবান সদর থেকে ৬০ থেকে ১০০ কিলোমিটার দূরে। বান্দরবান সদরের আশেপাশের পর্যটন কেন্দ্র ভ্রমণে কোনো সমস্যা নেই। তবুও পর্যটক আসছে না।'

চাঁদের গাড়িচালক অঞ্জু তংচংঙ্গ্যা বলেন, 'কেএনএফের ব্যাংক ডাকাতির পর থেকে পর্যটকের আসা কমতে শুরু করে। তবে যেসব পর্যটন কেন্দ্র ভ্রমণে সমস্যা নেই, সেসব স্পষ্টে পর্যটকদের নিয়ে যেতে শত শত চাঁদের গাড়ি প্রস্তুত রাখা হয়েছে।'

বান্দরবান টুরিস্ট পুলিশের পুলিশ সুপার মঞ্জিল মোরশেদ বলেন, 'বান্দরবানের বর্তমান পরিস্থিতির কারণে দুর্গম এলাকার পর্যটনকেন্দ্রগুলোতে পর্যটক যেতে না পারলেও, জেলা সদরের আশপাশের মেঘলা, নীলাচল, শৈলপ্রপাত, প্রান্তিক লেক, চিম্বুক ও নীলগিরি ভ্রমণে যেতে কোনো বাধা নেই।'

'বান্দরবান টুরিস্ট পুলিশ পর্যটকদের সব ধরনের নিরাপত্তা দিতে প্রস্তুত। এছাড়া বিভিন্ন হোটেল, কটেজ ও রিসোর্টগুলোতে পর্যটকদের যেন কোনো অসুবিধা না হয়, সেজন্য জেলা টুরিস্ট পুলিশ কাজ করে যাচ্ছে,' বলেন তিনি।

বান্দরবান জেলা প্রশাসক শাহ্ মোজাহিদ উদ্দিন বলেন, 'পাহাড়ে যেসব এলাকায় যৌথ বাহিনীর অভিযান চলমান আছে, সেসব এলাকা এড়িয়ে চলার আহ্বান জানাচ্ছি। তবে রুমা, থানচি ও রোয়াংছড়ি এ তিন উপজেলা ছাড়া অন্যান্য পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে পর্যটকদের নিরাপত্তা স্বার্থে প্রত্যেকটি স্থানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা সতর্ক অবস্থানে আছেন।'

দীর্ঘদিন ধরে পাহাড়ে সশস্ত্র গোষ্ঠী কুকি চীন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ) সদস্যদের তৎপরতা আছে। এছাড়া গত ২ ও ৩ এপ্রিল রুমা ও থানচির সোনালী ও কৃষি ব্যাংকে ডাকাতি, ব্যাংক ব্যবস্থাপককে অপহরণ, টাকা লুট, পুলিশ ও আনসারের ১৪টি অস্ত্র ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। এর প্রেক্ষিতে কেএনএফ সদস্যের তৎপরতা দমন ও ছিনতাই হওয়া অস্ত্র উদ্ধারে পাহাড়ে যৌথ বাহিনীর অভিযান শুরু হয়, যা এখনো অব্যাহত আছে।

Comments

The Daily Star  | English

Dhaka airport receives 2nd bomb threat

Operations at HSIA continue amid heightened security

56m ago